৩ মার্চ ২০২৪, রবিবার, ৪:৪৩

সাহিবে নিসাব যাকাত দাতা সুধীদের নিয়ে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের সমাবেশ অনুষ্ঠিত

সম্পদের পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধি অর্জনের সর্বোত্তমপন্থা হলো যাকাত

-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, “যাকাত শীর্ষক আজকের এই সুধী সমাবেশটি মুসলিম প্রধান দেশের জনগোষ্ঠীর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আল্লাহর ঘোষণা, তাদের ধন সম্পদ থেকে সাদাকা (যাকাত) গ্রহণ করো, তা দিয়ে তাদের পরিচ্ছন্ন ও পরিশুদ্ধ করো। সুধীদের নিসাব, ভালোবাসা, দোয়ার সাথে আর্থিক সহযোগিতা আমরা পেয়ে থাকি। তাদের এই সহযোগিতার ফলেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সমাজের দুঃখী মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ পায়। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর পথে যে অর্থ ব্যয় করা হয়, ঐ সম্পদটুকুই ব্যক্তির নিজস্ব সম্পদ। বাকি সবকিছু অন্যের জন্য। আল্লাহর পথে ব্যক্তি যে সম্পদ ব্যয় করবে সেটাই পরকালে তার সুখের কারণ হবে। নামাজ রোজার মতই যাকাত আদায় করা একটি ফরজ ইবাদত। একজন মুসলমান হিসেবে নামাজ ও রোজার ফরজ বিধানকে আমরা সঠিকভাবে পালন করলেও যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যাকাত হলো সম্পদের পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধি অর্জন করার সর্বোত্তমপন্থা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপরে এ বিধান ফরজ করে দিয়েছেন। সুতরাং সম্পদশালী ব্যক্তিকে ঈমানদার হতে গেলে অবশ্যই সম্পদের যাকাত দিতে হবে। যাকাত অস্বীকারকারী কাফের হিসেবে গণ্য হবে, আর অস্বীকার না করলেও আদায় থেকে বিরত থাকলে তা কবীরা গোনাহ হিসেবে গণ্য হবে।”

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের উদ্যোগে ২মার্চ শনিবার রাতে সাহিবে নিসাব যাকাত দাতা সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন সদ্য কারামুক্ত কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। সাহেবে নিসাব এর পক্ষে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ। আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নানসহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, “যাকাত দরিদ্র ও হতবঞ্চিতদের হক। এই হক তাদের কাছে নির্ধারিত নিয়মে পৌঁছানো জরুরি। আমাদের সমাজে যাকাত আদায় খুবই গুরুত্বহীন ও উপেক্ষিত হয়ে পড়েছে। কেবলমাত্র শাড়ি-লুঙ্গি দিলে যাকাত আদায় হবে না। যথাযথ নিয়মে যাকাত আদায় না হলে আমাদেরকে কাল কেয়ামতের কঠিন দিনে গ্রেফতার করা হবে। সম্পদ কমে যাওয়ার আশংকায় অনেকে গরিমশি করে যাকাত দিতে চায় না, অথচ সম্পদের বারাকাহ পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে যাকাত। মানবতার সেবা ও সমাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে কুরআনের রাজ কায়েম করতে চাই। যখন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে তখন রাষ্ট্রের কাছে এই যাকাত আদায় ও বন্টণের দায়িত্ব ন্যস্ত হবে। তখন যাকাত ব্যবস্থাপনা সরকার-ই সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবে এবং পাওনাদাররা সুষ্ঠুভাবে এই যাকাত থেকে তাদের প্রাপ্য বুঝে পাবেন।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি সফল ইসলামী সমাজ বিনির্মানের স্বপ্ন দেখে। এদেশের সবুজ জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যাকাত দাতা ও সুধীদের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাদের সম্পদে বারাকাহ দান করেন। আপনাদের সহযোগিতায় জামায়াতে ইসলামী সমাজের দুঃখী মানুষের জন্য কিছু করার সুযোগ পায়। রাজধানীতে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দাতব্য চিকিৎসালয়, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, লাশ দাফন, রোগীর সেবা, বেকার নারী ও পুরুষদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন, তৃণমূল পর্যায়ে গরীব-দুঃখী মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সহ আরো অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ তারা হাতে নিয়েছে। যাকাতের নির্দিষ্ট ৮টি খাত বিবেচনায় রেখে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এই উদ্যোগকে সফল ও টেকসই করতে সাহিবে নিসাবগণকে আহ্বান জানাই। জামায়াতের এসব কার্যক্রমে আপনার যাকাত প্রদান করুন।”

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “ইসলামের ফরজ বিধান সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি বিধান হলো যাকাত। ইসলামের ৫টি স্তম্ভর মধ্যে তৃতীয় হচ্ছে এই যাকাত। যাকাতকে মাইনাস করে ইসলামকে কল্পনা করা যায় না। কোনো ব্যক্তির কাছে যদি সাহিবে নিসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদ এক বছর থাকে তাহলেই তার উপরে যাকাত ফরজ হয়। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ৮টি নির্দিষ্ট খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করতে হবে। সমাজসেবা বিভাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যাকাত দাতাদের কাছ থেকে যাকাত আদায় ও বন্টণের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করছে।

আজকে এখানে রাজধানী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সম্মানিত সাহিবে নিসাবগণকে একত্রিত করা হয়েছে। আপনারাই সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের সকল কাজে রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকেন। মহান আল্লাহ আপনাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন সেখান থেকে শুধু যাকাতই আদায় করবেন এমনটা নয় বরং ইকামাতে দ্বীনের বিজয়ে সাধ্য অনুযায়ী অর্থ সহায়তা দিয়ে ইসলামী আন্দোলনকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।”

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “সম্পদশালীদের সম্পদে হক রয়েছে যারা প্রার্থী তাদের। যারা বঞ্চিত তাদের হক রয়েছে। আজকে আমরা ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের বিগত বছরের সমাজকল্যামূলক একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেছি। যেখানে রাজধানী ঢাকা শহরের বসবাস করা অসংখ্য মানুষ উপকারভোগী হয়েছেন। অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে এই বছরে ব্যাপকভাবে মানুষের প্রয়োজনে আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরও ব্যাপকভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। এজন্য আপনার যাকাতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রদান করে অবদান রাখবেন সেই প্রত্যাশা করছি। আমাদের দেশে সাধারণত রমজান মাসেই বেশি যাকাত আদায় করার চিন্তা থাকে। এখানে বাড়তি কিছু বারাকাহ পাওয়ার আশাও রয়েছে। রমজানের ফজিলতের কারণে এক হতে সত্তর গুণ বেশি সওয়াব পাওয়ার বিষয়টিও থাকে। আপনাদের এ যাকাত যথাযথ বন্টনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত খাতে আমরা ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমরা আশা করি আপনারা নিজ অর্থ সম্পদের হিসাব করে এই রমজানের শুরুতেই যাকাত আদায়ের মত জরুরি ফরজ বিধান পালনে এগিয়ে আসবেন ইনশাআল্লাহ।”