১ ডিসেম্বর ২০১৮, শনিবার, ৫:৪৩

নির্বাচনের প্রভাবে কমেছে পোশাক রপ্তানির অর্ডার

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি না হলেও অজানা এক আশঙ্কা থেকে ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশনের (ইউডি) পরিমাণ কমে গেছে। পোশাক রপ্তানির অর্ডার বা আদেশ কমিয়ে দিয়েছে ক্রেতারা। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইউডি কমেছে আগের বছরের তুলনায় ১৪৫টি বা প্রায় ৩ শতাংশ। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, পোশাক রপ্তানির অর্ডার কমেছে নাকি বেড়েছে তার চিত্র পাওয়া যায় ইউডি সনদের হিসাব থেকে। ইউডি সনদ হলো- কাঁচামাল আমদানির অনুমতি বা ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) সনদ। কোনো উদ্যোক্তা ক্রেতা থেকে রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর ওই সংখ্যক পণ্য তৈরিতে যে পরিমাণ কাপড়, সুতা বা অন্যান্য কাঁচামাল শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেন সেটাই ইউডি সনদ। ইউডি দেয়ার পরিমাণ বাড়লে রপ্তানি অর্ডার বৃদ্ধি হয়েছে ধরা হয়।
আর কমলে রপ্তানি অর্ডার কমেছে বলে হিসাব করা হয়। সরকারের পক্ষে বিজিএমইএ এই সনদ দিয়ে থাকে।

উদ্যোক্তারা বলেন, ইউডি কমার অর্থ হলো ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে ক্রেতাদের মাঝে আশঙ্কা কাজ করছে। আগের বছরের ওই অভিজ্ঞতার আলোকে অনেকেই রপ্তানি অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন। পর্যবেক্ষণ করছেন বায়াররা।
বিজিএমইএ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ইউডি কমেছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ। গত বছরের এই তিন মাসে উদ্যোক্তারা ইউডি নিয়েছেন ৬ হাজার ৯১৯টি। এ বছরের তুলনায় গত তিন মাসে এ সংখ্যা ৬ হাজার ৭৭৪টিতে নেমে এসেছে। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য তিন মাসে ইউডি কমেছে ১৪৫টি। গত তিন মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। এই প্রবণতা অনুযায়ী, ইউডি কমে যাওয়ার পরিবর্তে বরং কমপক্ষে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল।

গত জাতীয় নির্বাচনে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এ ছাড়া দুই বছর আগে হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছিল। ওই সময় পোশাক খাতের ক্রেতারা ঢাকায় আসেন নি। অনেক ক্রেতা রপ্তানি আদেশ বাতিল করেছেন। কোনো কোনো ক্রেতা অন্য দেশে রপ্তানি অর্ডার নিয়ে গেছেন। ওই সব ক্রেতা অনেকেই আর বাংলাদেশে ফেরেন নি। সেই অভিজ্ঞতা আছে ক্রেতাদের। এবার নির্বাচনী পরিবেশ স্থিতিশীল থাকলেও কিছুটা আশঙ্কা কাজ করছে তাদের মাঝে। যদি কোনো কিছু সৃষ্টি হয় তখন সময় মতো পণ্য বুঝে পাওয়া যাবে না। এ কারণে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশ কমে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, আগামী কয়েক মাসের রপ্তানি আয়ে সেই চিত্র দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আপাতত রপ্তানি আয়ে সেই চিত্র নেই। কারণ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে আগেভাগেই যত বেশি সম্ভব পণ্য বুঝে নিয়েছেন ক্রেতারা। এ কারণে গত দুই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে রেকর্ড পরিমাণ আয় এসেছে। এ ছাড়া সামনে বড়দিন থাকায় প্রতিবছর এ সময় রপ্তানি বেশি হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। নির্বাচনের আগে-পরে সহিংসতায় শতাধিক লোক নিহত হয়। হরতাল-অবরোধ চলে টানা ৪৫ দিন। এ সময় অনেক পণ্য স্টকলটের শিকার হয়। অর্থাৎ দেরির কারণে পণ্য নিতে ক্রেতাদের অস্বীকৃতির কারণে স্থানীয় বাজারে সামান্য দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন উদ্যোক্তারা। ওই সময় অস্থিতিশীলতায় বিশ্বব্যাংকের হিসাবে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১১ হাজার কোটি টাকা। গবেষণা সংস্থা সিপিডির হিসাবে, পোশাক খাতের আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল ১ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা।

এবার নির্বাচনকে ঘিরে সেরকম পরিস্থিতি হবে না বলে মনে করেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, গতবারের মতো রাজনৈতিক পরিবেশ এবার হবে না। এবার নির্বাচনকে ঘিরে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হবে না। রপ্তানি বাণিজ্যে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে আশা করেন তারা।
বিজিএমইএ সহ-সভাপতি এসএম মান্নান বলেন, এবারের নির্বাচনে সব দলই অংশ নিচ্ছে। ফলে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে কোনো কোনো ক্রেতার আশঙ্কার বিষয়ে উদ্যোক্তারা তাদের আশ্বস্ত করছেন।

 

http://mzamin.com/article.php?mzamin=147539