১১ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:২০

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তাব

*আওয়ামীলীগ দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে

*ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সভা সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়ঃ

“বাংলাদেশের জনগণের দৃষ্টি এখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে। বিগত ১৫ বছর যাবৎ দেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। আওয়ামীলীগ দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। গত ১৫ বছরে বর্তমান সরকার তাদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা প্রমাণ করেছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা সকলেই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উপলব্ধি করছেন এবং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবী জানাচ্ছেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সূচনা থেকেই বলে আসছে যে, দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপক্ষ ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকেও বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

ইতোমধ্যেই গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রতিনিধিগণ ঢাকায় অবস্থান করে বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন মহলের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন।

বর্তমান সরকার জনমতের কোনো তোয়াক্কা না করে দলীয় সরকারের অধীনে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল আয়োজন সম্পন্ন করতে ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে আবারও নীল-নকশার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার চক্রান্ত করছে। দেশের জনগণ সরকারকে একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনের আর কোনো সুযোগ দিবেনা। দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল এবং জনগণ আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

জামাায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ লক্ষ্য করছে যে, সরকার জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পরিবর্তে সারাদেশে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা দায়েরসহ নানাভাবে হয়রানি চালিয়ে যাচ্ছে। উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভের পরও আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সাবেক এমপি জনাব শাহজাহান চৌধুরীকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রেখেছে। তাঁরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন প্রাপ্ত হয়ে কারাগার থেকে বের হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে তাদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দিয়ে সরকার মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। সরকারের এ তৎপরতা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বড় অন্তরায়। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সরকারের এ সকল তৎপরতা বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ মনে করে, জনগণের ভোটাধিকার পুনর্বহাল এবং সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশকে একটি অনিবার্য সংঘাত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে না দিয়ে, একগুঁয়েমী এবং হঠকারিতা পরিহার করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার গণদাবী মেনে নিয়ে দেশকে বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধারের পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।”