৪ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার, ২:৩২

সংলাপের পর আরও বেপরোয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে অনুষ্ঠিত সংলাপের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে মনে করছে বিরোধী রাজনীতিক দলগুলো। তাদের অভিযোগ, সংলাপে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এখন থেকে সভা-সমাবেশসহ রাজনীতিক কর্মসূচিতে কোনো বাধা থাকবেনা। একইসাথে বিরোধী নেতাকর্মীদের অযথা আটক বা হয়রানিও করা হবেনা। কিন্তু সংলাপের পর থেকে গত তিন দিন দেশব্যাপী বিরোধী নেতাকর্মী গ্রেফতারের সংখ্যা যেন আগের থেকে বেড়েই চলেছে। অবস্থা এমন যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা ও গ্রেফতার থেকে মহিলারা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছেনা। বিএনপি বলছে, সরকার একদিকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছে, বিরোধী নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হবেনা বলে বক্তব্য দিচ্ছে। অথচ চিত্র হচ্ছে সম্পূর্ণ তার বিপরীত। দলটির নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ মুখে যা বলে করে তার উল্টোটা। এদের কখনোই বিশ্বাস করা যায়না। জানা গেছে, গত তিনদিন সারাদেশে দুই হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। দায়ের করা হয়েছে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা। যার আসামী সংখ্যা কয়েক লাখ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার খুব ভয়ের মধ্যে আছে বলেই দেশব্যাপী গ্রেফতার অভিযান আরও জোরদার করেছে। এর মাধ্যমে তারা বিরোধী নেতাকর্মীদের আতংকে রাখতে চায়। যাতে করে সরকার বিরোধী আন্দোলন তীব্র না হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিকে প্রধানমন্ত্রী সংলাপে ধরপাকড় বন্ধের আশ্বাস দিচ্ছেন, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গণগ্রেফতারের পরিমাণও বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে এটা স্পষ্ট যে এই সংলাপ কেবলমাত্র লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। আওয়ামী লীগ সরকার আবারও একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, সরকার কোনভাবেই বিরোধীদের সুযোগ দিতে চাইবেনা এটা অনুভব করে অগ্রসর হওয়া দরকার। এজন্য দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। কোনোভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, সরকার একদিকে বলছে, বিরোধীদের হয়রানি করা হবেনা। অন্যদিকে প্রতিদিনই চলছে গ্রেফতার অভিযান। দেয়া হচ্ছে নতুন নতুন মামলা। এতে আবারো প্রমাণিত হলো, আয়ামী লীগের অধীনে কখনোই নিরপেক্ষ নির্বাচন হবেনা। এরা বিরোধীদের সহ্যই করতে পারছেনা। তাহলে নির্বাচন হবে কেমন করে?

সূত্র মতে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবার কথা রয়েছে। সেই হিসেবে ডিসেম্বরেই নির্বাচন। পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, নির্বাচনের অন্যতম সৌন্দর্য্য হলো সবাই স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ পাবে। নির্বাচনী মাঠ সবার জন্য সমান হবে। কিন্তু এসবের ধারে কাছেও নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত বৃহস্পতিবার তারা লোক দেখানো একটি সংলাপ করেছে। যেখানে তারা দেশের প্রধান বিরোধীজোটকে বলেছিল, সবার জন্য লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড তৈরি করা হয়েছে। তারা মুখে নির্বাচনের কথা বলে দেশব্যাপী বিরোধী নেতাকর্মীদের ধরপাকড় চালাচ্ছে। চলছে গণহারে গ্রেফতার। বিএনপির অভিযোগ গত কয়েকদিনেই দুই হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দলের মধ্যম সারি থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেকেই এখনও ঘরছাড়া। বিএনপি বলছে, আন্দোলন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখতেই সরকার দেশব্যাপী এ ধরপাকড় চালাচ্ছে। এ কারণে গ্রেফতার অভিযানের পাশাপাশি পুরনো মামলাগুলো সচল করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০-দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা যাতে রাস্তায় নামতে না পারেন সেজন্য আগেভাগেই সরকার এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

পুলিশের সদর দফতরের উপ-মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) রুহুল আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, কারও বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা থাকলে পুলিশ তার কর্তব্য করতে বাধ্য। এর বাইরে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কারও বাড়িতে হানা দিচ্ছে বা কাউকে গ্রেফতার করছে এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি যখন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে তখনই সরকার গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে। সরকার চায় না বিএনপি নির্বাচনে আসুক। কারণ, বিএনপি নির্বাচনে এলে সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপিই জামানত হারাবে। তবে মামলা-হামলা বা গ্রেফতার যাই হোক বিএনপি পিছপা হবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে মুক্ত করে নির্বাচনে যাবে বিএনপি। বিএনপির সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনে বিএনপির মধ্যম সারির নেতাদের বাসায় দফায় দফায় পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। নেতাকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে দুর্ব্যবহার করছে। অনেককেই নাজেহালও করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার একদিকে সংলাপে বলছে, সবার জন্য লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড প্রস্তুত। অন্যদিকে নির্বাচনের আগে দেশব্যাপী বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পাইকারি গ্রেফতারি অভিযান চলছে। এটি কি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের নমুনা? রিজভী বলেন, সংলাপের পর গ্রেফতার অভিয়ান যে আরো বেড়ে গেছে। এখন দেশব্যাপী বিএনপির নেতাকর্মীদের যেভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে, জুলুমের খড়গ যেভাবে নামিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে, আজকে পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় নেতাকর্মীদের বাড়িতে চলছে গ্রেফতারি অভিযান। প্রতি মুহূর্তে, প্রতি সময়ে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এগুলো কিসের নমুনা? এটা কী একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের নমুনা, না একতরফা নির্বাচনের নমুনা?

