বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, যিনি রাসূল (সা.) কে ভালোবাসেন না, আল্লাহ তা'য়ালা তাকে ভালোবাসেন না। মুহাম্মদ (সা.) এর শিক্ষা হচ্ছে জালেমকে প্রতিহত করতে হবে। আমরা নিজেরা জুলুম করবো না এবং কাউকে জুলুম করতে দেবো না। রাসূল (সা.) যুবকদের তৈরি করেছেন এবং দল তৈরি করেছেন জালেমদের প্রতিহত করার জন্য। তাই সমাজ থেকে জুলুমকে উৎখাত করার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
২১ সেপ্টেম্বর (রবিবার) চট্টগ্রামের জি. ই. সি কনভেশন হলে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর আইন মেনে চলতে হবে এবং প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম করতে হবে, ইসলাম কায়েম করার জন্য জামায়াতবদ্ধ হতে হবে। আল-কোরআনের আলো কেবল নিজের ঘরে নয়, সংসদেও জ্বালাতে হবে। সর্বপ্রথম সংবিধান রচনা করেছেন মুহাম্মদ রাসূল(সা.)। আমাদের কোরআনকে বুঝে পড়তে হবে। শুধু খতম পড়ার জন্য কোরআন নাজিল হয়নি। কোরআনকে বুঝে সে অনুযায়ী আমাদের চরিত্র গঠন করতে হবে। যে ব্যক্তি কোরআন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে তার জীবন সংকীর্ণ হবে। ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়ে রাসূল(স.)কে জেলে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশে ইতিহাসে ৫৪ বছরে জাতীয় সংসদে কোরআনের আইন চালু হয় না। সে সংসদ আমরা মানি না। জুলাই বিপ্লবের ছাত্রদের দাবি জাস্টিস প্রতিষ্ঠিত হলে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে। আগামীতে সংসদকে আল্লাহর আইন দিয়ে পরিচালিত করতে হবে। ফ্যাসিস্টরা বিদায় হয়েছে এবং তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সোচ্চার থাকতে হবে। আজকে ফিলিস্তিনে নিষ্পাপ শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। অথচ বিশ্ববিবেক নিরব। তাদের উপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
মাহফিলে প্রধান ওয়ায়েজ ছিলেন- নাগাইশ দরবার শরীফের পীর সাহেব কুমিল্লা, অধ্যক্ষ মাওলানা মোস্তাক আহমদ ফয়েজী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, বিশেষ ওয়ায়েজ হিসেবে আলোচনা পেশ করেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এর প্রফেসর ড. বি. এম মফিজুর রহমান আযহারি।
প্রধান ওয়ায়েজীন অধ্যক্ষ মাওলানা মোস্তাক আহমদ ফয়েজী বলেন- দুনিয়াতে মানুষকে সৃষ্টি করে এমনিতে ছেড়ে দেননি। আল্লাহ তায়ালা এই বান্দা গুলোকে হেদায়েত করার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসুল প্রেরণ করেন। এই ধারাবাহিকতায় আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহর একাত্ববাদ ঘোষণা করার জন্য।
তিনি বলেন, এদেশ ১৯০ বছর ইংরেজরা শাসন করেছে। এর পর তারা আমাদেরকে ভাগ করে গেছেন, আমরা ১৯৭১ সালে এই দেশ যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন করেছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৪ বছর, কিন্তু দেশ এখনো শোষণ ও জুলুমের শিকার হচ্ছে জনগণ। সেই ইংরেজদের মতোই স্বৈরাচারী শাসন চালানো হচ্ছে, কিন্তু দেশে জনগণ এই স্বৈরাচরের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল। তাই এদেশ থেকে স্বৈরাচার পালাতে বাধ্য হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেন, আমাদের লালন-পালনকারী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। দুনিয়াতে আমাদেরকে তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। দুনিয়া চিরস্থায়ী জায়গা নয়, সকলকে মাটির নিচে কবরে চলে যেতে হবে। আর আল্লাহ তায়ালা হাশরের দিন বান্দার সরিষা পরিমাণ খারাপ কাজ করলে তার প্রতিদান দিয়ে দেবেন।
তিনি বলেন, প্রত্যেক যুগে আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন, যাতে পৃথিবীতে বান্দারা মুক্তির পথ পেতে পারেন। আর সকল নবী-রাসূলের মধ্যে সর্বশেষ নবী হচ্ছেন মুহাম্মদ (সা.)। আর আল্লাহর রাসূলের জীবন হচ্ছে কোরআন। আমরা যে কোরআন পড়ি তার বাস্তব ছবি হচ্ছে মুহাম্মদ (সা.)। আমরা সত্যিকার অর্থে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে চাই, তাহলে রাসূল (সা.) এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহর নবী যেভাবে কোরআনকে অনুসরণ করতে বলেছেন সেভাবে অনুসরণ করবো। রাসূল (সা.) তার সাহাবীদের কোরআনের আলোকে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, আমরাও তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার চেষ্টা করে যেতে হবে। দেশে কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করার জন্য জামায়াতে ইসলামী গ্রামে গ্রামে মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করছে। আমাদেরকে কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা জীবন দিয়ে আল্লাহর দেওয়া জীবন বিধান কায়েম করতে চাই। দেশের জনগণ সব মতবাদ দেখেছে এবার ইসলামকে দেখতে চায়, কোরআনের আইন চায়। আমরা সকলে আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা শাহজাহান বলেন, কোরআনের আদর্শ ছাড়া উত্তম সমাজ বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, তাই আমাদেরকে ইসলামের সুমহান আদর্শ চর্চার মাধ্যমে সুন্দর জীবন গঠনের জন্য কাজ করে যেতে হবে এবং আদর্শিক ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামের দাওয়াতকে সকল মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়ার আহবান জানান।
শাহজাহান চৌধুরী বলেন- শহীদ আল্লামা সাইদীর ফাঁসির রায় শুনে দেশের ২০০ মানুষ জীবন দিয়েছে। তিনি বলেন- এই দেশ উন্নত ও সম্বৃদ্ধশালী বানাতে চাই, তাহলে এই দেশে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে হবে। এই মাহফিল েেথকে চট্টগ্রামের মানুষকে জানাতে চাই, আমরা আর আকিদার ঠেলাঠেলি চাই না, সব ভেদাভেদ ভুলে আগামীতে ইসলামের বাংলাদেশ গড়তে চাই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ফাঁসি দিয়েছেন, প্রতীক ফেরত পেলাম, নিবন্ধন ফেরত পেলাম, প্রিয় নেতা এটি এম আজহারুল ইসলামকে ফিরে পেয়েছি। আমাদেরকে সুন্নতে রাসুলের উপর অটল থাকতে হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দদের আরও বেশি কোরআন ও হাদিসের উপর অটল থাকতে হবে। আমাদের হালাল-হারামের পার্থক্য করে চলতে হবে। তাহলে আগামী দিনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে একটি ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমীর পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় উক্ত মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, মোহাম্মদ উল্লাহ ও ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস, নগর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, চট্টগ্রাম মহানগরী শ্রমিক কল্যাণের সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সিরাতের আলোচনা করে কিয়ামত পর্যন্ত শেষ করা যাবে না। রাসূল (সা.) এর আলোচনা সব সময় আমাদেরকে করতে হবে, বুঝার চেষ্টা করতে হবে এবং এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তাঁর রেখে যাওয়া শিক্ষার আলোকে আমাদেরকে সারা জীবন চলতে হবে।
তিনি বলেন, মৌলিক ভাবে রাসূল (সা.) এর জীবনীর সবগুলো দিয়ে আমাদের জীবনের সাথে সম্পর্কিত আমাদেরকে কমপক্ষে তিনটি বিষয়ে রাসূল (সা.)-কে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহর রাসূল (সা.) কে ভালবাসতে হবে, রাসূল (সা.) কে অনুসরণ করা এবং আল্লাহ রাসূলকে চূড়ান্ত ফায়সালাকারী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, ডা. আবু নাসের, নগর কর্মপরিষদ সদস্য, ডা. মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, ড. মাহবুবুর রহমান, হামেদ হাসান ইলাহী, প্রফেসর সাইফুল্লাহ, আমির হোছাইন, মাহমুদুল আলম, ফখরে জাহান সিরাজী প্রমুখ।