১ ডিসেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১২:৪৫

নির্বাচনে জনগণ যাতে হেরে না যায়

নির্বাচনের মাত্র একমাস বাকি। বেগম খালেদা জিয়া ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এটা এখন নিশ্চিত। আর এ নির্বাচন ‘পর্যবেক্ষণ করতে হবে মূর্তির মতো।’ এ কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশনের খোদ মাননীয় সচিব। এখন বোঝেন কেমন হবে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নিক সচিবের কথায় অনেকে বিস্মিত। কেউ কেউ ক্ষুব্ধ। আবার এ নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে বাণী ঝেড়েছেন। মশকরা করেছেন। কিন্তু কী লাভ এসব করে? বরং এমন কর্মকাণ্ড নিজকে হেয় করবার শামিল বলে গণ্য হতে পারে।

যাই হোক, নিক আমাদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। দেশ ও জাতির পরিচালক নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে হয় এ প্রতিষ্ঠানটিকে। এখান থেকে কিছু নির্দেশিত হলে তা যেমন আমাদের সবারই মেনে চলা আবশ্যক, ঠিক তেমনই নিক থেকে এমন কোনও হাস্যকর নির্দেশনা বা বক্তব্য দেয়া উচিত নয়, যা দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত ও বিব্রত করতে পারে।
একটা আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, নিক সচিবের ‘মূর্তির মতো পর্যবেক্ষণ’ বিষয়ক নির্দেশনা শেষপর্যন্ত পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় আমাদের সবার ওপরেই প্রযোজ্য না হয়ে যায়! তবে এসব আশঙ্কা অমূলক হোক এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বলে রাখা ভালো, ইলেকশন নিয়ে এতো ঝক্কিঝামেলা আগে ছিল না। আর নির্বাচন পর্যবেক্ষণও খুব বেশি দিনের ঘটনা নয়। এইতো ১৯৯১-এর নির্বাচন এবং এর আগেরগুলোতে পর্যবেক্ষণের কথা শোনা যায়নি। আমাদের দেশে এর শুরু গত শতকের শেষ দশকে, ১৯৯৫-এর জানুয়ারিতে ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং এলায়েন্স সংক্ষেপে ‘ফেমা’ গঠন এবং এর কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে। আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণও খুব বেশি দিনের কথা নয়। আগে সাধারণত কূটনীতিকরাই তাঁদের মূল্যায়ন নিজদেশের সরকারগুলোকে জানিয়ে দিতেন। ব্যস। কোনও অবজারভার প্রেরণের ব্যাপার ছিল না।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক পরিসরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ শুরু হয় ইউরোপে ১৯৯০ সালে প্যারিস চার্টারের মাধ্যমে। এরপর জাতিসংঘ ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নীতিমালা নির্ধারণ করে। ডিক্লারেশন অব প্রিন্সিপ্যালস ফর ইন্টারন্যাশনাল ইলেকশন অবজারভেশন এন্ড কোড অব কনডাক্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইলেকশন অবজারভারস নামের এ নীতিমালাই হচ্ছে বিশ্বের স্বীকৃত মানদ- ও নীতিমালা।

বাংলাদেশের নিক স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের জন্য গত বছর একটি নীতিমালা ঘোষণা করে এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য আলাদা আরেকটি নীতিমালা ঘোষণা করে এবছরই। এ দুই নীতিমালার মধ্যে কিছু বিষয়ে মিল যেমন আছে, তেমন অমিলও আছে। তবে কোনওটিতেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হিসেবে স্বীকৃত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নীতিমালার উল্লেখ নেই। সেটি আমাদের বর্তমান নিকের আমলারা পড়ে দেখেছেন কি? অবশ্য কমিশনের সচিব পদটিতে যেভাবে সরকারের আস্থাভাজনদের পদায়নের ঐতিহ্য তৈরি হয়েছে, তাতে নির্বাচনের আইনকানুন বা বৈশ্বিক মানদ-গুলোর দিকে তাঁদের দৃষ্টি দেবার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। নিকের সচিব মহোদয় ‘পর্যবেক্ষণ করতে হবে মূর্তির মতো’ মন্তব্যটি করেছেন স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে। হয়তো দেশীয় পর্যবেক্ষকেরাই তাঁর বক্তব্যের লক্ষ্য ছিলেন। তবু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য গৃহীত জাতিসংঘ নীতিমালার ১৬ নম্বর ধারার বক্তব্যটি দেশীয় পর্যবেক্ষকদের অধিকার নির্ধারণেও বিশেষভাবে গুরুত্ববহ। ওতে বলা হয়েছে, ‘নাগরিকদের তাঁদের দেশের সরকারি এবং জনশাসনবিষয়ক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ও যুক্ত হওয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অধিকার রয়েছে। এসব অধিকার নির্বাচন এবং সেই সম্পর্কিত প্রক্রিয়াগুলো পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত বেসরকারি সংগঠনগুলোর মাধ্যমে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে ভোটকেন্দ্র, গণনাকেন্দ্র ও অন্যান্য নির্বাচনবিষয়ক কেন্দ্রের ভেতরে ইলেকট্রনিক এবং অন্যান্য নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির কার্যক্রম, ব্যালট এবং অন্যান্য স্পর্শকাতর সামগ্রীর পরিবহণ পর্যবেক্ষণও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। দেশীয় নির্দলীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং পর্যবেক্ষণ সংগঠনগুলো অন্যায় নিষেধাজ্ঞা বা হস্তক্ষেপ ছাড়া এবং কোনও ধরনের বৈষম্যের শিকার না হয়ে তাঁদের কাজ করতে পেরেছেন কি না, সেই রিপোর্টও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মূল্যায়ন করা উচিত। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উচিত দেশীয় নির্দলীয় পর্যবেক্ষকদের অবাধে এবং অন্যায় নিষেধাজ্ঞা ছাড়া পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিতে সুপারিশ করা।’

পর্যবেক্ষকদের জন্য নিকের প্রকাশিত নীতিমালা এবং সংবাদমাধ্যমে পাওয়া সচিবের বক্তব্যের বিবরণ থেকে বোঝা যায়, কমিশনের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ধারণাটি অপূর্ণ বা খ-িত। নিকের নির্দেশনা মূলত ভোটের দিন এবং ভোটকেন্দ্রবিষয়ক। অথচ ভোটের দিনটি নির্বাচনপ্রক্রিয়ার একটি অংশমাত্র। নির্বাচনপূর্ব পরিবেশ, নির্বাচনের প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক বিশ্বাস, জাতিধর্ম-গোত্রনির্বিশেষে সবার অবাধে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ, সরকার বা নিরাপত্তাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনও ধরনের বাধা সৃষ্টি বা হস্তক্ষেপমুক্ত প্রচার, সভা-সমাবেশ আয়োজনের ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ, ভোটের অধিকার, গণমাধ্যমের ভূমিকা এসব পর্যবেক্ষণও পর্যবেক্ষকদের দায়িত্বের অংশ। পর্যবেক্ষকেরা ভোটের আগেও সময়ে সময়ে এসব বিষয়ে তাঁদের মতামত এবং সুপারিশ যেমন কমিশনে পেশ করতে পারেন, তেমনই জনসাধাণের মাঝেও এসব তুলে ধরতে পারেন। কমিশন এগুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করে আসছে।
জানা গেছে, দেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন বহনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ওপর তেমন নির্দেশনা নেই। একাধিক নির্দেশনায় দেশি পর্যবেক্ষকদের কাজের ক্ষেত্র সীমিত করে দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে তাঁদের যাবার সুযোগ নেই। আবার তাঁরা একই ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণের পুরোটা সময় থাকতে পারবেন না। ভোটকেন্দ্রেও তাঁরা দর্শকের ভূমিকার বাইরে কিছু করতে পারবেন না। কোনও অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলার ছবিও তুলতে পারবেন না। স্পষ্টতই এসব পর্যবেক্ষকের স্বাধীনভাবে কাজ করবার সুযোগ ও অধিকারকে মারাত্মকভাবে সংকুচিত করবে। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) গত ১২ অক্টোবর প্রকাশিত প্রাকনির্বাচন মূল্যায়নে বলেছে, কমিশনের অনেক বিধান পর্যবেক্ষকের অধিকারের ওপর অন্যায় নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরিপন্থি।

