১ মার্চ ২০২১, সোমবার

মহান স্বাধীনতার ৫০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য

হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ভুলে ঐক্যবদ্ধ হই- ডা. শফিকুর রহমান

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আ’লা রাসূলিহীল কারীম


প্রিয় দেশবাসী

  • আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
  • বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৫০তম বর্ষে পদার্পনের সুযোগ পেয়ে আমি মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে লাখো শুকরিয়া আদায় করছি।
  • আমি আমার প্রিয় দেশবাসীকে আমার ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
  • স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষে পদার্পনের এই মুহূর্তে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল শহীদ ও সম্মানিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাদের বীরত্ব, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা প্রিয় জন্মভূমির স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
  • বিশেষভাবে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জনাব শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে।
  • আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম, সাবেক আমীরে জামায়াত ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা, মীর কাসেম আলীকে যারা ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে আজীবন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন তাদের শাহাদাত কবুল করুন।
  • সেই সাথে স্মরণ করছি শায়খুল হাদীস মাওলানা এ কে এম ইউসুফ ও পাঁচ বারের নির্বাচিত সাবেক এমপি হযরত মাওলানা আবদুস সুবহানসহ যারা দীর্ঘদিন সরকারি নির্যাতনের শিকার হয়ে কারাগারেই ইন্তিকাল করেছেন। আমি আরও স্মরণ করছি অধ্যাপক এ কে এম নাজির আহমাদকে; যিনি দীর্ঘদিন নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিক যন্ত্রনা নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।
  • আমি শ্রদ্ধার সাথে আরও স্মরণ করছি বিশ্ব বরেণ্য মুফাসসিরে কুরআন ও সাবেক এমপি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জনাব এ টি এম আজহারুল ইসলামকে যারা সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর যাবত কারাগারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
  • সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিরোধী দলের হাজার-হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে মাসের পর মাস জেলখানায় আটকিয়ে রাখা হয়েছে। বহু সংখ্যক নেতা ও কর্মীকে ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে হত্যা করা হয়েছে। 
  • সুবর্ণ জয়ন্তীতে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ বিরোধী দলের সকল নেতা-কর্মীদের মুক্তি দেওয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

প্রিয় দেশবাসী,

  • মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা, বেঁচে থাকার অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তি।
  • জনগণের প্রত্যাশা ছিল তারা তাদের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা পাবে, নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, ইজ্জত ও সম্মান নিয়ে বেচে থাকার গ্যারান্টি পাবে, সভা-সমাবেশ, চলাফেরা ও কথা বলার অধিকার পাবে। দুঃখের বিষয় আমরা সবকিছু হারাতে বসেছি।

৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন

  • একথা অনস্বীকার্য যে বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক কিছু অর্জন করেছে। আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। একটি পতাকা।
  • একথা অনস্বীকার্য যে বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক কিছু অর্জন করেছে। আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। একটি পতাকা।
  • আমাদের সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ বাহিনী সারা বিশ্বে দেশের সুনাম ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছে।
  • জনগণের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় শিল্প ব্যবসা, বাণিজ্য, ব্যাংক বীমা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সমৃদ্ধি ঘটেছে।
  • প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক গতি সঞ্চার করেছে।
  • মালিক ও শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গার্মেন্টস শিল্প অর্থনীতির প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে।
  • কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করেছে।

রাজনৈতিক অধিকারের অনিশ্চয়তা

  • উল্লেখিত অর্জনগুলোর পাশপাশি সুবর্ণ জয়ন্তীর শুভ লগ্নে আমরা আমাদের অবস্থানের নির্মোহ বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই অর্ধ শতাব্দীর দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশ একটি অধিকার হারা জাতিতে পরিণত হয়েছে।
  • রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। বর্তমান সরকার সে দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হয়েছে।
  • স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ নেই। মিছিল-সমাবেশসহ সকল রাজনৈতিক কর্মসূচি কার্যত নিষিদ্ধ।

নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস
*আজ বাংলাদেশে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই।
*নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের প্রতি মানুষের আর কোন আগ্রহ নেই, গণতন্ত্রের জন্য এটি অশনি সংকেত।

বিভেদ ও অনৈক্য

  • বিগত ৫০ বছরেও জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেনি।
  • প্রতিহিংসা, ইর্ষা, পরস্পরকে দোষারোপ, নির্মূল, উৎখাত ও উচ্ছেদের রাজনীতি জাতিকে বিভক্ত করে রেখেছে।

শিক্ষা

  • বিগত ৫০ বছরেও জাতীয় আদর্শ ও আপামর জনগণের বিশ্বাস এবং চেতনার ভিত্তিতে কোন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেনি।
  • প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার পরিবর্তে আদর্শহীন শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জীবনে উষালগ্নেই নৈতিকবোধ অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
  • দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাজনৈতিক ক্যাডার বাহিনীর বিচরণক্ষেত্র বানানো হয়েছে। শিক্ষা, গবেষণার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আজ সরকারী দলের ক্যাডারদের টর্চার সেলে পরিণত হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপাত্তা আইন

  • যে দেশের বীর সন্তানেরা ‘ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য ভাষা আন্দোলন এবং জাতির মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সে দেশে স্বাধীন মত প্রকাশ ও কণ্ঠরোধ করার জন্য বারবার অপচেষ্টা চালানো হয়। এই আইন তার অন্যতম খারাপ নজির।
  • সম্পাদক পরিষদ, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, সকল বিরোধী দল ও বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এ আইন পাস না করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। সকলের মতামত অগ্রাহ্য করে আইনটি পাস করা হয়। মত প্রকাশের কারণে জেলে আটক রাখার মানবাধিকার পরিপন্থী এই আইনের মাধ্যমে সংবাদ কর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের নির্যাতনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য

  • দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে স্বাস্থ্য খাত ভয়াবহ বিপর্যয়ে নিপতিত।
  • কোভিড-১৯ এর কারণে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির খন্ড চিত্র জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। প্রকৃত চিত্র অনেক ভয়াবহ।
  • সরকারের অনীহা, অদক্ষতা, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা উপকরণ না থাকায় করোনা ভাইরাসে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবা নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীগণ ব্যাপকভাবে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হন। করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতি করে মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।

আইন শৃংখলা পরিস্থিতি

  • মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
  • হত্যা-খুন-গুম-অপহরণ-নারী-শিশু নির্যাতন ও বিচার বহির্ভূত হত্যার শংকায় গোটা জাতি উদ্বিগ্ন উৎকন্ঠিত।
  • রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অপরাধ দমনের পরিবর্তে রাজনৈতিক দলসমূহকে দমনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
  • স্বাধীনতার ৫০ বছরে ধর্ষণ আজ ভয়ঙ্কররূপ লাভ করেছে।
  • আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত দাগী খুনীদের রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্ষমা করে দেয়ায় অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

অর্থনৈতিক পরিস্থতি

  • জনগণের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছিল। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বত্রই একটি গতির সঞ্চার হয়েছিল।
  • দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
  • ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ার বাজার লুট, ডেসটিনি, হলমার্ক, কেসিনো কেলেঙ্কারী ইত্যাদি অর্থনীতিতে কলঙ্কজনক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
  • বিদেশে মুদ্রা পাচার দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে।
  • বাংলাদেশের মানুষের কষ্টে অর্জিত রিজার্ভ ফান্ডের টাকা চুরির ঘটনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। যা সারাবিশ্বে বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করেছে।
  • স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর সময় ১৮০টি রাষ্ট্রের মধ্যে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম।

কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি

  • বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। আবহমান কাল থেকে কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
  • বাংলাদেশের পাটকে একসময় সোনালী আঁশ বলা হতো। পাট রপ্তানী করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতো। সরকারী অবহেলা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি সেই পাট শিল্প আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এক একে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সকল পাটকল ও চিনিকল।

বিচারাঙ্গন

  • গোটা বিচারাঙ্গণের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
  • সরকার তার ইচ্ছামত আদালতকে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। তার ব্যতিক্রম হলেই সরকারের রোষানলে পড়তে হচ্ছে বিচারকদের।
  • নিম্ন আদালতগুলো আজ সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিনা বিচারে দিনের পর দিন কারাগারে বন্দী জীবন-যাপন করছেন অনেক নিরীহ মানুষ।
  • রাজনৈতিক বিষয়সমূহ আদালতে টেনে নিয়ে বিচারাঙ্গনকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র তার পুরো উল্টো।

অপসংস্কৃতির সয়লাব

  • সংস্কৃতির নামে বিদেশী অপসংস্কৃতিকে জোরপূর্বক জাতির ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে।
  • বিদেশী সংস্কৃতি আমাদের যুব সমাজের চরিত্রকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

সীমান্ত হত্যা

  • ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকাটা ছিল স্বাভাবিক।
  • বিগত ৫০ বছরে ভারতের সাথে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইস্যুরই সমাধান হয়নি।
  • ভারতীয় সীমান্তে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশীদেরকে হত্যা করা হচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা

প্রিয় দেশবাসী ভাই ও বোনেরা,

  • আমাদের প্রিয় জন্মভূমি অপার সম্ভাবনার একটি দেশ। জামায়াতে ইসলামী এ দেশকে ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। এ লক্ষ্যেই জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে।
  • দেশের প্রতিটি ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বোপরি জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভূমিকা রেখে চলছে।

অবাধ নির্বাচনের লক্ষে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা

  • বাংলাদেশের বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করে অবাদ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সর্বপ্রথম জামায়াতে ইসলামী ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময় কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব জাতির সামনে উপস্থাপন করে।
  • কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
  • ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য ২০১১ সালে সরকার জনগণের মতামতকে অগ্রাহ্য করে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। মূলত এখান থেকেই নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের কার্যক্রম শুরু হয়।

জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনমুখী দল

  • জামায়াতে ইসলামী মনে করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন।
  • জামায়াতে ইসলামী মনে করে সত্যিকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন।

মন্ত্রণালয় পরিচালনা

  • ২০০১-২০০৬ মেয়াদে জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী প্রথম দুই বছর কৃষি ও পরবর্তী তিন বছর শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
  • সততা-দক্ষতা-স্বচ্ছতার সাথে মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে তারা বাংলাদেশে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেন।

বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার

  • জামায়াতে ইসলামী স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সূচনালগ্ন থেকেই আন্দোলন করে আসছে।
  • আইনাঙ্গনে ন্যায়, ইনসাফ ও মানবাধিকার এবং বিচারের সুষ্ঠু পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য জামায়াতে ইসলামী গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে আসছে।

স্বাস্থ্য সেবা

  • জামায়াতে ইসলামী দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।
  • সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী স্বাস্থ্য সেবায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে। সর্বোচ্চ সামর্থ নিয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে জামায়াত।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা

  • জামায়াতে ইসলামী ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যা, ১৯৯১ সালের জলোচ্ছাস, টর্নোডো, সাইক্লোন, সিডর, আমফানসহ প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষের পার্শে দাঁড়িয়েছে। বন্যা ও মঙ্গা কবলিত এলাকায় জামায়াতে ইসলামী সাধ্যমত ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছে।
  • বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহত, আহত অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত, নৌকাডুবিসহ নানা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের পুনর্বাসনে জামায়াতে ইসলামী সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সামাজিক কার্যক্রম

