বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজ ৩০ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুর সাড়ে ১২টায় মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ ৫-দফা দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের সঞ্চালনায় সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ (সাবেক এমপি), মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আবদুর রহমান মূসা প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত বক্তব্য দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলোঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ ৫-দফা দাবিতে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনারা অবগত আছেন যে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার এবং স্বৈরাচার ফিরে আসার সকল পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন।
কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের আলোকে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনায় মিলিত হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়।
তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ভিন্নমতের কারণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয়নি।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
সরকার ইতোমধ্যেই জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদ প্রস্তুত করেছে। দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও সনদের প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ পরামর্শ সরকারের নিকট উপস্থাপন করেছে।
জামায়াতে ইসলামী বরাবরই জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে।
জাতির ক্রান্তিলগ্নে ডকট্রিন অব নেসেসিটি-এর বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করেছে। এ লক্ষ্যে আইনি ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জামায়াতে ইসলামী সরকারের কাছে দুটি প্রস্তাব দিয়েছে—
১. জুলাই জাতীয় সনদের জন্য ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করা।
২. নির্বাচনের পূর্বে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন করে এর অধিকতর আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা।
না হলে, ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত—কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তির প্রদর্শন, অনিয়ম ও অপতৎপরতা রোধ এবং প্রতিটি ভোটকে মূল্যায়নের জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন অপরিহার্য। এ দাবিতে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ একমত হয়েছেন।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আমরা লক্ষ্য করছি জনগণের দাবিসমূহ কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ন্যায়-ভিত্তিক ও জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গত ১৫ সেপ্টেম্বর আন্দোলনের ৫-দফা গণদাবি জাতির সামনে তুলে ধরেছে।
একই সঙ্গে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত কর্মসূচিতে সারাদেশে বিপুল জনগণ অংশগ্রহণ করেছে। এজন্য দেশবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও গণমাধ্যমকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আজ আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আমাদের ৫-দফা গণদাবি ইতোমধ্যেই জনগণের কাছে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাই দেশের জনগণ এ দাবির প্রতি ব্যাপক সমর্থন দিয়ে আন্দোলনে শামিল হয়েছে। বর্তমান সরকারের উচিত অবিলম্বে জনগণের ৫-দফা দাবি মেনে নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা।
সরকার যদি যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে এবং সমস্যার দ্রুত সমাধান না করে তাহলে দেশের জনগণ ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য কঠোর হতে বাধ্য হবে।
ঘোষিত কর্মসূচি-
????০১ অক্টোবর থেকে ০৯ অক্টোবর: সারাদেশে গণসংযোগ, মতবিনিময় সভা, গোলটেবিল বৈঠক ও সেমিনার।
????১০ অক্টোবর: রাজধানীসহ সকল বিভাগীয় শহরে গণমিছিল।
????১২ অক্টোবর: সারাদেশে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান।
এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আমরা দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।