১২ মে ২০১৯, রবিবার, ১০:৩২

রাজধানীতে খাবার পানির হাহাকার

তীব্র তাপদাহের মধ্যেও রাজধানীতে খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে পানির চাহিদা বাড়লেও ঢাকা ওয়াসা সে অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে পারছে না। ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দাবি গরম ও রমজানের কারণে ঢাকা শহরে পানির ব্যবহার বেড়ে গেছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তারা এটিকে সাময়িক বললেও নগরীর বিভিন্ন স্থানে খাবার পানির দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। রামপুরা ও হাতিরঝিল সংলগ্ন এলাকায় কয়েক দিন ধরেই এলাকাবাসী বিক্ষোভ করছেন। তীব্র গরমের মধ্যে রামপুরা টেলিভিশন ভবনের সামনে রাস্তা অবরোধ করে বসে থাকেন কয়েক শ’ মানুষ। পানি সঙ্কটে গরমে নগরীর বহু এলাকায় রোজাদাররা ভীষণ কষ্টে পড়েছেন। তারা খাওয়া ও গোসল ঠিকমতো করতে পারছেন না।

রোজার আগে ঢাকা ওয়াসার এক সংবাদ সম্মেলনে এমডি তাকসিম এ খান জানিয়েছিলেন, বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে প্রায় ২৫৫ কোটি লিটার। আর দৈনিক চাহিদা রয়েছে ২৫০ কোটি লিটার, যার পুরোটাই ঢাকা ওয়াসা সরবরাহ করছে। এ সময় তিনি জানান, শুষ্ক মওসুম ও রমজান মাসের জন্য জরুরি প্রয়োজনে ৪৩টি পানির গাড়ি এবং ৩৪টি ট্রলি প্রস্তুত আছে। গ্রাহক কোনো সমস্যায় পড়লে ডিজিটাল কল সেন্টার ওয়াসা লিংক ১৬১৬২-তে ফোন করে জানাতে পারবেন। ৪৩৫টি ফিক্সড এবং ১০টি মোবাইল জেনারেটর স্ট্যান্ডবাই রাখা আছে। কোনো পাম্প বিকল হলে সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার মধ্যে মেরামত করে চালু করা হবে। ঢাকা ওয়াসার সব মডস জোনসহ ১২টি অভিযোগ কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হবে। ইফতার ও সাহরির সময় জনসমাগম স্থলে ট্রলি ও ভ্যানগাড়িতে করে বিশেষ ব্যবস্থায় পানি সরবরাহ করা হবে। গভীর নলকূপগুলো যাতে লোডশেডিংয়ের সময়ও চালু রাখা যায়, সে জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পানির পাম্প মনিটরিংয়ের জন্য ১১টি ভিজিলেন্স টিম তৎপর থাকবে।

কিন্তু বাস্তবে এসব কিছু কমই দেখা গেছে। রমজান ও গরম শুরু হতেই এখন সর্বত্র পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রামপুরা ও হাতিরঝিল সংলগ্ন এলাকায় কয়েক দিন ধরেই পানির সঙ্কট চলছে। ওয়াসার পানি সরবরাহ না থাকায় পানির দাবিতে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রামপুরা টিভি ভবনের সামনের রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ করেন রামপুরা ও মধুবাগ এলাকার বাসিন্দারা। এ সময় আন্দোলনকারীরা জানান, দুই দিন ধরে রামপুরা ও হাতিরঝিল সংলগ্ন এলাকায় পানি নেই। এতে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সবাই। শুধু ওই এলাকায় নয় রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় বর্তমানে পানি সঙ্কট চলছে। তীব্র গরমের কারণে একদিকে পানির চাহিদা বেড়েছে অন্য দিকে ওয়াসার পানি উৎপাদন কমে গেছে। এ কারণে বাসার জেনারেটর চালিয়েও পানি তোলা যাচ্ছে না।

দক্ষিণ মুগদা ব্যাংক কলোনি এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘ দিন থেকে পানি সঙ্কটে ভুগছেন। উঁচনিচু পাইপের কারণে সব বাড়িতে নিয়মিত পানি পাওয়া যাচ্ছে না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এলাকার আটটি বাড়িতে পাঁচ দিন ধরে কোনো পানি আসেনি বলে জানান বাসিন্দারা। বিষয়টি একাধিকবার ওয়াসাকে জানালেও কাজ হয়নি বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

সম্প্রতি জুরাইন এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান ওয়াসার নোংরা পানি সরবরাহের প্রতিবাদে কাওরানবাজার কার্যালয়ে ওয়াসা এমডিকে ওই পানি দিয়ে শরবত খাওয়াতে যান; যা দেশজুড়ে বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। কিন্তু এরপরও ওই এলাকায় পানির সমস্যা মেটেনি; বরং রমজানে পানির সমস্যা আরো বেড়েছে বলে জানান মিজানুর রহমান। নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, জুরাইন, মুরাদপুর, দনিয়াসহ আশপাশের এলাকার অলিগলিতে রীতিমতো কালো পানি আসছে ওয়াসার পাইপ দিয়ে। এ পানি মানুষ খাওয়া তো দূরের কথা কোনো কাজেই লাগানো যাচ্ছে না।

দক্ষিণ বাড্ডার জাগরণী ক্লাব এলাকায় এক সপ্তাহ ধরে পানি নেই। পানির অভাবে সাহরি-ইফতারিতে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে রোজাদারদের। এ ছাড়া গরমে গোসল ও অন্যান্য কাজেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। উত্তর বাড্ডার কিছু এলাকাতেও পানি সঙ্কট চলছে। তীব্র গরমে পানি সঙ্কটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকার মানুষকে।

পূর্ব দোলাইরপাড় এলাকায় দীর্ঘদিন থেকেই পানি সঙ্কট চলছে। বাসা বাড়িতে ওয়াসার সরবরাহ করা পানি খাওয়ার উপযুক্ত নয়। এ জন্য দীর্ঘ লাইন দিয়ে ওয়াসার পাম্প থেকে পানি নিয়ে যান এলাকাবাসী। গভীর রাতেও তাদের পানির জন্য লাইন দিতে হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় ওয়াসার পাম্পে মানুষের ভিড় দেখা যায়। পানি আগেপরে নেয়া নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হলে পাম্প অপারেটর পানি বন্ধ করে দেন। পরে অনেক অনুরোধ করেও পাম্প চালু করা সম্ভব হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা জানান। ফলে পানি না নিয়েই অনেককে ঘরে ফিরে যেতে হয়। এ ছাড়া পুরান ঢাকার বেশির ভাগ এলাকা, বাসাবো, মানিকনগর, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মিরপুরসহ অনেক এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানি ফুটিয়েও দুর্গন্ধ দূর করা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের সাথে গতকাল শুক্রবার টেলিফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ওয়াসার মডস জোন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিন নয়া দিগন্তকে বলেন, তীব্র গরম ও রোজার কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। এ জন্য কিছু কিছু এলাকায় পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মানুষ পানি বেশি ব্যবহার করার কারণে সঙ্কট হচ্ছে। দু-এক দিন বৃষ্টি হলেই এ সঙ্কট কেটে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/409192