১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, বুধবার, ১১:১১

দেশে শিশু নির্যাতন অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

দেশে শিশু অপহরণ, শিশু ধর্ষণ, শিশু হত্যা ও শিশু অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ১৭ ফেব্রুয়ারী প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই শিশু অপহরণ, শিশু ধর্ষণ, শিশু হত্যা ও নিহত শিশুর লাশের খবর পাওয়া যায়।
সরকার প্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রী ও সরকারী দলের এমপিগণের বক্তব্যে দেশের আইন শৃঙ্খলা অতীতের চেয়ে উন্নত বলে শোনা যায়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দও একই সূরে কথা বলেন। কিন্তু দেশের সচেতন মানুষ মনে করে যে, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি অতীতের চেয়ে ভালোই হয়ে থাকে তাহলে শিশু নির্যাতন ও শিশু হত্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন? দেশে অব্যাহতভাবে শিশু নির্যাতন বৃদ্ধি পাওয়ায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
শিশুরা নিষ্পাপ, ফুলের মত পবিত্র, যে কোন বিবেকবান মানুষ একজন শিশুকে কাছে পেলে তাকে কোলে টেনে নিয়ে আদর করে। শিশুরা পিতা-মাতা ও আত্মীয়- স্বজনের আনন্দের খোড়াক। পেশাদার অপরাধী ছাড়া শিশু অপহরণ, শিশু ধর্ষণ, শিশু হত্যার মত অতিজঘন্য কাজে লিপ্ত হতে পারে না। দেশের আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি না হলে এ সব অপরাধীরা শিশু নির্যাতনের মত অতিজঘন্য কাজে লিপ্ত হতে পারত না। কোন পরিবারের একজন শিশু অপহৃত হলে তার পিতা-মাতা ও ঘণিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। শান্তি ও স্বস্থি ঐ পরিবার থেকে বিদায় নেয়। অপহৃত শিশুকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক উদ্ধার করার দু’ চারটি ঘটনা পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারলে শিশু নির্যাতন কমে যেত।
কিন্তু বর্তমান সরকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় কর্মীদের মত ব্যবহার করছে। বিরোধীদলের কর্মীদেরকে দমণ করাই এখন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান কাজ। ফলে শিশু নির্যাতনের সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার এবং তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি প্রদানের কাজ খুব কমই হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বিচারহীনতার কারনে শিশু নির্যাতন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে ২০১২ সালে শিশু হত্যা হয় ২০৯ জন, ২০১৩ সালে শিশু হত্যা হয় ২১৮ জন এবং ১৮ জনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ২০১৪ সালে ৩৫০ জন শিশুকে হত্যা করা হয় এবং হত্যার চেষ্টা হয় ১৩ জন শিশুকে। ২০১৫ সালের জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত শিশু হত্যা হয় ১৯১ জন এবং ১১ জন শিশুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। বিএসএএফ-এর প্রতিবেদন মতে গত ৭ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৩০ জন শিশু এবং ৬২ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে ও ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৭ শিশুকে। এ সময় অপহৃত হয়েছে ১২৭জন শিশু ও অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৩ জন শিশুকে। এ পরিসংখ্যানের বাইরেও অনেক ঘটনা আছে। আজ ১৭ ফেব্রুয়ারী হবিগঞ্জে ৪জন স্কুল ছাত্রকে হত্যার পর মাটিতে পুতে রাখার খবর পাওয়া গেছে। এ থেকে বুঝা যায় পরিস্থিতি কত ভয়াবহ। এছাড়াও অনেক দুর্বৃত্ত টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে শিশুদের অপহরণ করে থাকে।
শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তারা যদি নিরাপদে বেড়ে উঠতে না পারে তাহলে জাতির ভবিষ্যত অন্ধকার। তাই শিশু নির্যাতন বন্ধ করার জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেটের সামিউল ইসলাম রাজন হত্যা, রাজন হত্যার একমাস যেতে না যেতেই খুলনার টুট পাড়ায় রকিবকে, বরগুনার তালতলায় শিশু রবিউল আউয়ালকে শাবল দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার লোমহর্ষক ঘটনা দেশের মানুষের বিবেককে সাংঘাতিকভাবে নাড়া দিয়েছে। এসব ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীরা কেউ কেউ গ্রেফতার হলেও তাদের শাস্তি কতটুকু হবে তা বলা মুশকিল।
শিশু হত্যা ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করার জন্য দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার বন্ধ করে তাদের পূর্ণ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিতে হবে। সেই সাথে অভিভাবকগণকে শিশুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আরো বেশী সজাগ ও সচেতন হতে হবে। শিশু হত্যার ঘটনা দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”