২৯ জুন ২০১৯, শনিবার, ৭:৩৩

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ৭৫ জন

রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে বেড়ে গেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ৭৫ জন। সব মিলিয়ে বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৬৬ জন। এর মধ্যে সব থেকে বেশি ২০ জন রোগী ভর্তি আছেন হলি ফ্যামেলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে। ঢাকা মেডিকেলে ১১ জন, বিজিবি হাসপাতালে ১২ জন, বারডেম হাসপাতালে ২ জন এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ জন রোগী। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি আছেন ২৭ জন রোগী। তবে প্রচলিত ওষুধে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ডাব্লিউএইচও স্বীকৃতি দিলেও নতুন ওষুধ ব্যবহারের আগে পেরুতে হবে বেশ কয়েকটি ধাপ। পুরো প্রক্রিয়া মেনে চলতি মৌসুমেই ওষুধ দেয়ার কাজ শুরু করা সহজ হবে না। তবে প্রতিটি সংস্থার সমন্বয় থাকলে বিষয়টি অসম্ভবও নয়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান বলেন, যে ওষুধে কাজ হবে না সে ওষুধ ছিটিয়ে লাভ নাই। স্বাস্থ্য বিভাগ কৃষি বিভাগ মিলিয়ে আলোচনা করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, এডিস নিয়ন্ত্রণে সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতাও কম জরুরি নয়।

২০১৮ সালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের হার রেকর্ড ছাড়ানোর কথা বলা হলেও এ বছর মৌসুম শুরুর আগেই হানা দিয়েছে ডেঙ্গু। সাধারণত বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস ‘ডেঙ্গু মৌসুম’ বলে পরিচিত হলেও এবার মধ্য মে থেকেই ডেঙ্গু দেখা দিয়েছে। এ কারণে হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছেন রোগীরা। এরই মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দু’জন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু মৌসুম প্রকৃতপক্ষে জুন মাসে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে। তবে জানুয়ারি মাস থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়াতে ওই সময় থেকেই ডেঙ্গু শুরু হয়েছে। তবে কেবল বৃষ্টির পানি না, নিজেদের ঘরে ও ফুলের টব জমে থাকা পানিতেও ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা ডিম পারে। সেখান থেকেও ডেঙ্গু ছড়াতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্টে ােল রুমের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত ৪৬ জন রোগী। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন৭৫জন। ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্টে ােল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আখতার বলেন,‘পানি কোথাও খোলা অবস্থায় তিনদিনের বেশি রাখা ঠিক না। পানি ঢেকে রাখতে হবে অথবা তিনদিন পর ফেলে দিতে হবে। কারণ পরিষ্কার পানিতেই এডিস মশা ডিম পারে। এছাড়া ডাবের খোসা ও গাড়ির টায়ারসহ ঘরের কোনো আসবাবপত্রে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’

দেশে প থেম ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায় ২০০০ সালে। সেবছর রেকর্ড সংখ্যক ৯৩ জন রোগী মারা যান; রোগী ছিলেন ৫ হাজার ৫৫১ জন। ২০০১ সালে মারা যান ৪৪ জন; রোগী ছিলেন দুই হাজার ৪৩০ জন। ২০০২ সালে মৃত্যু হয় ৫৮ জনের। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিলেন ৬ হাজার ২৩২ জন। ২০০৩ সালে মৃত্যুর হার অকেটাই কমে আসে। ওই বছর মারা যান ১০ জন; রোগী ছিলেন ৪৮৬ জন। ২০০৪ সালে মৃত্যু হয় ১৩ জনের; রোগী ছিলেন ৩ হাজার ৪৩৪ জন। ২০০৫ সালে মারা যান ৪ জন; রোগী ছিলেন ১ হাজার ৪৮ জন। ২০০৬ সালে মৃত্যু হয় ১১ জনের। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিলেন দুই হাজার ২শ জন। এদিকে ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা না যায়নি। এই বছরগুলোতে রোগীর সংখ্যা ছিল- যথাক্রমে ৪৬৬ জন, এক হাজার ১৫৩ জন, ৪৭৪ জন এবং ৪০৯ জন।

এর পরের বছর থেকেই অর্থাৎ ২০১১ সাল থেকে আবার ডেঙ্গুতে রোগীর মৃত্যু শুরু হয়। ২০১১ সালে মারা যান ৬ জন; রোগী ছিলেন এক হাজার ৩৫৯ জন। ২০১২ সালে মারা যান একজন; রোগী ছিলেন ৬৭১ জন। ২০১৩ সালে মৃত্যু হয় ২ জনের; রোগী ছিলেন ১ হাজার ৭৪৯ জন। আবার ২০১৪ সালে কেউ মারা না গেলেও রোগী ছিলেন ৩৭৫ জন। ২০১৫ সালে মৃত্যু হয় ৬ জনের; ওই বছর রোগী ছিলেন ৩ হাজার ১৬২ জন। ২০১৬ সালে মারা যান ১৪ জন; রোগী ছিলেন ৬ হাজার ৬০ জন। ২০১৭ সালে মারা যান ৮ জন; রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭৬৯ জন। এছাড়া গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ২৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৮সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ৬৩৩ জন।

এ বছর কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে রেকর্ড সংখ্যক রোগী ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, আজকে অন্তত তিন থেকে চারজনকে চিকিৎসা দিয়েছি, যারা বাসায় চলে গেছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ডেঙ্গু কন্টে ােল করতে হলে মশা মারার ব্যবস্থা করতে হবে। সেজন্য এখনই ব্যক্তি ও রাষ্টকে ব্যবস্থা নিতে হবে। নিজেদেরকেই যার যার ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করতে হবে। ঘরের কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। আর সিটি করপোরেশন ও প শোসনকে মশা মারার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে যেসব জায়গায় পানি জমে আছে সেসব পরিষ্কার করতে হবে। মোট কথা, মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। না হলে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা বাড়তেই থাকবে-এটাই নিয়ম।

https://www.dailysangram.com/post/380814