কমিশন এনডিআইয়ের রিপোর্ট ও সুপারিশ বিবেচনায় নিয়েছে বলে মনে হয় না। এনডিআই বলেছে, বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে তাদের কাছে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী পর্যবেক্ষকদের তালিকা চেয়েছে এবং পর্যবেক্ষকেরা আইন প্রয়োগকারীদের কাছ থেকে টেলিফোনে হুমকি পেয়েছেন। নির্বাচন কর্মকর্তাদের তালিকা ধরে পুলিশের অনুসন্ধান চালানোর খবর স্মরণ করলে পর্যবেক্ষকদের উদ্বেগ খাটো করে দেখবার অবকাশ নেই।
বলা বাহুল্য, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের লক্ষ্য নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করা নয়। এ দেশে তার নজিরও নেই। ভোটগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হবার মতো কিছু করা পর্যবেক্ষণের মৌলিক নীতির পরিপন্থি। পর্যবেক্ষকেরা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বাইরে বিচ্ছিন্নভাবে মন্তব্য করতে পারেন না, করেনও না। তবে কমিশনে রিপোর্ট করাই তাঁদের একমাত্র কাজ নয়। কমিশনে দেয়া রিপোর্টের মূল্যায়ন তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই গণমাধ্যমে প্রকাশ করবেন। ভোটগ্রহণ শেষ হলে তার একটি প্রাথমিক মূল্যায়ন এবং পরে চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রকাশের রীতিও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কমিশন তা নিষিদ্ধ করতে পারে কি? 
নিকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে। নিক নিজের ঘোষিত নীতিমালা নিজেই অনুসরণ করছে না। নীতিমালায় আছে, নিবন্ধিত পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করতে হলে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার অভিযোগ করেছে, তাদের সে সুযোগ না দিয়ে এনজিও অধিদফতরে নিবন্ধন না থাকবার অজুহাতে পর্যবেক্ষকের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এনজিও অধিদফতরে অধিকারের নিবন্ধন নবায়নের আবেদন রাজনৈতিক কারণে অনিষ্পন্ন থাকবার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আপত্তি জানালে কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা তাদের স্বাধীন ভূমিকার পরিচায়ক নয়।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অংশগ্রহণের বিষয়টিতে অবশ্য স্বাগতিক দেশ হিসেবে সরকার এবং নিকের আগ্রহই প্রধান। কমিশন এবং পররাষ্ট্রসচিবের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে গত ১৮ নভেম্বর। অথচ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের জাতিসংঘ নীতিমালা অনুযায়ী প্রথম শর্তই হচ্ছে নির্বাচন আয়োজক দেশের আমন্ত্রণ। সেই আমন্ত্রণ কাদের, কবে জানানো হয়েছে, সে বিষয়ে কিছুই প্রকাশ করা হয়নি। জাতিসংঘ নীতিমালায় বর্ণিত ডজনখানেকের বেশি শর্তপূরণে স্বাগতিক দেশ রাজি না হলে কোনও বিদেশি পর্যবেক্ষক পর্যবেক্ষণে যান না। এসব শর্তের মধ্যে তাঁদের স্বাধীনভাবে কাজ করবার অধিকার নিশ্চিতের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

