১৬ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:৫২

ডেমুরেল সংগ্রহে পরিদর্শন ফি ৩ কোটি টাকা

উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে খরচের খাত বের করার জন্য নানা রকম সুযোগ খোঁজা হয়। আর এই ধরনের ব্যয়ের খাতের জন্য প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকৃত খরচের চেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক কালিয়াকৈর এবং ঢাকার মধ্যে রেল যোগাযোগের জন্য শাটল ট্রেন চালু করার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর এই রেল চালুর জন্য ডিজেল ইলেক্ট্রিক মাল্টিপল ইউনিট বা ডেমু সংগ্রহ করার জন্য পরিদর্শন ফিতে ব্যয় হবে ২ কোটি ৮১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এই ধরনের ব্যয় নিয়ে খোদ পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন। আজ মঙ্গলবার এই প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
রেল মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ৫৭ কিলোমিটার দূরে কালিকাকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক নির্মাণ করছে সরকার। এটার অবকাঠামো খাতে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার প্রকল্পও নেয়া হয়েছে। এটাই প্রথম হাইটেক পার্ক, যেটা চালুর মাধ্যমে আইসিটি খাতের বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদনের জন্য স্বনামধন্য বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানিকে সুযোগ দেয়া হবে। এই সব আইটি কোম্পানিগুলোতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। হাইটেক পার্ক থেকে দূরবর্তী স্থানে বসবাসরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ভালো পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাই রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক কালিয়াকৈর এবং ঢাকার মধ্যে রেলসংযোগের জন্য ৬ সেট ডেমু সংগ্রহের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

রেল মন্ত্রণালয় বলছে, প্রকল্পের মূল কাজ হলো, ছয় সেট ব্রডগেজ ডিজেল ইলেক্ট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) সংগ্রহ, ক্যাপিটাল স্পেয়ার্স পার্স ক্রয়, মেইনটেন্যান্স স্পেয়ার্স ও স্পেশাল টুলস এবং রেলের প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান। ডেমু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা ওয়ার্কশপ নির্মাণ করা একটি জটিল ও ব্যয়সাপেক্ষ বিষয়। তাই এটা এই প্রকল্পে রাখাটা সঠিক হবে না। তবে এডিবির অর্থায়নে ইতোমধ্যে ডেমু ওয়ার্কশপ নির্মাণসহ রেলওয়ের লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপ আধুনিকায়নের একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

এক পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই প্রকল্পে ২৭ শতাংশ সিডি-ভ্যাটসহ ছয় সেট ব্রডগেজ ডেমুর মূল্য ধরা হয়েছে ৩৯৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। প্রতিটি সেটের দর পড়ছে ৬৬ কোটি টাকা। সিডি-ভ্যাটসহ মূলধনী পার্সের দর ১৯ কোটি ৫ লাখ টাকা।

এ দিকে পরিদর্শন ফি ধরা হয়েছে ২ কোটি ৮১ রাখ ৩৫ হাজার টাকা, যা মূল বরাদ্দের ০.৮৫ শতাংশ। আর এই ডেমু আনতে এলসি খোলার জন্য ব্যয় হবে ৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর আগে ভেড়া উন্নয়ন প্রকল্পে এমন কিছু ব্যয়ে খাত নেয়া হয় যাতে প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেশি হয়ে যায়। বিদেশ থেকে ভেড়া কেনার জন্য চারটি টিম অস্ট্রেলিয়া যায়। ওই চারটি টিম যাওয়ার কারণে ভেড়াপ্রতি খরচ ৯৭ হাজার টাকা বেড়ে যায়। আর এই তথ্য বিএলআরআইয়ের মহাপরিচালকই জানান। এই ভেড়া প্রকল্পে কুকুর নিধনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ২০ লাখ টাকা। যেমন এই ডেমু রেল সংগ্রহ প্রকল্পে ধরা হয়েছে পরিদর্শন ফি ২ কোটি ৮১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেখানে বিদেশে প্রশিক্ষণ ও বিদেশ ভ্রমণ রাখা হয়েছে সেখানে পরিদর্শন ফির নামে রাষ্ট্রের এই বিরাট অর্থ ব্যয় করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের কর্মচারী এবং আশপাশের জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক ও যানজটমুক্ত রেল পরিসেবা পাবে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ওপর যানবাহনের বাড়তি চাপ হ্রাস পাবে। তবে প্রকল্পটির সঠিক বাস্তবায়নের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের উচিত সঠিকভাবে মনিটরিং করা।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/425660/