১৭ জুন ২০১৯, সোমবার, ৬:৫০

সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ বেড়েছে

পাঁচ বছরের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। তবে মূল বাজেটে প্রক্ষেপিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এই ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ ৫ গুণেরও বেশি। প্রতি বছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার কী পরিমাণ ঋণ নেবে তার একটি প্রক্ষেপণ বাজেটে উল্লেখ থাকে। কিন্তু বিগত পাঁচ বছরের কোনোটিতেই সরকারে পক্ষ থেকে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যে স্থির থাকা সম্ভব হয়নি। যেমন, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ৯ হাজার কেটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে ঋণ নেয়া হয় ২৮ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। অন্যান্য বছরেই একই প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।

বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ঋণ নিচ্ছে সরকার। সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা), ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫১ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা), ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা) এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ২৮ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা) ঋণ নেয়া হয়েছে।

অন্য দিকে চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ার কারণে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের বাজেটের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি মানে সরকারকে বেশি করে ঋণের সুদ গুণতে হয়। আগামী অর্থবছরের জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদ ব্যয় বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সুদ বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ২৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে ১৯ হাজার ১০৯ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি অব্যাহত বেড়ে যাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, দেখা গেছে দেশের মানুষ তাদের অলস অর্থ মূলত তিনটি জায়গায় বিনিয়োগ করে। একটি হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংকে দীর্ঘমেয়াদি আমানত রাখা। এবং অন্য দুটো হচ্ছে সঞ্চয়পত্র ও শেয়ারবাজার। কিন্তু ব্যাংকের আমানতের হার এখন গড়ে ৬ থেকে ৭ ভাগে রয়েছে। এখানে অর্থ রেখে তেমন লভ্যাংশ পাওয়া যায় না। আর শেয়ারবাজারও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এখন পর্যন্ত নিরাপদ মনে করছেন না। বাকি রইল সঞ্চয়পত্র, এখানে অর্থ রাখা নিরাপদ ও সুদ বেশি। তাই মানুষ সঞ্চয়পত্রেই সবচেয়ে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করছে। তাই কয়েক বছর ধরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাচ্ছে কয়েক গুণ। কিন্তু সঞ্চয় বিক্রি বেশি হওয়ার কারণে সরকারের দায়দেনাও বেড়ে যাচ্ছে। এতে সরকারের বাজেট ব্যবস্থাপনা হুমকির মুখে পড়বে।

উল্লেখ্য, সঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বর্তমানে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/418077