৮ নভেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ২:২৭

রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতায় অর্থনীতিতে উদ্বেগ

সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ

সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া এবং রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা অর্থনীতিতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সঞ্চয়পত্র থেকে অর্থবছরের তিন মাসে সরকার যে ঋণ নিয়েছে তা সারা বছরে এ খাত থেকে ঋণের অর্ধেক। কিন্তু যে খাত থেকে সরকারের অর্থ যোগান আসার কথা সেখান থেকে কাক্সিক্ষত মাত্রায় অর্থ আসছে না। এই খাতটি হচ্ছে রাজস্ব খাত। গত তিন মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ে প্রধান খাত ভ্যাটখাতে তিন মাসে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা রাজস্ব কর্তৃপক্ষের চিন্তা বাড়িয়ে তুলছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যে বছরের বাদবাকি সময় রাজস্ব আয়ের ঘাটতি আর পূরণ করা সম্ভব হবে না। অর্থনীতির এই দুই চিত্রে রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা গতকাল জানিয়েছেন, ব্যাংকের আমানতের সুদের হার কমে যাওয়ার কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। এই প্রবণতা গত দুই বছর থেকেই চলছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়া মানে এই খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণও বাড়ছে। অধিকাংশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১০ শতাংশের বেশি। কিন্তু ব্যাংকের আমানতের সুদের হার ৫ থেকে ৬ শতাংশ। তাই মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য। এতে করে সরকারের ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে, যা বাজেট ব্যবস্থাপনার ওপর নিঃসন্দেহে একটি চাপ সৃষ্টি করছে। অন্য দিকে রাজস্ব ঘাটতিও বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন এই সময়ে রাজস্ব আদায়ের জন্য করদাতাদের ওপর তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা আশা করছি, আগামী ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়ে যাবে। অন্য দিকে আগামী বছরের শুরুর দিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমানোর জন্য এ খাতের সুদের হার কমানোর বেশ সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মোট ২২ হাজার ২৫৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি। মোট বিক্রি হওয়া এই ২২ হাজার ২৫৬ কোটি টাকার মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৮ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এই হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪১২ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা সংগ্রহ নির্ধারিত রয়েছে সরকারের। এই অর্থের পুরোটাই সরকারের ধার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ হিসাবে মাত্র তিন মাসেই সঞ্চয়পত্র থেকে ল্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি অর্থ ধার করে ফেলেছে সরকার। এর ফলে অর্থবছর শেষে দেখা যাবে শুধু সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যা কি না সরকারের ব্যয় অনেক বাড়িয়ে তুলবে।

ও দিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। বিগত পাঁচ অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকে এনবিআরের রাজস্ব আহরণে গড়ে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা মাত্র ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। রাজস্ব আহরণের বৃহৎ খাত মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট থেকে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে দশমিক ৮৭ শতাংশ। প্রথম তিন মাসে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ২২ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। কিন্তু আহরণ করা সম্ভব হয়েছে ১৭ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। একই সময় শুল্ক খাতে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্য ছিল ১৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ১৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। আদায় ঘাটতি রয়েছে ৪ হাজার ৩ কোটি টাকা। আয়কর খাতে তিন মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় করা সম্ভব হয়েছে ১৩ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এ অবস্থা চলতে থাকলে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব ঘাটতি ৩৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/363045/