  • অসহায় দরিদ্র মানুষের আর্থিক সহায়তা, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, বিয়ে-শাদী, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, মশক নিধন অভিযান, রোগীর পরিচর্যা, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, মেডিকেল ক্যাম্প, ভ্রাম্যমান স্কুল, মক্তব, টেকনিক্যাল সেবা, বৃক্ষরোপন অভিযান, দুর্যোগকালীন সহায়তা প্রদান, ত্রাণ বিতরণ, মাতৃত্বকালীন সেবা প্রদান, বেকারদের কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিভিন্ন রকম সামাজিক কর্মকাণ্ডে জামায়াতে ইসলামী ভূমিকা পালন করছে।

ইসলামী রাজনীতির বিকাশ

  • বাংলাদেশের অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামী আদর্শভিত্তিক রাজনীতির সূচনা করে।
  • জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক তৎপরতায় দেশের আলেম ওলামা, ইসলামী ব্যক্তিবর্গ, ইসলামের রাজনীতির গুরুত্ব উপলব্ধি করেন।
  • ইসলামকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা দেশবাসীর মনে আশার সঞ্চার করে। লক্ষ্য বাস্তবায়নে জামায়াতে ইসলামী আদর্শবান ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব তৈরী করছে।

ইসলামী ও জাতীয় ঐক্য

  • জামায়াতে ইসলামী দেশের দেশপ্রেমিক ও সকল ইসলামী দলসমূহ, সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম-ওলামা, ইসলামা চিন্তাবিদ, লেখক, গবেষক, ওয়ায়েজীন, মুফাসসির, মসজিদের ইমাম ও খতিবসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে নিয়ে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

যুব সমাজের চরিত্র গঠন

  • যুবকরাই একটি দেশের চালিকা শক্তি।
  • আমাদের দেশের যুবসমাজকে অন্যায় অশ্লিলতা, নগ্নতা, অপসংস্কৃতির সয়লাব, মাদকের ছোবল থেকে উদ্ধার ও রক্ষার জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ সংশোধনীমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জামায়াতে ইসলামী।
  • জামায়াতে ইসলামী যুবসমাজের চরিত্র গঠন, নৈতিক প্রশিক্ষণের কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।

স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায়

  • জামায়াতে ইসলামী দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে।
  • জামায়াতে ইসলামী কর্মীগণ স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্ররস্তুত।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে

  • জামায়াতে ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, ইসলামী সংগঠন, ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও সরকার এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
  • দেশে দেশে নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
  • বিশেষ করে কাশ্মীর, ফিলিস্তিনে মুসলিম গণহত্যা, আফগানিস্তানে বিদেশী আগ্রাসন, বসনিয়া, চেচেনিয়ায় মুসলিম নির্যাতন, আলজেরিয়ায় গণহত্যা, আসামে মুসলিম নির্যাতন, ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস, বার্মায় মুসলিম হত্যা, চীনের উইঘুর মুসলিম নির্যাতনসহ বিশ্বের প্রতিটি ঘটনায় জামায়াতে ইসলামী তার অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করেছে। বার্মা থেকে বিতাড়িত মজলুম রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশে দাঁড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

অমুসলিমদের অধিকার

  • জামায়াতে ইসলামী অমুসলিমদের ধর্মীয় ও নাগরিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তাদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে।
  • অমুসলিমদের উপাসনালয় ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-ঘর যাতে নিরাপদ থাকে সে জন্য জামায়াতে ইসলামীর কর্মীগণ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ বিশেষ সময়ে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করেছে।

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে

  • জামায়াতে ইসলামী সূচনালগ্ন থেকেই সকল প্রকার সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করে আসছে।

দেশ ও মানুষের কল্যাণে জামায়াতে ইসলামীর গঠনমূলক তৎপরতা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে-ইনশাআল্লাহ।

