বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
মাহে রমাদান উপলক্ষ্যে সদস্য ও কর্মীদের উদ্দেশ্যে সম্মানিত আমীরে জামায়াতের নির্দেশনা
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আশাকরি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবানীতে সুস্থতার সাথে দ্বীনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বর্ষপরিক্রমায় রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে সিয়ামের মাস ‘রমাদান’ আবারো আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ্। আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের জন্য মাহে রমাদান মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নিয়ামত। এ মাসে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে কল্যাণের সকল দরজা খুলে দেয়া হয় এবং অকল্যাণের পথসমূহ সংকুচিত করে দেয়া হয়। গোটা সৃষ্টিকূলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আনুগত্যের অনুকূল ভাবধারা গড়ে উঠে।
রমাদান তাকওয়ার মাস, ধৈর্যের মাস, ত্যাগের মাস, গরীব-দুঃখী ও ক্ষুধাকাতর মানুষের কষ্ট অনুভব করার মাস, বেশী বেশী সদাকা করে আত্মশুদ্ধি ও সম্পদকে পরিশুদ্ধ করার মাস। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিশ্ববাসীর হেদায়াতের জন্য এ মাসেই নাযিল করেছেন মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। এ মাসের মধ্যেই রয়েছে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাত ‘লাইলাতুল কদর’। মাহে রমাদানে প্রতিটি আমলের বিনিময় অন্য মাসের চেয়ে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়।
সংগ্রামী ভাই ও বোনেরা,
মাহে রমাদান মুসলমানদের জন্য ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২য় হিজরী সনের ১৭ই রমাদান সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক ‘বদরযুদ্ধ’। তিনগুণের অধিক সৈন্যের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে আল্লাহ তায়ালা বিজয় দান করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, ইসলামের বিজয় সংখ্যা নয় বরং নৈতিক ভিত্তির উপর নির্ভরশীল। তাই এ মাসে আত্মশুদ্ধি ও আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে, বর্তমান প্রতিকূল অবস্থায় দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উন্নত নৈতিক গুণাবলী অর্জন করে ঈমানের পরিপূর্ণতা লাভে অগ্রগামী হতে হবে।
সম্মানিত ভাই ও বোনেরা,
মাহে রমাদানের একটি মাস মুমিনদের জন্য আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে ঘোষণা করেছেন-
১. “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যে রূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার” -(সূরা আল বাকারা- ১৮৩)।
২. “রমাদান মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে আল কুরআন- মানব জাতির পথপ্রদর্শকরূপে, হেদায়াতের সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণরূপে এবং হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী হিসেবে” -(সুরা আল বাকারা- ১৮৫)।
৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি (সিয়ামরত অবস্থায়) মিথ্যা কথা এবং অন্যায় কাজ ও আচরণ পরিহার করে না, তার পানাহার বর্জন করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই” -(সহীহ আল বুখারী)।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
ফযিলতপূর্ণ ও মহিমান্বিত মাহে রমাদানে আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত করণীয় বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি-
ক. অধ্যয়ন:
১. আল কুরআন: ৩০তম পারা (তাফহীমুল কুরআন ১৯ খন্ড), সম্ভব হলে পুরো কুরআন অন্তত ১ বার অর্থসহ তেলাওয়াত করা।
২. আল হাদীস: তাহারাত, সালাত, সিয়াম, জিহাদ ও আখিরাত সংক্রান্ত অধ্যায়।
৩. ইসলামী সাহিত্য: নামাজ-রোজার হাকীকত, হেদায়াত, কুরআন রমযান তাকওয়া এবং কবীরা গুনাহ বই।
৪. তা’লিমূল কুরআন: সহীহ তেলাওয়াত অনুশীলন ও ব্যাপকভাবে কুরআন শিক্ষা দান করা।
৫. মৌলিক বিষয়ে বাছাইকৃত আয়াত ও হাদীসসমূহ মুখস্ত করা।
খ. অনুশীলনমূলক:
১. পরিবার-পরিজন, সহকর্মী ও পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে সিয়াম পালন ও ইফতার করা।
২. জামায়াতের সাথে ফরজ সালাত ও তারাবীহ আদায় করা।
৩. কিয়ামুল লাইল বা সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায়, তিলাওয়াতে কুরআন, সার্বক্ষণিক জিকির ও দান-সদকা করা।
৪. সাংগঠনিকভাবে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা।
৫. মাহে রমাদানের আবহকে কাজে লাগিয়ে দাওয়াতী কাজ, জনশক্তি বৃদ্ধি, মানোন্নয়ন ও সাংগঠনিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা।
৬. সম্ভব হলে ই’তিকাফ পালনের চেষ্টা করা।
৭. জুলুমের অবসান, দেশের জনগণ এবং মুসলিম উম্মার ঐক্য ও সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করে দোয়া করা।
সম্মানিত ভাই ও বোনেরা,
মাহে রমাদানে ধনীদের জন্য বাড়তি আরেকটি ইবাদত হলো যাকাত। যাকাত হলো ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদত ও দারিদ্র নিরসনে অর্থনৈতিক শক্তির অন্যতম উৎস। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যাকাতের অর্থ নির্ধারিত ৮টি খাতে যথাযথভাবে ব্যয় করে থাকে। সাহিবে নিছাবগণ যাকাতের অর্থ (রুকনগণ তাদের ব্যক্তিগত যাকাতের ৫০%) সংশ্লিষ্ট শাখার ফান্ডে জমা দিবেন।
মাহে রমাদান মুমিনের জন্য আল্লাহ পাকের বিশেষ উপহার। সুতরাং এ মাসের প্রতিটি মুহুর্ত আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য ব্যয় করার পূর্ণ প্রস্তুতি এখন থেকেই গ্রহণ করা প্রয়োজন। আসুন! উল্লেখিত নির্দেশনার আলোকে কাজগুলো বাস্তবায়নে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন, সকল নেক আমল কবুল করুন। মাহে রমাদান থেকে যথার্থ ফায়দা হাসিলের তৌফিক দান করুন, আমীন॥
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী