১৮ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১২:২৪

বাংলাদেশে প্রতি ৬ জনে অপুষ্টিতে ভুগছে একজন

বাংলাদেশে প্রতি ছয় জনের মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছেন। জোগাড় করতে পারছেন না পর্যাপ্ত খাবার। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি যৌথভাবে তৈরি করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা, কৃষি উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল, জাতিসংঘের শিশু তহবিল, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও বিশ্ব খাদ্য সংস্থা।

বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিয়ে তৈরি করা ‘দ্য স্টেট অব ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত ১৫ই জুলাই প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়েছে, গত বছর বিশ্বজুড়ে পর্যাপ্ত খাবার পায়নি প্রায় ৮২ কোটি মানুষ। বিশ্বজুড়েই বাড়ছে অপুষ্টিতে ও ক্ষুধায় ভোগা মানুষের সংখ্যা। শতকরা হারে এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে আফ্রিকান অঞ্চলগুলোতে। সেখানকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশই অপুষ্টিতে ভুগছে।
সংখ্যার হিসাবে তা ২৫ কোটি ৬১ লাখ মানুষ। এদিকে, শতকরা হিসাবে আফ্রিকায় অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা বেশি থাকলেও, সংখ্যায় এশিয়ায় বেশি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। অঞ্চলটিতে প্রায় ৫১ কোটি ৩৯ লাখ মানুষ পুষ্টিহীনতার শিকার। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় গত পাঁচ বছরে ক্ষুধা ও অপুষ্টি নিবারণে উন্নতি করলেও এখনো অঞ্চলটির ১৫ শতাংশ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। এ ছাড়া, পুরো বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ পাচ্ছে না নিরাপদ, পুষ্টিকর ও পর্যাপ্ত খাবার।

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, পুরো বিশ্বজুড়েই শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে বাড়ছে স্থূলতার হার। ২০১৮ সালে আনুমানিক ৪ কোটি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুকে অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১৬ সালে ৫ থেকে নয় বছর বয়সী ১৩ কোটি ১০ লাখ, ২০ কোটি ৭০ লাখ কিশোর-কিশোরী ও ২০০ কোটি প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ওজন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি ছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যের যোগান থাকা মানে এই নয় যে, সকলেই পর্যাপ্ত খাদ্য পাচ্ছে। একইভাবে, খাদ্যের উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়নসহ নানাবিধ বহুমাত্রিক ঝুঁকিও বেড়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত দশকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক অপুষ্টি হার ক্রমাগত হারে হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এরপর থেকে গত বছর পর্যন্ত তা ১১ শতাংশ বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে কৃষি উৎপাদন প্রভাবিত হচ্ছে। কমে যাচ্ছে কৃষকদের সংখ্যা। এসবকিছু মিলে খাদ্যের উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। পাশাপাশি পরিবর্তিত হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির ধরনও।

দক্ষিণ এশিয়ায় গুরুতর খাদ্য ঝুঁকির প্রাদুর্ভাবের হার কমেছে। ২০১৪ সালে এই হার ছিল ১৩.৭ শতাংশ, ২০১৬-এ তা কমে ১০.৬ শতাংশে নেমে এসেছিল। তবে গত দুই বছরে তা ফের অল্প করে বাড়ছে। অঞ্চলটিতে গত বছর গুরুতর খাদ্য ঝুঁকিতে ছিল ২৭ কোটি ১৭ লাখ মানুষ।

বাংলাদেশের উন্নতি ও অবনতি
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, গত এক দশকে বাংলাদেশে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১০ লাখ। ২০০৪ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ। যা ২০১৮ সালে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২ কোটি ৪০ লাখে। অপুষ্টিতে ভুগছেন প্রতি ছয় জনের একজন।

তবে গুরুতর খাদ্য ঝুঁকি কমাতে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে গুরুতর খাদ্য ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৭৮ লাখ। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে সে সংখ্যা কমে ১ কোটি ৬৮ লাখে নেমে আসে। এমনকি কমেছে গুরুতর বা মধ্যম খাদ্য ঝুঁকিতে থাকা মানুষের হারও। ২০১৪-১৬ থেকে ২০১৬-১৮ সময়ের মধ্যে এ সংখ্যা কমেছে প্রায় দুই লাখ। ৫ কোটি ২ লাখ থেকে নেমে এসেছে ৫ কোটি ৩০ হাজারে।

এদিকে, বেড়েছে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে স্থূলতা ও রক্ত স্বল্পতায় আক্রান্ত নারীদের হার বেড়েছে। বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ২০১৬ সালে ৩৬ লাখের স্থূলতা ছিল। যেখানে ২০১২ সালে এই সংখ্যা ছিল, ২৫ লাখ। অন্যদিকে, ২০১৬ সালে রক্ত স্বল্পতায় আক্রান্ত নারীদের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮২ লাখ। যেখানে ২০১২ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৭৪ লাখ।

পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে জোর দেয়ার আহ্বান
প্রতিবেদনটিতে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এজন্য ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতিমালা রাখার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে মন্দা অর্থনৈতিক চক্রের সময়ে সকল প্রয়োজনীয় সেবা, যেমন স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার খরচ না কমিয়ে খাদ্যের নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত করার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি বলেছে, সত্যিকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার, সাহসী উদ্যোগ ও সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে ক্ষুধার হার শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=181772