৩ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:৪৭

চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের সীরাতুন্নবী (সাঃ) সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত

জেল-জুলুম নির্যাতনের পথ বেয়ে দ্বীনের বিজয় আনতে হবে-এটাই রাসূল (সাঃ) এর সীরাতের শিক্ষা

-মাওলানা এটিএম মাছু’ম

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছু’ম বলেন,রাসূলে করিম (সাঃ) এর সীরাত হচ্ছে আল কুরআনের সব বিধিনিষেধের সফল বাস্তবায়ন। জেল-জুলুম নির্যাতনের পথ বেয়ে দ্বীনের বিজয় আনতে হবে -এটাই রাসূল (সাঃ) এর সীরাতের শিক্ষা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত সিরাত সিম্পোজিয়ামে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও মহানগরী আমীর মুহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল সীরাতুন্নবী (সাঃ) সিম্পোজিয়ামে তিনি বলেন, আল্লাহ তার রাসুলকে (সাঃ) দুনিয়ার সকল বাতিল মতাদর্শের উপরে দ্বীনে হকের বিজয় নিশ্চিত করতে দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। মূলত,শেষ নবী রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একটি বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তুলে ছিলেন। বিশ্বকে যাবতীয় জুলুম-নির্যাতন অন্যায় অত্যাচার অবিচার এবং সব ধরনের অশান্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য এবং সে উদ্দেশ্যে তিনি তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে একটি বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তুলেন।

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধকার ছিলেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড.আবু বকর রফিক আহমদ, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তবিদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম মহানগরীর নায়েবে আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ওলামা-মশায়েখ পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি অধ্যক্ষ ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আবু নোমান।

ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছু’ম বলেন, মানবজাতির ইতিহাসে সম্পূর্ণভাবে ডুবন্ত একটি জাতিকে ২৩ বছরের মাঝে একটি আদর্শ জাতিরূপে গড়ে তোলা সহজ ব্যাপার ছিল না। পৃথিবীতে বহু আন্দোলন গড়ে উঠার পর কিছুদিন সেই আন্দোলনের তৎপরতা দুনিয়াবাসী লক্ষ্য করেছে। একটা পর্যায়ে জনগণ সেটা গ্রহণ না করায় সেটা আবার ইতিহাসের খোরাকে পরিণত হয়েছে। মানুষ সেটাকে ভুলে গিয়েছে। কিন্তু রাসুল (সাঃ) যে বিপ্লবী আন্দোলন শুরু করেছিলেন সেটি মাত্র ২৩ বছরের মাথায় কীভাবে সফল হলেন এ বিষয়টি আমরা যারা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য, দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য আন্দোলন করছি তাদের পরিষ্কার জানা থাকা দরকার। তিনি বলেন, আমরা যদি রাসুল (সাঃ) দেখানো পথের আদলে গড়ে উঠতে না পারি তাহলে হাজার বছর আন্দোলন করলেও সফলতার মুখ দেখব না। তিনি আরও বলেন, মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পিছনে চার প্রকার মূলধন সক্রীয় ছিল। দ্বীন বিজয়ের আন্দোলনে সফল হতে হলে সেই আন্দোলনকে এই চার ধরনের মূলধন সংগ্রহ করতে হবে। মূলধন ছাড়া যেমন ব্যবসা হয় না, ব্যবসায় সফলতা আসে না তেমনি ইসলামী আন্দোলন একটি ব্যবসা। এই ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলনে চার প্রকারের মূলধন অবশ্যই অর্জন করতে হবে। যদি এই জায়গায় এসে ভুল হয় তাহলে ভুলের মধ্যে সব অর্জন বৃথা হয়ে যাবে।

প্রধান অতিথি এটিএম মাছু’ম বলেন, প্রথম মূলধন হচ্ছে একজন আদর্শ নেতা প্রয়োজন। দুনিয়ার যেকোনো আন্দোলনে যিনি প্রধান। যার সত্তার মাঝে আদর্শের বাস্তব প্রতিফলন ঘটে।

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) অতি পরিচিত, উচ্চ বংশীয় মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। রাস্তাঘাট থেকে উঠে এসে তিনি বিপ্লবের ডাক দেননি। তিনি তার আদর্শ থেকে বিন্দু মাত্র পিছপা হননি। তার মহানুভবতা, ধৈর্য, প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ, মহান হৃদয়, মন্দের জবাব ভালো ব্যবহার দিয়ে দেয়া, সবসময় মানুষের কল্যাণ করা, মানুষের কল্যাণে চিন্তা করা। এমনি কী দুশমনের পাশেও দাঁড়াতে দেখতে পাই।

চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর মো: শাহজাহান বলেন, মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একটি সার্বজনীন আদর্শের প্রবক্তা ছিলেন। নির্দিষ্ট কোন ভুখন্ড বা নির্দিষ্ট ভাষাভাষীর দায়িত্ব নিয়ে তিনি দুনিয়ায় আসেননি। সমগ্র মানবতার মুক্তি ও কল্যাণ সাধনের দায়িত্ব নিয়েই পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনি দ্বীনের পরিপূর্ণ বিজয়ের জন্য এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। প্রিয় নবী ইসলামী বিপ্লবের স্থপতি ছিলেন। ইসলামী বিপ্লবের তিনি সর্বকালের লিডার ছিলেন। আর কেউ ছিলো না, আর কেউ নেই, কেউ থাকতে পারে না। তার কাছা কাছিও থাকতে পারে না। সকল যুগে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যারা স্বপ্ন দেখে তারই পদাঙ্ক পরিপূর্ণভাবে সবাইকে অনুসরণ করতে হবে, বিকল্প কোন পথ খোলা তাদের জন্য নেই। কোন বাহ্যিক চাকচিক্য দিয়েও এই পথের সফলতা আনয়ন করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) মানুষের চিন্তার পরিশুদ্ধির জন্য কাজ করেছিলেন। তিনি নৈতিক এবং চারিত্রিক বিপ্লব সাধন করেছিলেন। তিনি চারিত্রিক বিপ্লব দিয়েই সমাজকে বিমোহিত করেছিলেন এবং মানুষকে আকৃষ্ট করেছিলেন। ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান তা তিনি প্রতিষ্ঠিত করে প্রথিবীর ইতিহাসে মদিনার ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেছিলেন। রাসূল (সাঃ) তার কর্মসূচির বিশুদ্ধতা, যুগ উপযোগিতা পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী যখন যা গ্রহণ করা প্রয়োজন সেই পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করেছিলেন। নেতৃত্ব সূলভ মহান গুণাবলী এই বিপ্লব সফল করার পিছনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল। এছাড়াও তার সাংগঠনিক দক্ষতা এবং আহবানের বাস্তব কৌশল তিনি যেটি প্রয়োগ করেছিলেন এই বিপ্লব সফল হওয়ার পিছনে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এছাড়াও তিনি এবং তার সঙ্গী সাথী যারা ছিলেন আল্লাহ প্রদত্ত বিধানকে তারা আংশিকভাবে নয় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে ছিলেন। নিফাক আমরা তাদের জীবনে দেখতে পাই না। যাদের মধ্যে নিফাক ছিল তারা এই কাফেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এই পবিত্র কাফেলার তাদের স্থান ছিলো না। তারা ঝরে পড়েছিল, ছাটাই হয়ে গিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, শাহাদাতের রক্তে প্লাবিত এই জমিন! এখানে দ্বীনের দুশমনেরা টিকতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ। দিন শেষে এখানে আল্লার দ্বীনি বিজয় হবে এ কারণেই আমাদেরকে হতাশ হওয়া যাবে না নিরাশ হওয়া যাবে না। আমাদের নিখাঁদ ঈমানের অধিকারী হতে হবে, রাসূলুল্লাহর সাহাবীদের শেখানো পথেই আমাদের এগুতে হবে। জালিম শাহীর নির্যাতনের কঠিন স্তর অতিক্রম করে মহামহিম আল্লাহর নাম নিয়েই আমাদের মঞ্জিলে পৌঁছার চুড়ান্ত চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। চরম মুহর্তে সাহাবীদের ন্যায় আহাদ আহাদ ধ্বনিই যেন আমাদের একমাত্র সম্বল হয় এই প্রত্যাশাই যেন সবার জীবনে অনুরণিত হয়। ড. আবু বকর রফিক আহমদ বলেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তিনি যেমন ছিলেন ইনসানে কামেল তথা পরিপূর্ণ মানুষ, তেমনই ছিলেন একজন পরিপূর্ণ আদর্শ যুবক। পৃথিবীতে যত ভালো গুণ আছে, এর সব গুণের সমাবেশ ঘটেছিল একজন মুহাম্মদ (সা:) এর মধ্যে।

অধ্যাপক মুফিজুর রহমান বলেন, মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী সম্পর্কে কোন কুলকিনারা নেই। এর গভীরতার কোন তলদেশ নেই। তার জীবন অসীম নয়, তবে সৃষ্টি তার প্রান্তসীমা খোঁজে পাবে না।

নায়েবে আমীর ও সিরাত উদযাপন কমিটি চট্টগ্রাম মহানগরীর আহবায়ক ড.আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ বলেন, রাসুল (সাঃ) এর ২৩ বছরের জীবনী সংগ্রাম, সাধনা, ত্যাগ তিতিক্ষা এবং আল্লাহর দ্বীনের উপর সাক্ষী দেওয়ার একটির পর একটি নমুনা।

নায়েবে আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, রাসুল (সাঃ) এর সাথে উলুল আজমের একটা বিশেষ বিষয় সম্পর্কিত। সেই বিষয় আরও ফোকাস করতে হবে। সারা বিশ্বে আজ মূল ধারার ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা নির্যাতিতত। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর নায়েবে আমীর ও সীরাতুন্নবী (সাঃ) উদযাপন কমিটির আহবায়ক ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন,সহকারী সেক্রেটারী মুহাম্মদ উল্লাহ, এফএম ইউনুস ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী।