২৬ জুলাই ২০১৯, শুক্রবার, ৪:৩৫

বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেশিনারিজ ঘোষণায় মদ আমদানি

চট্টগ্রাম বন্দরে আটককৃত ৬৬৯ বক্সের কায়িক পরীক্ষা করা যায়নি

সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির ঘোষণা দিয়ে চীন থেকে মদ আমদানির ঘটনায় এখনো আটককৃত বক্সগুলোর কায়িক পরীক্ষা করা যায়নি। চট্টগ্রাম শুল্ক কর্তৃপক্ষ আটককৃত তিনটি লাইটার জাহাজে বোঝাইকৃত এবং বড় জাহাজ থেকে এখনো অখালাসকৃত সব পণ্য একটি ইয়ার্ডে সংরক্ষণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আলোচিত চালানের বাক্সগুলো ইয়ার্ডে নামানোর তথ্য নেই শুল্ক কর্মকর্তাদের কাছে।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহারের কথা বলে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (প্রা:) লি. পানামা পতাকাবাহী এমভি কিউ জি শান জাহাজযোগে ৬৬৯ প্যাকেজ মেশিনারিজ ও অন্যান্য মালামাল আমদানি করা হয়। এসব বক্সে এক হাজার ৪০৬ টন পণ্য আটটি চালানে দেশে নিয়ে আসে।

কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, ক্যাপিটাল মেশিন আমদানিতে শুল্ক দিতে হয় মাত্র ১ শতাংশ। মদ আমদানির ওপর ৬০৫.৮ শতাংশ এবং বিয়ার আমদানিতে ৪৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক-কর দিতে হয়। সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের অগ্রাধিকার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এসব পণ্য চূড়ান্ত শুল্কায়ন ছাড়াই সাময়িকভাবে লাইটারেজ জাহাজে খালাসের অনুমতিও নেয় তারা কাস্টম থেকে। লাইটারেজ জাহাজে সব পণ্য খালাসের পর শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার গ্যারান্টিপত্রও দেয় তারা। বিশেষ এ সুবিধা নিয়েই পানামার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি কিউ জি শান থেকে তিনটি লাইটারেজ জাহাজে এসব চালান খালাস করা হচ্ছিল।

এরই মধ্যে দু’টি লাইটারেজ জাহাজে প্রায় ৬০০ বক্স পণ্য খালাস করে নেয়। অবশিষ্ট পণ্য আরেকটি লাইটারেজ জাহাজে খালাস করা হচ্ছিল। পানামার পতাকাবাহী বড় জাহাজ থেকে এই জাহাজেও ৩৮টি বাক্স নামানো হয়। কিন্তু খালাসের একপর্যায়ে হঠাৎ করে কাঠের তৈরি একটি বক্স ভেঙে গেলে সেখানে মেশিনারিজের বদলে মদের বোতল দৃশ্যমান হয়। এর পরই নড়ে চড়ে বসে শুল্ক কর্তৃপক্ষ। বোঝাইকৃত লাইটার জাহাজগুলো আটক করা হয় এবং মাদার ভেসেল থেকে ওই চালানের পণ্য খালাস স্থগিত রাখা হয়।

আলোচিত চালানের পণ্য খালাসে নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান বিপাসা এন্টারপ্রাইজ ও লাইটারেজ জাহাজ তি নটির মালিক একই ব্যক্তি বলে জানা গেছে। উভয় প্রতিষ্ঠানের মালিক শফিকুল আলম জুয়েল বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলেও সূত্র জানায়। শুল্ক কর্মকর্তারা আলোচিত চালানটিতে মিথ্যা ঘোষণার ক্ষেত্রে তার যোগসূত্র আছে বলে সন্দেহ করছেন।

এ দিকে আটক এ চালানে কী পরিপাণ মদ রয়েছে এবং কী পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে, তা এখনো নিরূপণ করা যায়নি। আটক পণ্য চালানের সব বাক্স বন্দর ইয়ার্ডে নামানোর পর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে এ বিষয়ে তা নিরূপণ করতে হবে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার সাধন কুমার কুণ্ডু নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা পণ্য অগ্রাধিকার সুবিধা পায়। বড় জাহাজে প্রতিদিনকার খরচ বেশি হওয়ায় আমরা সর্বোচ্চ ২০ দিনের সময়সীমা দিয়ে এ ধরনের পণ্যকে লাইটারেজ জাহাজে রাখার সাময়িক অনুমতি দিই। শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষ করে পরবর্তী সময়ে দেয়া হয় তাদের চূড়ান্ত ছাড়পত্র। বিশেষ সুবিধা পাওয়ার ২০ দিন লাইটারেজ জাহাজে থাকা পণ্য কাস্টমসের তত্ত্বাবধানে থাকে। তিনি জানান, এসব জাহাজের সব পণ্য জেটিতে খালাস করতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে আমরা চিঠি দিয়েছি।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়েছে বলে শুনেছি। চিঠি হাতে পাওয়ার পর এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। আটককৃত জাহাজগুলো বর্তমানে কাফকো জেটিতে রয়েছে বলেও তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। 

প্রসঙ্গত, এমভি কিউ জি শান নামের জাহাজটি গত ১৮ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে নোঙর করে। এ জাহাজে ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের মোট ১১ হাজার ৫১১ টন পণ্য রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রেরর জন্য ৬৬৯টি বাক্সে এক হাজার ৪০৬ টন ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির ঘোষণা ছিল।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/428153