১৮ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১২:৩০

স্যানিটারি ল্যান্ডফিল উন্নয়নে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি

টেন্ডার না হওয়ায় পূর্ত কাজে ব্যয় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি ; দক্ষিণে দৈনিক সাড়ে ৩ হাজার টন বর্জ্য হচ্ছে

শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি না হওয়ায় প্রতিদিন উৎপাদিত বর্জ্যরে ৫০ শতাংশই থেকে যাচ্ছে খোলা উন্মুক্ত স্থানে ও জলাশয়ে। প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হচ্ছে তার জন্য মাতুয়াইলের স্যানিটারি ল্যান্ডফিল যথেষ্ট নয়। ফলে সেটাকে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হলেও আড়াই বছরের মাথায় প্রকল্পের ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ বা ৬ শ’ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। অনেক পূর্ত কাজের টেন্ডার না হওয়ায় এ ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে ২০ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, সময়মতো ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্য দিকে, ডিপিপিতে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতির কোনো তথ্য নেই।

সিটি করপোরেশনের তথ্যে জানা গেছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নগরীর সবচেয়ে দৃশ্যমান পরিবেশগত সমস্যা। বাংলাদেশের ৩০ জনগোষ্ঠী নগরীতে বসবাস করে। বিবিএসের তথ্যানুযায়ী যা বৃদ্ধি পেয়ে আগামী ২০২১ সালে ৩৩ শতাংশে উন্নীত হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্জ্যরে উৎপাদনও সরাসরি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। নগরীতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধির কারণে বর্জ্যরে উৎপাদন হারও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নগরীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উল্লেখযোগ্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। বর্জ্যরে পুনঃব্যবহার, বর্জ্য হ্রাস ও পুনঃচক্রায়নের কোনো শিল্প গড়ে ওঠেনি। আধুনিক মানসম্পন্ন স্থাপনার অভাব, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অপর্যাপ্ততা এবং স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে শহরবাসীর সচেতনতার অভাবে সিটি করপোরেশনগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সফলতা পাচ্ছে না। ঢাকা মহানগরীতে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ক্লিন ঢাকা মাস্টার প্ল্যান ২০০৫-১৫ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু তার কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবকাঠোমো উন্নয়নের জন্য মাতুয়াইলের স্যানিটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণসহ ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পটির ব্যয় ৫৯১ কোটি ৯৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের নিজস্ব ৭২৪ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প ২০১৭ সালে ২৮ মার্চ একনেক থেকে অনুমোদন দেয়া হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অর্থাৎ চার বছরে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা। এখন সরকারি নিয়মে ভূমির মূল্য তিনগুণ বৃদ্ধির কারণে এই ব্যয় বেড়েছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় এখন এক হাজার ৩১৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকায় প্রস্তাব করা হয়েছে। সাথে সাথে প্রকল্পের মেয়াদ আরো ৬ মাস বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, মূল প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে জমির মূল্য দামের দেড়গুণ হারে প্রাক্কলন করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এখন আরো দেড়গুণ মূল্য বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নতুন করে ফ্লাডলাইট সংযুক্ত করতে হবে। মাতুয়াইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন সংগৃহীত সব বর্জ্য রাতের বেলায় সেখানে স্তূপ করা হয়। বর্তমানে সেখানে ফ্লাডলাইট না থাকায় এই কাজ বিঘিœত হচ্ছে। অন্য দিকে, ঢাকা-ডেমরা রোডের যে স্থান থেকে মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল এলাকায় প্রবেশ করা হয় সেখানকার রাস্তাটি মেরামত করা হয়নি। আনুমানিক দেড় কিলোমিটার প্রস্থে ১০ মিটার রাস্তাটি দীর্ঘ ৮ থেকে ১০ বছর মেরামত হয়নি। এতে করে যান চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। এ ছাড়া ওই এলাকার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ রাস্তা ভারী পরিবহনে ৮ থেকে ১০ বছর চলাচলের ফলে বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই প্রকল্পের জন্য নতুন রাস্তা তৈরি ও বিদ্যমান রাস্তা মেরামত করতে হবে। এই জন্য ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যমান এক শ’ একর মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও ৮১.০৯০৯ একর জমিতে কোনো জলাধার নেই। জলাধার রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সংশোধিত ডিপিপিতে এই জলাধার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে।

জাইকার গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে, দৈনিক মাথাপিছু বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে দশমিক ৫৬ শতাংশ। পরিবহনের স্বল্পতার কারণে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আরো দক্ষ করা যাচ্ছে না। শহরের প্রায় ৫০ শতাংশ বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় না, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতি করছে। পরিচ্ছন্ন ঢাকা মাস্টার প্ল্যান ২০০৫ অনুযায়ী প্রতিদিন বর্জ্য উৎপন্ন হয় ২০০৪ সালে প্রায় ৩ হাজার ২ শ’ টন, ২০১০ সালে এটা দাঁড়ায় ৩ হাজার ৯০৯ টনে এবং ২০১৩ সালে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৬২৪ টনে। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে কামরাঙ্গীরচরে সবচেয়ে বেশি বর্জ্য সৃষ্টি হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো ও আইএমইডি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পগুলো তৈরি করার সময় যথেষ্ট পরিমাণে সমীক্ষা করা হয় না। একনেকে উপস্থাপন ও পাস করানোর জন্য একটি প্রাক্কলন ব্যয় দেখিয়ে প্রকল্প পাস করিয়ে নেয়া হয়। যার ফলে অনুমোদনের বছরখানেক পরই নতুন নতুন অঙ্গ যুক্ত করে প্রকল্প সংশোধন করার তাড়া দেখা দেয়। তখন প্রকল্পের ব্যয় ও বাস্তবায়নকাল বাড়ানো হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/426163