সম্মানিত দেশবাসী

  • জামায়াতে ইসলামী তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় সংগঠন পরিচালনা ও গণমানুষের কল্যাণে রাজনীতি করে আসছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও সকল ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান করছে।
  • জামায়াতে ইসলামী জনগণের ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন, ত্যাগ-কুরবানীর বিনিময়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বর্তমান পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। শহীদদের চূড়ান্ত কুরবানী, জেল-জুলুম-নির্যাতন এ আন্দোলনকে মজবুত ও বেগবান করেছে।

প্রিয় দেশবাসী ভাই ও বোনেরা,

  • বাংলাদেশ আমাদের সকলের। এদেশে যেসব সমস্যা বিরাজমান সেগুলোর সমাধান সকলে মিলে করতে হবে। এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা আমাদের সকলের দায়িত্ব। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের শপথ হবে ‘বিভেদ নয় ঐক্যের’ মাধ্যমে দেশকে গড়ে তুলতে হবে।
  • বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হওয়া সত্ত্বেও শত প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে রাজপথে প্রতিবাদ মুখর থেকেছে। আগামী দিনেও সবাইকে সাথে নিয়ে জামায়াতে ইসলামী দেশ গড়ার রাজনীতি অব্যাহত রাখবে ইনশাআল্লাহ।

তাই ক্ষমতাসীনসহ সকল রাজনৈতিক দল ও মহলের প্রতি আমাদের আহবান, আসুন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এ ঐতিহাসিক মুহূর্তে দেশের বৃহত্তর কল্যাণে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সুস্থ ও গঠনমূলক রাজনীতির চর্চা করি। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ভুলে গিয়ে দেশের আলেম-ওলামা, শিক্ষক-সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র-যুবক, শ্রমিক-কৃষক ও সকল শ্রেণী পেশার মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হই। সুখী সমৃদ্ধশালী ইনসাফপূর্ণ বাংলাদেশ গঠনে হাতে হাত ধরে এগিয়ে যাই। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সহায় হোন। আমীন।।

আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সকল অধ:স্তন শাখাসমূহকে নিম্নোক্ত কর্মসূচি পালন করার আহবান জানাচ্ছিঃ
১. সংগঠনের সর্বস্তরে তৃণমূল পর্যায়ে মিছিল/র‌্যালি করা।
২. ৫০ বছরের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি এবং দেশ গঠনে জামায়াতের ভূমিকা আলোচনা ও সেমিনারের মাধ্যমে জনগণের সামনের তুলে ধরা।
৩. স্মারক ও বুকলেট প্রকাশ করা।
৪. বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে উপহার প্রদান এবং অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহ সংস্কার ও নির্মাণে সহযোগিতা প্রদান।
৫. অসচ্ছল বীর মু্িক্তযোদ্ধাদের সহায়তা, সন্তানদের শিক্ষা উপকরণ প্রদান, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা, রোগীর সেবা, করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা, কন্যা দায়গ্রস্তদের বিয়ে ও আত্নকর্মসংস্থানে সহযোগিতা প্রদান করা।
৬. অসহায়, এতিম, পথশিশু ও দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ।
৭. ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও রক্তদান কর্মসূচি পালন করা।
৮. বছরব্যাপী- রচনা, ক্বেরাত, আজান, হামদ-নাত ও দেশাত্নবোধক গান ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
৯. ছাত্র, যুবক, শ্রমিক ও সাংস্কৃতিক বিভাগের মাধ্যমে খেলাধুলা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং এর মাধ্যমে সুস্থ সংস্কৃতি তুলে ধরা।
১০. দেশের স্বাধীনতার জন্য যাঁরা নিঃস্বার্থভাবে সংগ্রাম করেছেন, জীবন দিয়েছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাঁদের জন্য এবং প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হেফাজতের জন্য পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে দো’য়া করা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সকল স্তরের সংগঠনসমূহকে উক্ত কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পালন করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা যাচ্ছে। কর্মসূচিগুলো সর্বাত্নকভাবে পালন করার জন্য সম্মানিত দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করছি।

আল্লাহ হাফিজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জিন্দাবাদ।