ছবি: যুগান্তর
১৭ জুলাই ২০১৯, বুধবার, ১২:৫৫

বন্যার আরও অবনতি ১০ জনের লাশ উদ্ধার

দুর্ভোগ বাড়ছে, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি * শুকনো খাবার, ওষুধ ও পানীয় জলের সংকট * হাইজিন কিটস্ বিতরণ করছে রেড ক্রিসেন্ট * বন্যার অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তন-বিশেষজ্ঞরা

দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে রেকর্ড বৃষ্টি এবং ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভারি বৃষ্টির কারণে আগামী এক সপ্তাহে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির কোনো আশা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মায় পানি বাড়তে পারে।

২১ জুলাই পর্যন্ত বন্যার অবনতি ঘটতে থাকতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে কুড়িগ্রামে ছয়জনসহ সারা দেশে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কুড়িগ্রামের উলিপুরে চার শিশুসহ পাঁচজন ও নাগেশ্বরীতে একজন, নেত্রকোনার কলমাকান্দায় এক শিশু, রংপুরের কাউনিয়ায় একজন, শেরপুরে শিশু ও বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করা হয়।

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দি সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। শুকনো খাবার ও পানীয় জলের অভাব দেখা দেয়ায় মানুষ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি আগামী ১৮ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে এ দুই নদীর অববাহিকায় অবস্থিত কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলে আগামী দুই দিন বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এছাড়া এলাকার নিম্নাঞ্চল স্বল্পমধ্যমেয়াদি (৭ দিন বা তার বেশি) বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

পদ্মা নদীর অববাহিকায় আরিচা, ভাগ্যকূল ও গোয়ালন্দে নদীর পানি সতর্কসীমায় পৌঁছতে পারে। তবে ঢাকার চারপাশের নদীসমূহের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা নেই। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এ তথ্য জানায়।

বন্যা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আবার বন্যাজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। বন্যায় সৃষ্ট নানা রোগে ২৪ ঘণ্টায় ৮১৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। সাতদিনে ২১২৪ জন আক্রান্ত হয়েছে।

সোমবার এক আদেশে বন্যার্তদের জন্য বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খুলতে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আশ্রয়কেন্দ্রে একটি করে সেল স্থাপন করে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সার্বক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকতেও বলা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, জামালপুর, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজারে বন্যার অবনতি হয়েছে।

এছাড়া আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে বন্যা বিস্তৃত হতে পারে। শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং রাজশাহীর কিছু এলাকা বন্যায় আক্রান্ত হতে পারে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে চলতি সপ্তাহের শেষনাগাদ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। তবে এসব স্থানে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (এফএফডব্লিউসি) নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বন্যার মূল কারণ উজানের বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের পানি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে আগামী ২০-২২ জুলাই থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করবে। তবে এটি ১৯৮৮ বা ১৯৯৮ সালের বন্যার মতো হওয়ার আশঙ্কা নেই।

এফএফডব্লিউসির বুলেটিনে বলা হয়, সুরমা-কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। পুরাতন সুরমা দিরাই পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে আছে।

যমুনার পানি পাঁচ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া দেশের প্রধান নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এ মুহূর্তে ১৩টি নদী ২৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এগুলো হল- সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, পুরাতন সুরমা, সোমেশ্বরী, কংস, ধরলা, ঘাগট, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও ধলেশ্বরী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বন্যার অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। কারণ আবহাওয়া চরম বৈরী আচরণ করছে। কখনও তাপমাত্রা রেকর্ড উত্তাপ ছড়ায়। আবার বন্যা বা খরাও তেমনি পর্যায়ে পৌঁছায়। তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা ঘন ঘন হচ্ছে।

বন্যার্তদের মাঝে শুকনা খাবার ও হাইজিন কিটস্ বিতরণ করছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। সোসাইটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে অপেক্ষাকৃত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় রেড ক্রিসেন্ট জেলা ইউনিটের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে শুকনা ও রান্না করা খাবার, হাইজিন কিটস্, নিরাপদ পানি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মগবাজারের জাতীয় সদর দফতর ও বন্যাকবলিত ৩২ জেলার জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া তাৎক্ষণিক রেসপন্সের সুবিধার্থে শুক্র ও শনিবার অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সারা দেশের বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধির পাঠানো খবর :

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : উলিপুরে বন্যার পানিতে নৌকা ডুবে চার শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত তিনজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের নতুন অনন্তপুরে বন্যার পানির তীব্র স্রোতে ২০-২৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশু নিয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতরে পাশের উঁচু স্থানে উঠলেও চার শিশু ও এক নারীর মৃত্যু হয়। রূপামণি (৮), হাসিবুর (৯), সুমন (৮), রুকুমনি (৭) ও রুনা বেগমের (৩২) উদ্ধার করা হয়।

নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) : নাগেশ্বরীতে বন্যার পানিতে ডুবে একজন মারা গেছে। এছাড়া বন্যার পানির তীব্র স্রোতে বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের তেলিয়ানীতে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। এতে ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এলাকার দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

সোমবার বিকালে কালীগঞ্জ ইউনিয়নের মাধাইখাল এলাকায় গোর্ধারেরপাড় গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আ ন ম মুসার ছেলে আক্তারুজ্জামান মামুন (৪০) হেঁটে সড়ক পার হওয়ার সময় বন্যার পানির তীব্র স্রোতে ভেসে যান। মঙ্গলবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তার লাশ উদ্ধার করে।

