১৮ জুন ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:৩৩

মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসি আর নেই

মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি আদালতের কাঠগড়াতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।সোমবার মিসরের একটি আদালতের এজলাসেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। খবর বিবিসি ও আহরাম অনলাইন।

উল্লেখ্য, মিশরের সেনাবাহিনী দেশটির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যূত করার পর থেকে তাকে কারাগারেই বন্দী করে একের পর এক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করে আসছিল।বঞ্চিত করা হয়েছিল চিকিৎসা সহ সব রকম মানবিক অধিকার থেকে।তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছিল।অবশেষে গতকাল সোমবার আদালতের এজলাসেই প্রাণ হারালেন তিনি।

মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন মুরসির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

মিসরের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারকের কাছে কথা বলার অনুমতি চাইলে তাকে কথা বলতে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এ সময় তিনি বুকে ব্যাথা অনুভব করেন। এক পর্যায়ে তিনি হার্টঅ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

খবরে বলা হয়, মুরসির লাশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

মুরসির ছেলে আহমদ নাজাল ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লেখেন, আমার পিতা আল্লাহর কাছে চলে গিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে আরব বসন্তের জেরে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে বিশাল গণঅভ্যুত্থান। এতে পদচ্যুত হন হোসনি মোবারক।

তবে, মুহাম্মদ মুরসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও মিশরের গণতন্ত্র তখনও ছিল সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের প্রতি অনুগত সেনাবাহিনী, সাংবিধানিক আদালত সহ কয়েকটি গণবিচ্ছিন্ন এলিট গোষ্ঠীর হাতে বন্দী।যার কারণেই ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই অবৈধ সুবিধা ভোগ করে আসা এসব কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠির সাথে তার সংঘাত চলে আসছিল।তাদের ইন্ধনেই দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র এক বছরের মাথায় সেকুলার ও বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো মুরসির পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে আর সেই আন্দোলনকে অজুহাত করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে।

এই বাস্তবতার কারণেই মুরসি ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই প্রভাবশালী ‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিনের মন্তব্য ছিল, ‘‘মুরসির রাষ্ট্রপতিত্ব প্রাথমিক ভাবে মিশরের অভ্যন্তরীণ নীতিগঠনে সামান্যই প্রভাব ফেলবে, কেননা প্রশাসনের সর্বস্তরেই মূলত হোসনি মুবারাকের অনুসারীরা, বা তার অনুগতরা বা তার দ্বারা নিযুক্তরা কর্মরত আছে।’’

সাংবাদিক ইয়সরি ফাউদাকে দেয়া এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মুরসি বলেন, তিনি রাষ্ট্রপতি শাসিত ও সংসদ শাসিত ব্যবস্থার সংমিশ্রণে একটি সাময়িক অন্তবর্তিকালীন প্রশাসনের পক্ষপাতী, যার মধ্য দিয়ে প্রশাসনের স্বাভাবিকীকরণ আর গতিশীলতা বজায় থাকবে।কিন্তু দেশটির তথাকথিত সাংবিধানিক আদালত ও সেনাবাহিনী দেশটির নির্বাচিত পার্লামেন্টকে বিলুপ্ত করে দিয়েছিল।অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট মুরসি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই পার্লামেন্ট পুনর্বহালের ঘোষণা দেন।এর ফলে ২০১২ সালের ১০ জুলাই প্রেসিডেন্টের প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে।

মিশরের তথাকথিত সামরিক পরিষদ এক বিবৃতিতে তথাকথিত সাংবিধানিক আদালতের পার্লামেন্ট বিলুপ্তির আদেশ সমুন্নত রাখার আহবান জানায়।কিন্তু এসব বৈরী প্রতিপক্ষের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই ক্ষমতা গ্রহণের এক সপ্তাহের মাথায়ই প্রেসিডেন্ট মুরসি সংসদের অধিবেশন ডাকার নির্দেশ জারী করেন।মুরসি গণতন্ত্রকে সমুন্নত করার পদক্ষেপ শুরু করেছিলেন।কিন্তু দুর্নীতিপরায়ণ বাম ও সেকুলার রাজনীতিকরা গণতন্ত্র বিরোধী সেনাবাহিনী ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে হাত মিলিয়ে মুরসি বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করলে সেনাবাহিনী মুরসিকে ক্ষমতাচ্যূত করার সুযোগ লুফে নেয়।

মিশরে গত সাইত্রিশ বছরের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। কিন্তু ২০১৩ সালে কথিত গণঅসন্তোষের সুযোগ নিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিসরীয় সেনাবাহিনী। পরে প্রেসিডেন্টের মসনদে বসেন মুরসির হাতে সেনাপ্রধান হওয়া আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি।

২০১৩ সালে মুরসির নেতৃত্বাধীন মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ করা হয়। এর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয় এবং বিভিন্ন অভিযোগে অনেককে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।

যেসব রাজনীতিবিদরা সে সময় হালুয়া-রুটির আশায় সিসির সাথে হাত মিলিয়েছিল, তাদেরও আজ আর কোন অস্তিত্ব নেই। গণতন্ত্র তো দূরের কথা দেশটিতে এখন আর কোন রাজনীতিই নেই।স্বৈরতন্ত্র আগের চেয়ে আরো বেশি শক্তি নিয়ে জগদ্দল পাথরের মত জেঁকে বসেছে।সেই সাথে জেঁকে বসেছে দুর্নীতি আর তোষামোদি।

https://www.dailysangram.com/post/379564