৩১ মার্চ ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ৭:১৩

সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনই অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আজ ৩১ মার্চ প্রথম ধাপের চাইতেও অধিক পরিমাণ ব্যালট ডাকাতি, জালভোট প্রদান, সরকারী দলের প্রার্থী কর্তৃক বিরোধী দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উপর হামলা এবং ভোট কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে ব্যাপক সহিংসতা, সন্ত্রাস ও আতংকের মধ্য দিয়ে ৬৩৯টি ইউনিয়নে নির্বাচনের প্রহসন অনুষ্ঠিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ৩১ মার্চ প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “গত ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত ৭১২টি ইউনিয়নে যেভাবে ব্যালট ডাকাতির প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার চাইতেও অধিক পরিমাণে ব্যালট ডাকাতি, জালভোট প্রদান, ভোট কেন্দ্র দখল করে নৌকায় সিলমারাসহ ব্যাপক সহিংসতা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে আজ ৩১ মার্চ ৬৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ব্যালট ডাকাতির প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গত ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রহসনের নির্বাচনের পর বিভিন্ন মহল সে নির্বাচনকে ব্যালট ডাকাতির প্রহসনের নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করে সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকে এবং সরকারকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে ছিল। কিন্তু সরকার ও নির্বাচন কমিশন তা আমলে না নিয়ে আজ ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত ১ম ধাপের প্রহসনের নির্বাচনের চাইতেও অধিক পরিমাণে অনিয়ম, কারচুপি, ব্যালট ডাকাতিসহ ব্যাপক সহিংসতা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কুক্ষিগত করা হয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার কোন ইচ্ছা বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও সরকারের নেই। তারা ব্যালট ডাকাতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ক্যাডারদের সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেম্বর বানিয়ে গোটা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়।

ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নের মধুচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আজ ৩১ মার্চ আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের গুলিতে শহিদুল ইসলাম শুভ নামের দশ বছরের একটি শিশু নিহত হয়েছে এবং আরো দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর রূপে আহত হয়েছে। এছাড়াও সন্ত্রাসীদের হামলায় যশোহরের চাচড়ায় ১জন ও জামালপুরে ১ ব্যক্তি নিহত হয়েছে এবং সারা দেশে শত শত লোক আহত হয়েছে। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের ভোট কেন্দ্র দখল ও জালভোট রোধ করতে না পেরে বিরোধী দলের ৬জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হয়েছেন। ভোলা জেলার ১২টি ইউনিয়নের অধিকাংশ ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিরোধী দলের প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে মারধর করে বের করে দিয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ব্যালট কেটে নৌকায় সিল মেরে বাক্সে ডুকিয়েছে। শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের জোরকরে বের করে দিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নৌকায় সিল মেরে বাক্সে ডুকিয়েছে। নাটোর জেলার লালপুর উপজেলায় সব ভোট কেন্দ্র থেকে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করে নৌকায় সিল মারা হয়েছে। যশোহরের চুড়ামনকাঠিতে ব্যালটে সিলমারার অভিযোগে একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে আটক করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়ন, খোকসাবাড়ী ইউনিয়ন, বহুলী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্র থেকে বিরোধীদলের ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে নৌকায় সিল মেরেছে। কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়ন, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর, চরপরবর্তী, চরহাজারী, মুছাপুর, চরএলাহী, প্রত্যেকটি ইউনিয়নেই অন্ততঃ ৩/৪টি ভোট কেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের সহযোগিতায় নৌকায় সিল মেরেছে।

উদাহরণ আর না বাড়িয়ে বলা যায় যে, আজ অনুষ্ঠিত প্রায় সকল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনেই ব্যাপক সন্ত্রাস, সহিংসতা, ব্যালট ডাকাতি, জালভোট প্রদান ও কারচুপির আশ্রয় নিয়ে সরকারী দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এ থেকে আবারও প্রমাণিত হলো যে, সরকারের আজ্ঞাবহ বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়।

আজ ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত যে সকল ইউনিয়ন পরিষদে ভোট ডাকাতি, সন্ত্রাস, সহিংসতাসহ নানা ধরনের অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে সে সকল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন বাতিল করে পূনরায় নির্বাচন দেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”