১৪ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ২:০৫

বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দুধ পান করা হয় বাংলাদেশে

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : বেঁচে থাকার প্রধান মৌলিক চাহিদা ‘খাদ্য’ খেতে বসলেই মনে প্রশ্ন জাগে কী খাচ্ছি- খাবারের নামে ভেজালের বিষ নয় তো? কি বাড়িতে, কি বাইরে, হোটেল-রেস্তোরাঁ, ক্যান্টিন কিংবা ক্লাব-মেসের নিজস্ব খাবার ব্যবস্থাপনা- সর্বত্রই অভিন্ন অরুচিকর পরিস্থিতি। জীবনযাত্রার সব স্থানে খাবারই হয়ে উঠেছে প্রধান আতঙ্ক। বিশেষ করে যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো খাবার নিয়ে ব্যাপক সংশয়ের সৃষ্টি হয়, তখন উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বেড়ে যায় বেশ কয়েকগুণ। সাম্প্রতিক সময়ে তরল দুধ নিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে তাতে সবচেয়ে অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য হয়ে উঠেছে এই দুধ। অথচ দুধকে সর্বাধিক নিরাপদ ও সুষম খাবার বিবেচনা করা হয় সারা বিশে^ই। বাংলাদেশীরা যে দুধ পান করেন, তা সারা বিশে^র সবচেয়ে অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ দুধ হিসেবেই প্রমাণিত হচ্ছে।

সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ ও খাদ্যে ভেজালরোধে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিপদটি প্রথম সর্বসম্মুখে ধরা পরে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই) এর কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেনো খাদ্যে ভেজাল দেওয়া এবং খাবারকে দূষিত করে এমন উপাদানযুক্ত খাদ্যসামগ্রি বিক্রি করা আইনত দন্ডনিয় হবে না। সেসময় খাদ্যে কি ধরণের উপাদান আছে অনেকটা বাধ্য হয়েই সে বিষয়ে পরীক্ষা শুরু করে বিএসটিআই। অনেক খাদ্যেই সেসময় ভেজালের সন্ধান মেলে। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য পাওয়া যায় দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যে। বাজারে প্রাপ্ত ১৯০টি দুধ, প্যাকেটজাত দুধ, দই এবং দুগ্ধজাত খাদ্যে ক্ষতিকারক উপাদান ও ভেজালের অস্তিত্ব নিশ্চিতভাবেই পাওয়া গেছে। এরমধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া, অ্যাফ্লোটক্সিন, সিসা, টেরিটাসাইক্লন, মোল্ড এবং মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এমন আরো উপাদান। ভয়ংকর বিষয় হলো বাজারে এমন কোন দুধ বা দুগ্ধজাত পন্য নেই যাতে এই উপাদানগুলো পাওয়া যায়নি। একবাক্যে বললে, বাংলাদেশের কেউ বিশুদ্ধ দুধ পানের সুযোগ পাননা।
বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ফেব্রুয়ারি মাসেই জানিয়েছিলো দুধের মতো একটি সংবেদনশীল খাবারে যারা ভেজাল দেয় তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু মে মাস চলে গেলেও ব্যবস্থা তো দূরের কথা, সামান্য উদ্যোগও চোখে পড়েনি। ফলে বাধ্য হয়েই পর্দার সামনে চলে আসে বাংলাদেশের হাইকোর্ট। তবে দেশটিতে এতো ধরণের খাদ্যে ভেজাল, আলাদাভাবে দুধে নজরদারি করা কঠিন। তবে আদালত দুধে ভেজাল মেশানো ব্যক্তিদের নাম জানাতে ১৫ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলো নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে। পরে সে সময়সীমা ২৩ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বিশ্বে নিরাপদ দুধপান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন শুধু বাংলাদেশ নয়, এই নামগুলো আন্তর্জাতিকভাবেই সামনে আনতে হবে।

ওয়ার্ল্ড মিল্ক ড্রিঙ্কার্স সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছে, এই ব্যক্তিদের শুধু বাংলাদেশের আইনেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বিচার করতে হবে। কারণ দুধের মতো একটি নিরাপদ খাদ্যে ভেজাল দিয়ে তারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ প্যাকেটজাত দুধ এবং ৫১ শতাংশ, দইতে মাইক্রোবায়োলজিকাল দূষকের অস্তিত্ব রয়েছে। আর শতভাগ গোখাদ্যেই রয়েছে ভারী ধাতু, প্যারাসাইট, ট্রোসাইক্লিন, ক্রিপ্টোক্সিন এবং অন্যান্য দূষক।