শেরপুর : ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। শেরপুর সদর উপজেলার চারটি, ঝিনাইগাতী উপজেলার পাঁচটি, নালিতাবাড়ী উপজেলার সাতটি এবং শ্রীবর্দী উপজেলার আটটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া ঝিনাইগাতীর সাড়িকালিনগর গ্রামের আছিয়া বেওয়ার (১০৫) লাশ মঙ্গলবার সকালে উদ্ধার করা হয়েছে।

নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শেরপুর সদর উপজেলায় ৪৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার পানিতে রোপা আমনের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছে।

জুড়ী (মৌলভীবাজার) : জুড়ীতে সোমবার বিকাল থেকে বৃষ্টি বন্ধ হলেও বন্যার পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পর্যায়ক্রমে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারাবাহিক বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জুড়ী নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জায়ফরনগর ইউনিয়নের বেলাগাঁও, শাহাপুর, নিশ্চিন্তপুর, সোনাপুর, মনোহরপুর, রাজাপুর, কানকৈরচক, নয়াগ্রাম, জাঙ্গিরাই, ইউসুফনগর, শিমুলতলা, দক্ষিণ ভবানীপুর ও হেকিমপুর গ্রাম এবং পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের আমতৈল, চক, তালতলা, বনগাঁও, খাগটেকা, পশ্চিম বাছিরপুর, কৃষ্ণনগর, শীলঘাট ও বৈষ্ণবপাড়ার রাস্তা ও বাড়ির আঙ্গিনা বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) : বড়লেখার হাকালুকি হাওর পাড়ের তিন ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওর তীরবর্তী তালিমপুর, বর্নি ও সুজানগর ইউনিয়নের ১৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়। উপজেলার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবন্দি হয়ে পড়ায় সেখানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) : সোমবার রাত থেকে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি বন্ধ হলেও দোয়ারা ও সুরমাসহ উপজেলার সব নদ-নদীর পানি ক্রমশ হ্রাস পেলেও জনদুর্ভোগ কমেনি। রাস্তায় পানি থাকায় উপজেলা সদরের সঙ্গে সীমান্তবর্তী বগুলা, লক্ষ্মীপুর ও সুরমা (আংশিক) ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। নরসিংহপুর, বাংলাবাজার ও দোয়ারা সদর (আংশিক) ইউনিয়নবাসীও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) : কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার একর ফসলি জমি ও বীজতলা তলিয়ে গেছে। শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বন্যাকবলিত মানুষ উঁচু স্থানে অস্থায়ীভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে অবস্থান করছেন। সেখানে কোনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কুশিয়ারা ডাইকের ভাঙন বন্ধ না হওয়ায় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) : প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ছনধরা, সিংহেশ্বর ও ফুলপুর ইউনিয়নের প্রায় সব এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।

রূপসী, বালিয়া, বওলা ও ভাইটকান্দি ইউনিয়নের আংশিক এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার আমন ধানের বীজতলা, আউশ ধান ও সবজি কৃষিজমি তলিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুকুরের পাড় ডুবে মাছ ভেসে গেছে।

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) : কলমাকান্দায় নিখোঁজের সাত ঘণ্টা পর বন্যার পানি থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুটির নাম উজ্জ্বল মিয়া (৫)। সে উপজেলার বিশরপাশা নানীয়া গ্রামের বাদল মিয়ার ছেলে। সোমবার রাতে বাড়ির পাশে লাশটি ভাসতে দেখা যায়। সোমবার দুপুরে শিশুটি নিখোঁজ হয়।

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) : বকশীগঞ্জে পাহাড়ি ঢলে ব্রহ্মপুত্র ও দশানী নদীর পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে নদীর তীরবর্তী উপজেলার বগারচর, সাধুরপাড়া, মেরুরচর ও নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি শুকনো খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে পশুসম্পদ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) : টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পানিতে চুনারুঘাট উপজেলায় ৮-১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কোনাউড়া, দ্বারাগাঁও ও সিরাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ওঠায় বিদ্যালয়গুলো সাময়িক বন্ধ রয়েছে।

এ নিয়ে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে আটটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার আউশ ফসল ও বীজতলা এখন পানির নিচে। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।

কাউনিয়া (রংপুর) : কাউনিয়ায় পানিতে ডুবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত সোনা মিয়ার (৫৫) মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার নিজপাড়া (কুলিপাড়া) এলাকায় সোমবার রাত ১০টার দিকে ঘর থেকে বের হলে সোনা মিয়া পানিতে পড়ে যান। এরপর তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) : যুগান্তর স্বজন সমাবেশের উদ্যোগে তাহিরপুরে বন্যাকবলিত আরও শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী ও শিশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয় (অতিথি ভবন) মিলনায়তনে বিভিন্ন গ্রামের বন্যাকবলিত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী ও শিশুখাদ্য বিতরণ করা হয়।

ত্রাণসামগ্রী ও শিশু খাদ্য তুলে দেন বিএমএসএফের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও দৈনিক যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার, দি বাংলাদেশ টুডে’র সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি সাংবাদিক হাবিব সরোয়ার আজাদ।

এ সময় সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব রৌজ আলী, প্রকল্প ইনচার্জ মো. আক্কাছ আলী, যুগান্তর স্বজন তাহিরপুর উপজেলা শাখার সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহেলসহ স্বজন সমাবেশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/200050/