২৬ জুলাই ২০১৯, শুক্রবার, ৪:২৬

নিজেকে নির্দোষ দাবি আল্লামা সাঈদীর

রাজশাহী অফিস : রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যা মামলায় প্রখ্যাত আলেম ও মুফাসসিরিনে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ ১০৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। মামলার মোট আসামী ছিলো ১১০ জন, ৬ জনের মৃত্যু হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়নি। এসময় আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন আল্লামা সাঈদী।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক এনায়েত কবীর সরকারের আদালতে এ চার্জ গঠন করা হয়। রাবি শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন হত্যা মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ ১০৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। এসময় আদালতে মাওলানা সাঈদীকে হাজির করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন একই আদালতের এপিপি শিরাজী শওকত সালেহীন। আসামী পক্ষে এডভোকেট মিজানুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আইনজীবী প্যানেল মামলা পরিচালনা করেন। এই প্যানেলের আইনজীবী আবু মোহাম্মদ সেলিম বলেন, এ মামলায় ৩৫ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। তার সঙ্গে বলা আছে, আরো ১৫-২০ জন। সে অনুযায়ী বাদীর কথা মতো ৫৫ জন আসামী হয়। কিন্তু মামলায় ১১০ জনকে আসামী করা হয়েছে। এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ৬০ জন এবং অনুপস্থিত ছিলেন ৪৪ জন।

এপিপি শিরাজী শওকত সালেহীন আদালতে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল দখল নিয়ে ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ফারুক নামের একজন ছাত্র নিহত হয়। এতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও সম্পৃক্ত। কারণ ঘটনার দুই দিন আগে রাজশাহীতে তিনি সফর করেছিলেন, তাই তিনি হুকুমের আসামী। এ বিষয়ে আদালতের এজলাসে দাঁড়িয়ে আল্লামা সাঈদী বলেন, ওই ঘটনার সাথে আমি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। আদালতে তাকেসহ আসামীদের বিরুদ্ধে ১০৩ এবং ১০৯ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়। এরফলে এখন থেকে এই মামলার বিচারকার্য চলবে। উল্লেখ্য, ফারুক নিহত হওয়ার ঘটনায় পরদিন এনিয়ে নগরীর মতিহার থানায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ৩৫ শিবির নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেক শিবির নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়। পরে ওই মামলার হুকুমের আসামী করা হয় জামায়াতের শীর্ষ নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ বেশ কয়েকজনকে। ২০১২ সালের ৩০ জুলাই নগরীর রাজপাড়া থানার তৎকালিন ওসি জিল্লুর রহমান মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে ফারুক হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘদিনেও মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি।

এদিকে, বেলা সোয়া ১১টায় প্রিজন ভ্যানে করে বিপুল প্রহরায় আল্লামা সাঈদীকে রাজশাহীর জেলা জজ আদালতে হাজির করা হয়। এসময় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও তাকে দেখতে শত শত উৎসুক জনতা আদালতে যাওয়ার সড়কে ভিড় করেন। আল্লামা সাঈদী বিচারকার্য শুরুর পূর্ব মুহূর্তে আইনজীবী ও স্বজনদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনা করেন। মাওলানা সাঈদীকে আদালতে তোলাকে কেন্দ্র করে বুধবার থেকেই রাজশাহীর আদালত চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার পুরো আদালত চত্বরকেই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিপুল সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের (সিআরটি) সদস্য এবং র‌্যাব সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। আদালত চত্বরের সবগুলো প্রবেশমুখে তল্লাশি ছাড়া কাউকেই ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এর আগে মাওলানা সাঈদীকে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। বুধবার সকাল থেকে আদালত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হলে বিষয়টি প্রকাশ পায়।

https://www.dailysangram.com/post/384123