এদিকে দ্বিতীয় দফা পরীক্ষাতেও দুধে এন্টিবায়োটিক পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক ড. আ ব ম ফারুক। গতকাল শনিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, প্রথম দফায় দুধের নমুনা পরীক্ষা করে তিনটি এন্টিবায়োটিক পাওয়া গিয়েছিলো। এবার পাওয়া গেছে চারটি। গত সপ্তাহে পরীক্ষাটি পুনরায় করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো এবারও আগের ৫টি কোম্পানির ৭টি পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের নমুনা এবং খোলা দুধের ৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ১০টি নমুনাতেই উদ্বেগজনক মাত্রায় এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, এবার এন্টিবায়োটিকের সংখ্যা ছিল চারটি। এগুলো হলো, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং লেভোফ্লক্সাসিন। এর মধ্যে আগেরবার ছিল না এমন এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে দু’টি। সেগুলো হচ্ছে, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন। ১০টি নমুনার মধ্যে তিনটিতে এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে চারটি। ছয়টিতে এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে তিনটি এবং একটিতে এন্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে দু’টি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি আরও বলেন, আগামীতেও এই পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষাগুলোর ফলাফল জনস্বার্থে প্রকাশের চেষ্টা করবো। আশা করি, এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট দুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে তাদের দুর্বলতা দূর করে পণ্যের গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করবে।

সম্প্রতি এনএফএসএল জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহযোগিতায় গাভীর খাবার, দুধ, দই, প্যাকেট দুধ নিয়ে এক জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এনএফএসএল জানিয়েছে, এ জন্য ঢাকাসহ তিন জেলার ছয় উপজেলার ১৮ স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে গাভীর খাবার ও দুধ সরাসরি খামার থেকে সংগ্রহ করা হয়। আর দই রাজধানীর বিভিন্ন নামকরা দোকান ও আশপাশের উপজেলার দোকান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া বাজারে প্রচলিত প্রায় সব ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত তরল দুধ এবং আমদানি করা প্যাকেট দুধ বিভিন্ন সুপার স্টোর থেকে সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট নিয়মে ল্যাবরেটরিতে পৌঁছানোর পর পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, প্রায় সব গোখাদ্যে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কীটনাশকও মিলেছে কোনো কোনো খাবারে। সিসা ও ক্রোমিয়ামও আছে। মানুষের রোগ প্রতিরোধ শক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এগুলো। সিসা ও ক্রোমিয়াম ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গোখাদ্যের ৩০টি নমুনা গবেষণা শেষে দেখা গেছে, এর মধ্যে কীটনাশক (২ নমুনায়), ক্রোমিয়াম (১৬টি নমুনায়), টেট্রাসাইক্লিন (২২টি নমুনায়), এনরোফ্লোক্সাসিন (২৬টি নমুনায়), সিপ্রোসিন (৩০টি নমুনায়) এবং আফলাটক্সিন (৪টি নমুনায়) গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রা পাওয়া যায়। গাভির দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯ শতাংশ দুধে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কীটনাশক, ১৩ শতাংশে টেট্রাসাইক্লিন, ১৫ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় সিসা পাওয়া যায়। ৯৬ শতাংশ দুধে মেলে বিভিন্ন অণুজীব। প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনায় ৩০ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি হারে আছে টেট্রাসাইক্লিন। একটি নমুনায় সিসা মিলেছে। একই সঙ্গে ৬৬ থেকে ৮০ শতাংশ দুধের নমুনায় বিভিন্ন অণুজীব পাওয়া গেছে। দইয়ের ৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করে একটিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি সিসা পাওয়া গেছে। আর ৫১ শতাংশ নমুনায় মিলেছে বিভিন্ন অণুজীব।
এনএফএসএলের এই গবেষণা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লুৎফুল কবির বলেন, যেসব উপাদান পাওয়া গেছে, এর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের উপাদানই বেশি টেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লোক্সাসিন, সিপ্রোসিন ও আফলাটক্সিন অ্যান্টিবায়োটিক। এগুলো সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়ার অর্থ হলো এগুলো যেকোনো বয়সী মানুষের শরীরে ঢুকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেবে। লুৎফুল কবির বলেন, গরুর দুধে এবং প্যাকেটজাত দুধে সিসা ও ক্রোমিয়াম পাওয়াটা ভয়ংকর সংবাদ। এসব দ্রব্য মানবশরীরে প্রবেশের চূড়ান্ত পরিণতি ক্যানসার। তিনি আরও বলেন, আমাদের কিডনির কাজ হলো শরীরের নানা দ্রব্য ছেঁকে ফেলে দেওয়া। কিন্তু এসব দ্রব্য ছেঁকে ফেলতে পারে না। শরীরে জমা হয়। তখন মারাত্মক পরিণতি হয়। লুৎফুল কবির বলেন, দুধ ফুটানোর পর কিছু কিছু অণুজীবও নষ্ট হতে পারে, কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক, কীটনাশক বা সিসা নষ্ট হয় না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ওবায়দুর রব বলেন, যেসব অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে সেগুলো গোখাদ্যের মাধ্যমেও আসতে পারে। আবার গরু মোটাতাজা করার জন্য যেসব ওষুধ দেওয়া হয় সেগুলোর মাধ্যমেও আসা সম্ভব। আন্তর্জাতিক সংগঠন পপুলেশন কাউন্সিলের কান্ট্রি ডিরেক্টর ওবায়দুর রব বলেন, আমাদের মাঠ পর্যায়ে জনস্বাস্থ্য দেখভাল যে মোটেও ভালভাবে হচ্ছে না, এটা তারই প্রমাণ। আগে স্যানেটারি পরিদর্শকেরা গরুর দুধে পানি মেশানো হয়েছে কি না তা দেখতেন। এখন তাদের প্রশিক্ষিত করতে হবে এসব ভয়াবহ উপাদান শনাক্তের কাজে।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত দুধসহ ৭২টি খাদ্যপণ্য নিয়ে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই গবেষণায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যও ঢাবি শিক্ষকদের ওই রিপোর্টকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। এছাড়া গবেষণা প্রটোকল না মানার অভিযোগ তুলে এর বিরুদ্ধে লিগ্যাল অ্যাকশন নেওয়া হবে বলে জানান মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন। ওই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বায়োমেডিকেল সেন্টারের পরিচালক এবং ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।

