১৩ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ১১:৪৮

জলবায়ু পরিবর্তনে ডেঙ্গুর প্রকোপ

১২ দিনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ১৬৪৩ জন * বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ ঝুঁকিতে -বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা * বাঁচতে হলে ব্যক্তিগত সচেতনতা বাড়াতে হবে-স্বাস্থ্যমন্ত্রী

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশে গত ১২ দিনে এক হাজার ৬৪৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

অর্থাৎ দিনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে প্রায় ১৩৭ জন, যা প্রতি ঘণ্টায় ৫ জনেরও বেশি। এ পরিসংখ্যান দেশের অর্ধশত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর তথ্যের ভিত্তিতে।

এর বাইরে রাজধানীসহ সারা দেশে ঠিক কতজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন তার হিসাব নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ সাধারণ ও মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। প্রতিবছর মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গু জ্বরে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন।

প্রতি মিনিটেই বিশ্বের কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এদের অধিকাংশই শিশু। আক্রান্তদের মধ্যে বছরে ২২ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোতে এ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুহার প্রতিবছর বেড়েই চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একদিকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, খরা, বরফ গলা ও সুনামিসহ ঝড় হচ্ছে। এতে বহু মানুষ খোলামেলা স্থানে বসবাস করতে বাধ্য হয় এবং মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তন।

বাংলাদেশে গত দুই দশকে ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার কামড়ে ২৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু সরকারি হিসাবেই এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে এ সময়কালে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শয্যাশায়ী হয়েছেন প্রায় ৫৩ হাজার।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অনেক সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও অনেকেই হাসপাতালে আসেন না, অনেকেই চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে যান বা ফার্মেসি থেকে পরামর্শ ও ওষুধ কিনে খান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আকতার জানান, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের ১২ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মোট ৫৩ হাজার ৬৯০ জন ভর্তি হন।

বছরওয়ারি প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৫ হাজার ৫৫১ জন, ২ হাজার ৪৩০, ৬ হাজার ২৩২, ৪৮৬, ৩ হাজার ৪৩৪, ১ হাজার ৪৮, ২ হাজার ২০০, ৪৬৬, ১ হাজার ১৫৩, ৪৭৪, ৪০৯, ১ হাজার ৩৫৯, ৬৭১, ১ হাজার ৭৪৯, ৩৭৫, ৩ হাজার ১৬২, ৬ হাজার ৬০, ২ হাজার ৭৬৯, ১০ হাজার ১৪৮ ও ৩ হাজার ৭২০ জন।

এ সময়কালে (২০০০ থেকে ২০১৯ সাল) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বছরওয়ারি পরিসংখ্যান অনুসারে যথাক্রমে ৯৩ জন, ৪৪, ৫৮, ১০, ১৩, ৪, ১১, ৬, একজন, দু’জন, ৬, ১৪, ৮, ২৬ ও তিনজন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্সসহ প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে দ্রুত ডেঙ্গু শনাক্ত ও সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব না হলে আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ২০ জনের মৃত্যুঝুঁকি থাকে। তবে দ্রুত শনাক্ত ও প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে চিকিৎসা করাতে পারলে মৃত্যুঝুঁকি ১ ভাগেরও নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা যুগান্তরকে বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে মশার প্রজনন দ্রুত হয়। মহিলা (ফিমেইল) মশার কার্যকারিতা বাড়ে। মশার সংক্রমণ হওয়ার জন্য যে ইউকিউবিশন সময় প্রয়োজন হয় তা কমে যায়। আগে যেসব জায়গায় মশা থাকতে পারত না তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সেসব জায়গায় অবস্থান করতে পারে। বিশেষ করে বৃষ্টির পানি ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন পাত্রে জমিয়ে রাখার কারণে ডেঙ্গুবাহী এডিশ মশার প্রজনন বাড়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে মালয়েশিয়ায় ডেঙ্গু জ্বরে ৪৬ হাজার আক্রান্ত ও ৭৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে।

একই সময়ে ফিলিপাইনে ৭২ হাজার আক্রান্ত ও ৩০৩ জনের মৃত্যু, সিঙ্গাপুরে ৩ হাজার ২৩৩ জন আক্রান্ত, ভিয়েতনামে ৬০ হাজার আক্রান্ত ও চারজনের মৃত্যু এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৬ হাজার ৮০৭ জন আক্রান্ত হয়ে ৭ জনের মৃত্যু, মিয়ানমারে ৪ হাজার আক্রান্ত ও ১৪ জনের মৃত্যু এবং থাইল্যান্ডে ২৬ হাজার আক্রান্ত ও ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের কারণে জয়বায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। যার প্রভাবে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বাড়ছে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও বাড়ছে। কখনও খরা, আবার কখনও বা অতিবৃষ্টির ফলে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে প্রকোপ বাড়লেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা অনেক কম।

