৩০ জানুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ২:২৩

হাতিরঝিল অঞ্চলে জামায়াতের ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলন অনুষ্ঠিত

রাজনৈতিক ময়দানকে প্রতিপক্ষমুক্ত রাখার জন্যই আমীরে জামায়াতসহ জাতীয় নেতাদের কারারুদ্ধ করা হয়েছে

-এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের

সাময়িক সঙ্কটে হতাশ না হয়ে ইসলামী আদর্শকে ধারণ করে দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণে ময়দানে অকোতভয় সৈনিকের ভূমিকা পালনের জন্য ইউনিট দায়িত্বশীল সহ ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

আজ ৩০ জানুয়ারি রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের হাতিরঝিল অঞ্চল আয়োজিত এক ভার্চুয়াল ইউনিট দায়িত্বশীল শিক্ষা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও অঞ্চল পরিচালক হেমায়েত হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ও প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই দারসুল কুরআন পেশ করেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ প্রফেসর ড. আবুল কালাম পাটোয়ারী। বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য আমিনুল ইসলাম, নোমান আহমেদি, ইউসুফ আলী, আহসান উল্লাহ, খন্দকার রুহুল আমিন, আলাউদ্দিন ও কলিম উল্লাহ প্রমূখ। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশ করেন হাতিরঝিল সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীবৃন্দ।

এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “আওয়ামী লীগ ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্মম তামাশার আয়োজন করেছে। কথিত এ নির্বাচন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোন মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। আর এটিই হচ্ছে ফ্যাসিবাদী ও লুটেরাদের আসল চরিত্র। তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং আইনের শাসনকে ধ্বংস ও পদদলিত করেছে। অবৈধ সরকার রাজনৈতিক ময়দানকে প্রতিপক্ষমুক্ত রাখার জন্যই আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনসহ বিরোধী দলীয় হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আটক করে পুরো দেশকেই অঘোষিত কারাগারে পরিণত করেছে। তাই দেশকে ফ্যাসীবাদ ও স্বৈরাচার মুক্ত করতে সকলকে রাজপথের আন্দোলনের জোরদার করতে হবে।” তিনি অগণতান্ত্রিক সরকারের পতন ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠায় দলমত নির্বিশেষে সকলকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।

তিনি বলেন, “অপার সম্ভাবনার দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। আমাদের সম্পদের অভাব নেই। সবচেয়ে বড় সম্পদ আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠী। কিন্তু শ্রেণি ও গোষ্ঠী বিশেষের অবৈধ ক্ষমতালিপ্সা এবং সঠিক নেতৃত্বের অভাবে আমরা এসব সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করতে পারছি না। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ও চেতনা ব্যবসায়িদের কারণেই দেশ একটি অকার্যকর রাষ্ট্রের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু জামায়াত একটি গণমুখী, আদর্শবাদী ও কল্যাণকামী রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে দেশকে ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে দেশকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রাণান্তক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি দেশকে একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সর্বশক্তি নিয়ে রাজপথ ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান। অন্যথায় দেশ ও জাতির মুক্তি মিলবে না।”

আব্দুর রহমান মূসা বলেন, “মূলত; দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। সংগঠন আমাদেরকে আখেরাতে মুক্তির দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে। মানুষকে জান্নাতের পথে আহবান জানায়। তাই দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে জান ও মালের সর্বোচ্চ কোরবানীর মাধ্যমে সর্বাত্মক সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে।” তিনি দেশে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে সকলকে আত্মগঠন ও দাওয়াতি কার্যক্রম সম্প্রসারণের আহবান জানান।

ড. রেজাউল করিম বলেন, “চরিত্র ব্যক্তির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তাই চরিত্র মাধূর্য্য দিয়েই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে দাওয়াতি মিশন সফল ও স্বার্থক করে তুলতে হবে। সকল ক্ষেত্রেই মানুষকে আল্লাহর গোলামীর দিকে আহবান করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই দায়িত্ব দিয়েই নবী-রাসূলগণকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন।” তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সকলকে ময়দানে আপোষহীন থাকার আহবান জানান।

মাহফুজুর রহমান বলেন, “ইউনিটের মূল দায়িত্ব হলো দাওয়াত সম্প্রসারণ, কর্মী বৃদ্ধি, কর্মীদের মানোন্নয়ন ও সমাজকল্যাণমূলক কাজ করা। আমল ও আখলাকের এবং সকল কাজে আল্লাহর কাজে জবাবদিহি অনুভূতি সৃষ্টিই ইসলামী আন্দোলনে অন্যতম শিক্ষা।”

প্রফেসর ড. আবুল কালাম পাটোয়ারি বলেন, “ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে সময়র অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কোন অজুহাত না দেখিয়ে সংগঠনের জন্য বেশি বেশি সময় দেওয়া দরকার। খরচের ক্ষেত্রে সংগঠনকে সন্তান সমতূল্য মনে করতে হবে। তাহলেই দ্বীন বিজয়ের কাজ সহজ হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে হেমায়েত হোসাইন বলেন, “ইউনিট সংগঠনই হচ্ছে ইসলামী আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি। তাই প্রত্যেক ইউনিটকে আদর্শ ইউনিট হিসাবে গড়ে তুলতে পারলেই দ্বীনকে বিজয়ী করা সম্ভব হবে।”