গবেষণার ফলাফল প্রকাশের ব্যাপারে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। এ ব্যাপারে কী বলবেন জানতে চাইলে আ ব ম ফারুক বলেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য কোনো ঝুঁকি বা বিপদ যখন দেখা দেয় তাৎক্ষণিকভাবে সেটা জনগণকে জানানোই হচ্ছে জনস্বাস্থ্য নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের দায়িত্ব। সেখানে কি হলো কি হলো না সেটা দেখার বিষয় না। এটা না জানালেই বরং আমাদের অপরাধ হতো। সেক্ষেত্রে আমি আমাদের নীতিতে ঠিক আছি। এটাই আমাদের দায়িত্ব এবং এটাই আমরা করবো। তিনি বলেন, আমরা যারা গবেষণা করি আমাদের দায়িত্ব আমরাই নিই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হচ্ছে গবেষণা করে ফলাফল প্রকাশ করা।

সূত্র মতে, ইতিমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ভেজালবিরোধী অভিযান শুরু করলেও তা সমন্বয়হীনতায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারছে না। ভোক্তাদের অভিযোগ, প্রতি বছর রমজান মাস এলেই বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, ডিসিসিসহ বিভিন্ন সংস্থা হোটেল-রেস্তোরাঁ, ইফতারি বিক্রেতাদের দোকানে দোকানে অভিযান চালাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। সেসব অভিযান-জরিমানার জাল কেবল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেণির হোটেল-রেস্তোরাঁর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠিত হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুডের কথিত অভিজাত দোকানে অভিযানের আঁচ পড়ে না বললেই চলে। অতি সম্প্রতি অভিজাত শ্রেণির হোটেল-রেস্তোরাঁয় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাতেই নানা ঘৃণ্যচিত্র বেরিয়ে আসে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে ভেজাল খাদ্যপণ্য শনাক্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১৭টি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ স্টান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)। বিএসটিআই আইন-২০১৩ (সংশোধিত) অনুযায়ী খাদ্যের মান বিএসটিআই দ্বারা প্রত্যায়িত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু নিরাপদ খাদ্যমান নিশ্চিত করতে বিএসটিআইর নজরদারি ক্রমান্বয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান হলো স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন ঢাকা সিটি করপোরেশন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদফতর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, পরিবেশ দূষণ মনিটরিংয়ের জন্য পরিবেশ অধিদফতর ও পরীক্ষাগার, মাছে রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রণ শনাক্তে মৎস্য অধিদফতর, পশুরোগ পরীক্ষা এবং পোলট্রি ফিড নিয়ন্ত্রণের জন্য পশুসম্পদ বিভাগ, কৃষিপণ্যের গুণাগুণ দেখার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং এবং পানির গুণগত মান মনিটরিংয়ের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। রাজধানীর হোটেল-রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুডের খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ঢাকা সিটি করপোরেশন স্বাস্থ্য বিভাগের বড় একটি ভূমিকা থাকার কথা। কিন্তু ভুক্তভোগী নাগরিকরা সংস্থাটির কোনো তৎপরতা চোখে দেখতে পান না বললেই চলে।

https://www.dailysangram.com/post/382704