২ এপ্রিল ২০১৬, শনিবার, ৭:১৩

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক ব্যালট ডাকাতি ও প্রাণহানিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত ৬৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক ব্যালট ডাকাতি, জালভোট প্রদান, ভোট কারচুপি, সহিংসতা, সংঘাত, সংঘর্ষে ব্যাপক প্রাণহানিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ০২ এপ্রিল প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “গত ৩১ মার্চ দেশের ৬৩৯ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নামে যেভাবে ব্যালট ডাকাতি, জালভোট প্রদান, ভোট কারচুপি, প্রকাশ্যে টেবিলের উপর সরকারী দলের নৌকা প্রতীকে সিল মারা হয়েছে এবং ব্যাপক সংঘাত, সংঘর্ষ ও সহিংসতায় প্রাণহানি ঘটেছে এবং মানুষ আহত হয়েছে তাকে নির্বাচন না বলে ভোট ডাকাতির মহাউৎসব হিসেবে অভিহিত করাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত।

গত ২২ মার্চের ব্যালট ডাকাতির প্রহসনের নির্বাচনের পরে দেশবাসী আশা করেছিল যে, সরকার ও নির্বাচন কমিশন সতর্ক হবেন এবং দেশের জনগণ, রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন মহলের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। কিন্তু গত ৩১ মার্চ দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে ১ম পর্যায়ের চাইতেও অধিকতর ভোট ডাকাতি, জালভোট প্রদান, ভোট কারচুপি, সংঘাত, সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সহায়তায় যেভাবে সরকারী দলের লোকেরা প্রকাশ্যে টেবিলের উপর ব্যালট রেখে নৌকা মার্কায় সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে সরকারী দলের চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীদের বিজয়ী করেছে তাতে দেশবাসী বর্তমান সরকার, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ছে। কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের নেতা-কর্মীদের প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এতে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।

২২ মার্চ প্রথম দফায় আওয়ামী লীগের ৯৬ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও দ্বিতীয় দফায় ৩১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে এবং প্রথম দফায় ৪৯ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও দ্বিতীয় দফায় প্রায় এক শতাধিক বিরোধী দলের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন বয়কট করেছে। এ ধরনের ঘটনা এ দেশের ইতিহাসে অতীতে কখনো ঘটেনি।

প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা, সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৮ জন লোক নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে অন্তত: দুই হাজার লোক। তাদের মধ্যে অন্তত: দুইশত লোক গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আছে। নির্বাচনের পরে দেশের গ্রামেগঞ্জে ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতা, সংঘাত, হানাহানি ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে সরকারী দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র, শস্ত্র এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষকে নির্দয়ভাবে হত্যা করছে, বাড়ী-ঘর ভাংচুর এবং পুড়িয়ে দিচ্ছে। নারী এবং শিশুরাও হত্যার হাত থেকে রেহাই পচ্ছে না। ইতিমধ্যেই ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে ১০ বছরের একটি শিশু ও সিরাজগঞ্জ একজন গৃহবধু নিহত হয়েছে। নাটোর জেলার লালপুর উপজেলায় নৌকা মার্কায় ভোট না দেয়ায় একজন যুবককে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থা ভেংগে পড়বে এবং তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতা ব্যাপক আকার ধারণ করবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান কামাল গত ১লা এপ্রিল বলেছেন যে, ‘সহিংসতা কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না।’ তার এ বক্তব্য থেকেই বুঝা যাচ্ছে সহিংসতা কি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এ বক্তব্য দেয়ার পর তার মন্ত্রীর পদ আকড়িয়ে থাকায় আর কোন নৈতিক অধিকার নেই।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ ৩১ মার্চ বলেছেন যে, ‘এবার আর রাতে ব্যালটে সিল মারার ঘটনা ঘটেনি।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘নির্বাচনে কিছু অনাকাংখিত ঘটনা ঘটেছে যা সার্বিক অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে।’ তার এ সব মন্তব্যের দ্বারাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, রাতে ব্যালটে সিল মারা না হলেও দিনে সিল মারা হয়েছে এবং নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত গত ১লা এপ্রিল বলেছেন যে, ‘এ কেমন নির্বাচন কমিশনার, নড়েও না, চড়েও না, আগাও না, পিছায়ও না।’ নির্বাচন কমিশন ও সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বুদ্ধিজীবি মহল এবং কূটনীতিকগণও নির্বাচনে ব্যাপক ব্যালট ডাকাতি এবং সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এ নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। দেশের জনগণের কাছে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। এতে সার্বিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, বর্তমান জুলুমবাজ সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া অসম্ভব।

এমতাবস্থায় প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের এ নির্বাচন বাতিল এবং বাকী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
নির্বাচনী সহিংসতায় যারা নিহত হয়েছেন আমি তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। সেই সাথে আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দান করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”