১৩ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ১১:৪৩

গতি নেই শিক্ষা প্রকল্পে

সাড়ে ৫ বছরে কাজ হয়েছে ২০.৫৮ শতাংশ

দেশে চলমান অন্যান্য প্রকল্পের মতো শিক্ষা খাতের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (আইএমইডি) প্রকল্পের কাজেও কোনো গতি নেই। ব্যয় ও সময় বাড়িয়েও কাজের গতি বাড়ছে না। ২০১৪ সালে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের কাজ ২০১৬ সালের জুনে শেষ করার কথা থাকলেও এখনো কাজ অর্ধেকও হয়নি। চলতি বছরের এপ্রিলে সেই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি মাত্র ২০.৫৮ শতাংশ।

মূল প্রকল্পটি প্রণয়নকালে যৌক্তিকভাবে সময় ও ব্যয় নির্ধারণ না করায় এখন ব্যয় ২৬৪ কোটি টাকা বা ২২৩ শতাংশ বেড়েছে। ১২ জেলায় ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা থাকলেও গত সাড়ে ৫ বছরে সেটা সম্পন্ন করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা। ফলে প্রকল্পটি বর্ধিত মেয়াদেও সম্পন্ন করতে পারবে না বলে আশঙ্কা করেছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের জনবলের অভাবের পাশাপাশি অধিদফতরের নিজস্ব কোনো সদর দফতর নেই। জেলাপর্যায়ে অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের স্বতন্ত্র অফিসও নেই। ফলে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কাজ করতে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় তাদের। এ জন্য ঢাকায় সদর দফতর ও ৩২টি জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস করার এ প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয় ২০১৪ সালে। প্রকল্পের ব্যয় অনুমোদন করা হয় ১১৮ কোটি ৬২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
কিন্তু কাজের তেমন অগ্রগতি না থাকলেও ব্যয় বাড়ানো হয় ২২২.৯৭ শতাংশ বা ২৬৪ কোটি ৪৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮৩ কোটি ১২ লাখ ১৪ হাজার টাকা। আড়াই বছরের এ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুনে শেষ করার কথা থাকলেও সাড়ে ৩ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে তা ২০২০ সালে জুন পর্যন্ত টেনে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে কাজগুলো হলোÑ ডাটাবেজ তৈরি, দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ, জমি অধিগ্রহণ, ইইডির ১৫ তলা ভবন সদর দফতর নির্মাণ, ৩২টি জেলায় ৫ তলা ভবন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ।

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সরেজমিন তদন্ত করে গত জুনে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পূর্ত কাজে অর্থ ব্যয় হয়েছে ৬৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা যা অনুমোদিত বরাদ্দের ২৩.১০ শতাংশ। তবে যানবাহন ক্রয়ে ব্যয় হয়েছে ৯৩.৭৫ শতাংশ। অন্যান্য অঙ্গের ব্যয় সামান্য হয়েছে। বর্ধিত সময়সহ ইতোমধ্যে প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়েছে ৭৮ ভাগ। বিপরীতে আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ২১ শতাংশ। ৩২টি জেলার অফিসের মধ্যে ১০টির উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ এবং ১০টি নতুন ভবনের কাজ চলমান আছে সাড়ে ৫ বছর ধরে। এখনো ১২ জেলায় কোনো কাজই শুরু করা হয়নি। জমি না পাওয়ায় ১২টি অঙ্গের কাজ শুরুই করা যায়নি। অন্য দিকে, সদর দফতরের ভবন নির্মাণ কাজের সময় ৩০ মাস নির্ধারণ করা হলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। অনুমোদিত কাজের মধ্যে মাত্র ১৫.৩৮ শতাংশ কাজ সমাপ্ত হলেছে।

প্রকল্পের ব্যয় ও কাজের অগ্রগতির সরেজমিন পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, পরামর্শক খাতে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো অর্থই ব্যয় হয়নি। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৩০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা, যা বরাদ্দের মাত্র ৬.৬১ শতাংশ। ভূমি উন্নয়নে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো কাজই হয়নি এ খাতে।

১৫ তলা ভিতের ওপর ১৫ তলা প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য ১২৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো অর্থই ব্যয় হয়নি এ খাতে। ৩২ জেলায় অফিস নির্মাণের মধ্যে ১৭ জেলায় কাজ চলমান আছে। এ খাতে ১৬২ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৬৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা যা বরাদ্দের ৪০.২৭ শতাংশ।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, সার্ফেস ড্রেন ও অ্যাপ্রোন নির্মাণ, সাবস্টেশন, লিফট, জেনারেটর, প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়াম ও কনফারেন্স রুমের ডেকোরেশন, ৭৫টি কম্পিউটার কেনা, তিন হাজার ৩৩৪টি বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র কেনায় কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি। তবে ১৩টি জিপ ও ৩২টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ প্রকল্পে অবকাঠামো নির্মাণে গুণগত মান রক্ষা করার জন্য তদারকি জোরদার করা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে নির্মাণকাজের তদারকি বিঘিœত হচ্ছে। জমি অধিগ্রহণে বিলম্বের কারণেও কাজ এগোচ্ছে না।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/424806