জাতিসংঘ নীতিমালায় স্পষ্টতই বলা আছে, কোনও অগণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেবার ধারণা তৈরি করতে পারে, এমন পর্যবেক্ষণ মিশনে কোনও সংস্থারই অংশগ্রহণ করা উচিত নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণও এটিই ছিল। যদিও রাজনৈতিক বিবেচনায় কিছু ভারতীয় পর্যবেক্ষক সেবার হাজির ছিলেন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর বিষয়ে প্রস্তুতির অভাবের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বিতর্কে আমরা জেনেছি, এই সিদ্ধান্তের অন্যতম কারণ আলোচ্য নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হবার ধারণা। কমনওয়েলথ এবং অন্য কোনও আন্তর্জাতিক জোট বা সংস্থার পর্যবেক্ষক পাঠানোর সম্ভাবনাও সময়ক্ষেপণের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষীণ হয়ে পড়ছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হবার যেসব আলামত দেখা যাচ্ছে, সেই পটভূমিতে প্রশ্ন উঠতেই পারে, সরকার এবং কমিশন কি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের দূরে রাখবার কৌশল অবলম্বন করছে? অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজনে অক্ষমতা আড়াল করা ব্যতীত ‘মূর্তি’র প্রয়োজনটা কী?

নিক সচিব নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থেকে পর্যবেক্ষণ করবার নির্দেশ দিয়েছেন। কোনও ছবি তোলা যাবে না। অনিয়ম দেখলেও কোনও প্রমাণ রাখা যাবে না। তাহলে পর্যবেক্ষকের প্রয়োজন কোথায়? 
নিকে আগে অনেক সচিব কাজ করেছেন। তাঁরা সবাই সরকারি কর্মকর্তা। বর্তমান সচিবের মতো তাঁরা কেউ মিডিয়ায় এতো কথা বলেননি। কথা বলতেন কোনও নির্বাচন কমিশনার। দেখা যাচ্ছে, সচিব সাহেব নিক সদস্যদের, এমনকি সিইসিকেও ডিঙ্গিয়ে নিজের কন্ট্রাকচুয়াল ডিউটি সম্পন্ন করে যাচ্ছেন। তিনি কার এবং কীসের ঠিকাদারি নিয়েছেন তা উপলব্ধি করতে সচেতন জনগণের অসুবিধে হবার কথা নয়। 
আমরা মনে করি, নিক সচিবের এমন সমালোচনা করে কোনও কাজ হবে না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিরোধী জোটের দাবি মেনে নিয়ে কয়েকশ' কর্মকর্তার বদলি করা হয়তো সম্ভব নয়। তবে ন্যূনপক্ষে দিগম্বর সচিবকে নিক সচিবালয় থেকে বিদায় করা জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায় নির্বাচন যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, তেমনই নিকের এ পর্যন্ত যে ভাবমর্যাদা অবশিষ্ট আছে তাও উবে যেতে পারে। আরেকজন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের যথাযথ ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিদ্বন্দ্বী কোনও না কোনওপক্ষের পরাজয় হবেই। তবে জনগণের যেন পরাজয় না হয়।’ এটাই প্রণিধানযোগ্য কথা।
আমরাও মনে করি, নির্বাচনে জনগণ তথা ভোটাররা যাতে হেরে না যান। অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলো তথা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা মহাজোট জিততে পারে। হারতেও পারে। বিএনপি'র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট কিংবা ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জিততে পারে। আবার হারতেও পারে। নির্বাচনের খেলায় অংশ নেয়া পক্ষগুলোর হার-জিত অবধারিত। কিন্তু জনগণের হার বা পরাজয় আমাদের কারুর কাম্য নয়। জনগণ মানেই জাতি। জনগণের হেরে যাবার মানে একটা জাতির হেরে যাওয়া। এ কথা আমাদের সবার মনে রাখা উচিত।

http://www.dailysangram.com/post/355445