৪ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার, ২:৫৪

সরকারি ব্যাংকগুলো মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ

নেতিবাচক প্রভাব ব্যাংকিং খাতে; আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যয় বাড়ার শঙ্কা

ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন মতে, গত বছরের জুনে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণের হার ছিল প্রায় ৭ শতাংশ। চলতি বছরের জুনে তা কমে নেমেছে ২ শতাংশে। এতে সামগ্রিক হার কমে ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ থেকে নেমেছে ১০ শতাংশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকারি ব্যাংকগুলো কাক্সিক্ষত হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারায় সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যাংকিং খাতের ওপর। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ব্যাংকিং খাতের জন্য রোডম্যাপ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৫ সালে দেয়া এ রোডম্যাপ অনুযায়ী চলতি বছরের মধ্যে ব্যাংকিং খাতকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সাড়ে ১২ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করার কথা। ইতোমধ্যে চার বছরের সময়সীমা শেষ হতে চলছে। কিন্তু রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুনে মূলধন সংরক্ষণ হয়েছে ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ হারে। ওই সময়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণের হার ছিল প্রায় ৭ শতাংশ। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণ হয়েছে ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ হারে। চলতি বছরের জুনে সামগ্রিক মূলধন সংরক্ষণ হয়েছে ১০ শতাংশ হারে। যেখানে সরকারি ব্যাংকগুলোর ২ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১২ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক এ জন্য প্রধান বাধা হিসেবে দেখছে সরকারি ব্যাংকগুলোকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আশঙ্কা, রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তি ব্যয় বেড়ে যাবে।

সূত্র জানিয়েছে, রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে ঊর্ধ্বমুখী খেলাপি ঋণকে। আর এ খেলাপি ঋণের আধিক্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোর চেয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর বেশি। এ কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। ফলে মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো। এর প্রভাব পড়েছে গোটা ব্যাংকিং খাতের ওপর।

মূলধন সংরক্ষণের এ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলতি বছর শেষে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো মূলধন সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কাছে চলে গেছে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আগামী দুই মাসের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি উন্নতি হওয়া সম্ভব নয় বরং ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা ও নির্বাচনের কারণে সরকারি ব্যাংকসহ সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ না কমে বেড়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রভিশন ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারলে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে। এর অন্যতম হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে ব্যয় বেড়ে যাবে। কারণ, মূলধন ঘাটতি থাকলে ব্যাংকিং খাতের রেটিং খারাপ হবে। পণ্য আমদানিতে দেশীয় ব্যাংকগুলোর গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। ফলে থার্ডপার্টি গ্যারান্টির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করতে হবে। এতে ব্যয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাবে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/362208