এদিকে ডেঙ্গুর প্রতিষেধক হিসেবে একটি ভ্যাক্সিন বাজারে এসেছে। সিওয়াইডি-টেট্রাভ্যালেন্ট নামে ডেঙ্গুর এই ভ্যাক্সিন যদি ৯ থেকে ৪৫ বছরের মানুষ যাদের আগে কোনো একটি সেরোটাইপ ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে ঐরকম জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রয়োগ করা হয়, তবে ৯৩ শতাংশের অধিক লোকের পরবর্তী সময়ে মারাত্মক ডেঙ্গু জ্বর যথা: হেমোরেজিক ফিভার, ডেঙ্গু সক সিন্ড্রোম, মূল্যবান অঙ্গ আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি হবে না।

এ ছাড়া ৮০ শতাংশের বেশি মানুষকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। গবেষণায় এমনটি প্রমাণিত হয়েছে।

ফ্রান্সের ওষুধ কোম্পানি স্যানোফি-পাস্তুরের উদ্ভাবিত এ ভ্যাক্সিন স্যানোফি-অ্যাভেন্টিস বাংলাদেশে এনেছে। এরই মধ্যে এটি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন পেয়েছে। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেঙ্গু প্রতিরোধে এ ভ্যাক্সিন ব্যবহারের অনুমোদন করেছে।

২০১৫ সালে উদ্ভাবিত এ ওষুধ ২০১৬ সালে ফিলিপাইনের ডেঙ্গু আক্রান্ত ৮ লাখ মানুষের ওপর প্রয়োগ করে প্রত্যাশিত সফলতা পাওয়া গেছে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে এ ওষুধটির তিন ডোজের একটি সার্কেল গ্রহণ করতে হয়।

এদিকে দেশে প্রচলিত ও বহুল ব্যবহৃত কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে সব ধরনের মশা। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হলেও মশা মরছে না। সম্প্রতি এমন তথ্য উঠে এসেছে আইসিডিডিআরবি’র এক গবেষণায়।

সম্প্রতি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক যৌথ বৈঠকে এ গবেষণা তথ্য উপস্থাপন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল-সিডিসির অর্থায়নে রাজধানী ঢাকা শহরে এ গবেষণা পরিচালিত হয়।

সেপ্টেম্বর ২০১৭ ও ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া জিবাণুবাহী এডিস ও কিউলিক্স মশা এরই মধ্যে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কীটনাশক ব্যবহারের পর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মশার মৃত্যুর হার যদি ৯০ শতাংশের নিচে হয় তাহলে এটা নিশ্চিত যে মশা কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে।

অথচ আইসিডিডিআরবি’র গবেষণায় দেখা গেছে এডিস ও কিউলিক্স মশার মৃত্যুহার শূন্যের কোঠায়।

এমনকি কীটনাশকের মাত্রা দ্বিগুণ হারে প্রয়োগ করলেও মশার মৃত্যু ঘটেনি বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির গবেষক ড. মোহাম্মদ শাফিউল আলম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা যুগান্তরকে বলেন, আইসিডিডিআর’বি একটি গবেষণা চালিয়েছে। সেখানে এডিস ও কিউলিক্স মশার কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে ওঠার চিত্র পাওয়া গেছে।

অধ্যাপক সানিয়া বলেন, কীটনাশক চাইলেই পরিবর্তন করা যায় না। নতুন কীটনাশক নিবন্ধন করতে হলে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের কারিগরি সহায়তা চাওয়া হলে আমরা সহযোগিতা করব।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মমিনুর রহমান মামুন যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। মেয়র আতিকুল ইসলাম ওষুধ পরিবর্তনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। ১৫ জুলাই আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিডিসির পরিচালকসহ সব স্টেকহোল্ডারকে সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় বসব। এ ধরনের কীটনাশক পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন হয়। নতুন একটি কীটনাশকের অনুমোদন করতে পরিবেশের ওপর এর প্রভাব পরীক্ষা করে তবেই অনুমোদন দেয়া হয়। তারপরও যতদ্রুত এটা করা সম্ভব আমরা করব।

ডেঙ্গু হেমোরেজিক অবস্থাটা সবচেয়ে জটিল। এ জ্বরে সাধারণ জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরও যে সমস্যাগুলো হয়, সেগুলো হল : শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে (চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত থেকে, কফের সঙ্গে রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে ও চোখের বাইরে) রক্ত পড়তে পারে।

মেয়েদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি হতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস, কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী সাধারণত পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে।

এডিস মশা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য কোনো সময়ও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলা শরীর ভালোভাবে কাপড় আবৃত করে রাখতে হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ডেঙ্গুর প্রকোপ সম্পর্কে সম্প্রতি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অভিজাত এলাকায়ই ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার প্রকোপ বেশি। তারা কেউ শখ করে বাগান তৈরি করেন; কেউবা বাড়িতে কৃত্রিম ঝরনা বসান। এ ছাড়া ঘরের এয়ারকন্ডিশনের জমে থাকা পানি পরিষ্কার করেন না।

এসব কারণে অভিজাত বাসাবাড়িতে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বেশি। ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে মুক্ত হতে চাইলে সরকারের চেয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সচেতনতাই বেশ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/198529