২৩ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ১:০২

শেয়ারবাজারে ‘রক্তক্ষরণ’ অব্যাহত: বাজার মূলধন ২ দিনে কমল ১০ হাজার কোটি টাকা

২ বছর ৮ মাস পর ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে ডিএসইর সূচক * দরপতনের শঙ্কায় শেয়ার বিক্রি করছেন বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারবাজারে ‘রক্তক্ষরণ’ অব্যাহত। গত দু’দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক কমেছে ১৬৪ পয়েন্ট। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকা।

আরও দরপতন হবে- এমন শঙ্কায় শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি। ফলে পতনের হার ক্রমেই বাড়ছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ‘নীরব দর্শকের ভূমিকা’ পালন করছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তাদের অভিমত- বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের ১৩ লাখ সক্রিয় বিনিয়োগকারীর জন্য আপাতত কোনো সুখবর নেই। আস্থা সংকটের কারণে মূলত বাজারে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, শেয়ারবাজারে মূল সমস্যা হল বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট। এ সংকট না কাটলে যত প্রণোদনাই দেয়া হোক, বাজার ইতিবাচক হবে না। তিনি বলেন, সংকট কাটাতে বাজারে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। গত ২ দিনে তা কমে ৩ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এ সময়ে ডিএসইর মূল্যসূচক ১৬৪ পয়েন্ট কমেছে। শতকরা হিসাবে যা ৩ দশমিক ২০ শতাংশ। ডিএসইর পতনের পেছনে প্রাথমিকভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ পাওয়া যায়নি। তবে এর প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখতে রোববার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি।

সূত্র বলছে, বিএসইসি এবং বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব চলছে। এ দ্বন্দ্বের কারণ হল, কপারটেক নামে একটি দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তি। বিএসইসি অনুমোদন দিলেও আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হওয়ায় কোম্পানিটি তালিকাভুক্তিতে রাজি নয় ডিএসই। কিন্তু ডিএসইর পক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়াও কঠিন। এছাড়াও বর্তমানে মুদ্রাবাজারের অবস্থা ভালো নয়।

ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত সংকটে। এসব প্রতিষ্ঠান ভয়াবহ তারল্য সংকটে ভুগছে। শেয়ারবাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। এছাড়া গ্রামীণফোনসহ আরও দু-একটি বড় কোম্পানির কাছ থেকে প্রত্যাশিত লভ্যাংশ পাননি বিনিয়োগকারীরা। বিষয়টি বাজারে প্রভাব ফেলছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অবস্থা আরও খারাপ। সবকিছু মিলে বাজারের তেমন কোনো সুখবর কোনো মহল থেকেই আসছে না। একক দিন হিসাবে সোমবার ডিএসইতে ৩৫৩টি কোম্পানির ১৬ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মূল্য ৪৬৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ৬৭ দশমিক ৩১ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৯৬৬ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ২৩ দশমিক ২৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৭৬ দশমিক ১৫ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ১৮ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৩৯ দশমিক ১৫ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এরমধ্যে দাম বেড়েছে ৬০টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ২৭৭টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।

শীর্ষ দশ কোম্পানি : সোমবার ডিএসইতে যেসব কোম্পানির শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছে সেগুলো হল- ফরচুন সুজ, স্কয়ার ফার্মা, ইউনাইটেড পাওয়ার, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, সিপার্ল রিসোর্ট, সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ, মুন্নু সিরামিকস, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গ্রামীণফোন এবং ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো।

ডিএসইতে সোমবার যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বেশি বেড়েছে সেগুলো হল- আলহাজ টেক্সটাইল, এসইএমএল এফবিএসএল গ্রোথ ফান্ড, এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ ফান্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, আইসিবি অগ্রণী ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, স্ট্যার্ন্ডাড ইন্স্যুরেন্স, ইন্ট্র্যাকো রিফুয়েলিং, মুন্নু সিরামিকস এবং কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স। অন্যদিকে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বেশি কমেছে, সেগুলো হল- এমারেল্ড অয়েল, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, সিএনএ টেক্সটাইল, জুট স্পিনার্স, ইমাম বাটন, সাভার রিফ্যাক্টরিজ, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ইয়াকিন পলিমার এবং বিডি ওয়েল্ডিং।

https://www.jugantor.com/todays-paper/city/202187/