২৯ নভেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১১:৫৫

ইতিহাসের কথা মনে পড়ে যায়

অনেক সময় ইতিহাসের কিছু কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে বৃটিশ শাসনের কথা, স্বাধীনতা আন্দোলনের কথা। বেনিয়া ইংরেজরা যখন রাজদন্ড গ্রহণের সুযোগ পেল, তখন থেকেই আমরা প্রবেশ করি এক অন্ধকার যুগে। ঔপনিবেশিক শাসন কখনো গণবান্ধব হয় না। তার বড় প্রমাণ নীল চাষ এবং নীল করদের অত্যাচার। দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীল দর্পণ’ নাকট সেই সময়ের সমাজচিত্রের এক বড় দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা বলে থাকি, সাতচল্লিশে এই উপমহাদেশ ইংরেজ মুক্ত হয়েছে। ’৭১ সালে এই দেশ পাকিস্তানী শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে। আসলেই কি আমরা মুক্ত হয়েছি? ইংরেজরা কি এই জনপদে তাদের মানস সন্তানদের রেখে যায়নি?

রাজনৈতিক অঙ্গনে কি তারা ভেদ-বিভেদের কৃষ্ণরেখা টেনে যায়নি? তাদের ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ পলিসির চাতুর্য এখনো উপ-মহাদেশের রাজনীতিতে লক্ষ্য করা যায়। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বৈরি সম্পর্কের বীজ কি তারা বপন করে যায়নি? যার বিষফল এখনো লক্ষ্য করা যাচ্ছে এই উপমহাদেশে। কাশ্মীর যার প্রতীকি উদাহরণ।
আমরা গৃহে শান্তি চাই, দেশে শান্তি চাই, শান্তি চাই আমাদের উপমহাদেশেও। উপ-মহাদেশ আসলে অনেক দূরের বিষয় নয়। উপমহাদেশের অশান্তির অভিঘাত এসে লাগে আমাদের গৃহেও। তাই উপমহাদেশে শান্তির বাতাবরণ আমাদের কাম্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে আছে ভারত-পাকিস্তানের বৈরী সম্পর্ক। এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক লক্ষণ দেখা দিলে আমরা খুশি হই। তবে তেমন চিত্র খুবই বিরল। তেমনি একটি বিরল সংবাদ বিবিসি পরিবেশন করেছে নবেম্বরের ২৩ তারিখে।
খবরে বলা হয়, ভারতের শিখ তীর্থযাত্রীদের জন্য পাকিস্তানের কর্তারপুর গুরুদুয়ারা দরবার সাহিব-এ যাতায়াতের ব্যবস্থা আরও সহজ করতে সীমান্তে নতুন রাস্তা নির্মাণে সম্মত হয়েছে নয়াদিল্লী ও ইসলামাবাদ। দুই দেশই নতুন করিডোর নির্মাণে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। গুরুনানকের ৫৫০তম জন্ম বার্ষিকীকে সামনে রেখে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হলো। উল্লেখ্য যে, কর্তারপুর গুরুদুয়ারা দরবার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের নারোয়াল জেলায় অবস্থিত। সীমান্ত ঘেঁষা এই জায়গাটি শিখদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। ভারতীয় শিখরা প্রতিবছর সীমান্ত পেরিয়ে গুরুনানকের হাতে তৈরি এই পবিত্র স্থানে উপস্থিত হন। ১৫২২ সালে এটি তৈরি হয়। জীবনের শেষ ১৮ বছর এখানেই কাটিয়েছেন গুরুনানক। বর্তমানে শিখ তীর্থ যাত্রীদের পাকিস্তানে যেতে ভিসা প্রয়োজন হলেও তাতে কোনো বাধা নেই। যে কেউ কর্তারপুরের গুরুদুয়ারায় যেতে পারেন।

শিখরা বছরে চারটি অনুষ্ঠানে কর্তারপুরে যান। তবে শিখদেরকে সারা বছর গুরুদুয়ারায় যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এবার একটি রাস্তা নির্মাণে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে অনুরোধ জানানো হয়। পাকিস্তান সে অনুরোধে সাড়া দেয়। দিল্লী জানিয়েছে, ভারতের অংশে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পর্যন্ত নতুন রাস্তা নির্মাণে পুরো তহবিল তারা দেবে। পাকিস্তান জানিয়েছে, তারাও একই কাজ করছে। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী এই সিদ্ধান্তকে দুই দেশের ‘শান্তি স্থাপনজনিত প্রচেষ্টার জয়’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আমরাও দেশ দু’টির মধ্যে শান্তি প্রচেষ্টার বিজয় চাই। চাই এমন প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতাও। কারণ, ওদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে তার একটা সুবাতাস পুরো উপ-মহাদেশেই বইবে।

শান্তি প্রসঙ্গে সঙ্গত কারণেই বিশ্বনবীর কতা এসে যায়। আর রবিউল আউয়াল মাসে বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (স.) সম্পর্কে আলোচনা একটু বেশিই হয়ে থাকে। শুধু যে মুসলমানরাই আলোচনা করে থাকেন তা নয়, অন্য ধর্মের মানুষরাও এতে যোগ দেন। এমন এক আলোচনায় অংশ নিয়ে ভারতের হিন্দু ধর্মগুরু পন্ডিত শ্রী আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণ বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। একজন সন্ত্রাসী কখনোই মুসলিম হতে পারে না। যে ধর্মের নবী সহিংসতা পছন্দ করেন না সে ধর্মের অনুসারীরা সন্ত্রাসী হতে পারে না।
পন্ডিত প্রমোদ কৃষ্ণ আরো বলেন, ইসলামের নবী মোহাম্মদ (স.) শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, হিন্দুদের জন্যও তিনি এক উজ্জ্বল আদর্শ। অনুষ্ঠানে তিনি হিন্দি ভাষায় একটি নাতও পরিবেশন করেন। যার মর্মবাণী হলো- মোহাম্মদ যেমন তোমাদের তেমন আমাদেরও। মুসলমানদের সালাম দেওয়ার রীতির প্রশংসা করে পন্ডিত প্রমোদ কৃষ্ণ বলেন, মুহাম্মদ (স.) মুসলমানদের পরস্পরের সাক্ষাতে সালামের প্রচলন করেছেন। আর সালামের অর্থ হলো, আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। পন্ডিত প্রমোদ কৃষ্ণ ইসলামের শান্তির বাণীকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন। তবে বর্তমান সময়ে মুসলমানরা ইসলামের শান্তির বাণীকে যথাযথভাবে তুলে ধরছেন কিনা সেই প্রশ্ন জাগতেই পারে।

হিন্দু ধর্মগুরু বলেছেন, মুহাম্মদ (স.) শুধু মুসলমানদের নয়, হিন্দুদেরও। মুহাম্মদ (স.) আসলে এসেছেন সমগ্র মানব জাতির জন্য। আর আমরা এ কথাও জানি যে, স্রষ্টা মুহাম্মদ (স.)কে পুরো সৃষ্টিজগতের জন্য পাঠিয়েছেন রহমত হিসেবে। তবে প্রশ্ন জাগে, নবীর উম্মত হিসেবে মুসলমানরা এখন নিজেদেরকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতের উদাহরণ হিসেবে কতটা তুলে ধরতে পারছেন? মুসলমানরা কি এখন পথ হারিয়ে ফেলেছে? আসলে অন্যের অন্ধ অনুকরণের মধ্যে মুক্তি নেই।

http://www.dailysangram.com/post/355180