বিএনপি জানায়, সংলাপের তৃতীয় দিনে গতকালও গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত ছিল। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সদস্য ও বাঁশখালীর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ লিয়াকত আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানসহ ২৪ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদাবর থানা বিএনপি নেতা আব্দুল কাদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এছাড়া আদাবর থানা বিএনপি’র সভাপতি এ্যাডভোকেট আক্তার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাসির এর বাসায় পুলিশ তল্লাশীর নামে তান্ডব চালিয়েছে। নড়াইল জেলা বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক টুলু শিকদারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর কোতোয়ালী থানা শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলী, দারুস সালাম থানা শাখার সভাপতি পারভেজ, মাগুরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশীদ, ঢাকা মহানগর উত্তর শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রসুল পারভেজ, শেরেবাংলা নগর শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মো: ফারুক, উত্তরখান থানা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমান এবং কাফরুল থানা শাখা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: ফারুককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপের দিনই বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদারকে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত গণঅনশন কর্মসূচি থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সংলাপ চলাকালে ও গত রাতভর খুলনা মহানগরীর শ শ বিএনপি নেতাকর্মীর বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় গ্রেফতার করা হয় মহানগর বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আলীসহ ২০ জন নেতাকর্মীকে। নাটোর জেলাধীন সদর থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, জেলা যুবদল নেতা শামীম, জেলা ছাত্রদল নেতা মাসুম এবং সদর থানা বিএনপি নেতা ও ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গাজীপুর মহানগর বিএনপির প্রচার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান রশিদ খান সিপু, ৫৭নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সরকার, ৪৯নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা শাহজাহান, ৪৫নং ওয়ার্ডের ছাত্রদল নেতা শিমুল ও ৪৫নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. মুসাকে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন শেষে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কাপাসিয়া উপজেলা যুবদলের সভাপতি সারোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদল সভাপতি সালেহ মো. ইথেন, গোপালপুর উপজেলা শ্রমিক দল নেতা জাহাঙ্গীর আলম বাবলু ও ছাত্রদল নেতা নাসির উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মাগুরা পৌর বিএনপির সভাপতি আইয়ুব আলী, সদর থানা সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন, মেহেরপুর জেলাধীন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বিজন এবং মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। বগুড়া জেলা বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হোসেন, মো. আমিনুল ইসলাম, মো. শফিকুল ইসলাম, যুবদল নেতা রফিকুল ইসলাম, মো. আরিফ হোসেন ও হযরত আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোকাররম হোসেন, জেলার বোঁচাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম এবং পৌর বিএনপির সভাপতি নওশাদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঢাকা থেকে মুরাদনগরে বন্ধুর জানাজা পড়তে গিয়ে নাশকতার মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের ছোট ভাই বিএনপি নেতা শাহ আবু কায়সার। কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাব্বী, ছাত্রদলের সাবেক নেতা জিল্লু এবং কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম হাইকোর্টে জামিন নিতে গেলে ঢাকা দারুসসালাম থানাপুলিশ তাদের আটক করে বোমা হাতে দিয়ে কোর্টে চালান করেছে। এছাড়া মিরপুর উপজেলা যুবদল সভাপতি আজাদুর রহমান আজাদকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

লক্ষ্মীপুর সদর পশ্চিম উপজেলা যুবদল সহ-সভাপতি জাকির হোসেন এবং ২০নং চর রমনিমোহন ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জহির হোসেন, ১৫নং লাহারকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজাদ হোসেন, লক্ষ্মীপুর বিশ^বিদ্যালয় কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসিবুর রহমান, লক্ষ্মীপুর পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান মিসু, স্বেচ্ছাসেবক দল পৌর ৫নং ওয়ার্ডের আহবায়ক ফিরোজ আলমসহ ৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য লিয়াকত হোসেন চেয়ারম্যানকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার করেছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও শ্যামপুর থানা বিএনপির সভাপতি আ ন ম সাইফুল ইসলামের বাসায় গত ৩০ অক্টোবর ২০১৮ রাতে শ্যামপুর থানাপুলিশ তান্ডব চালিয়েছে। তারা বাসায় ভাঙচুর চালিয়ে আসবাবসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। কোতোয়ালি থানা বিএনপির সভাপতি হায়দার আলী বাবলা, বংশাল থানা বিএনপির সদস্য ফজলুল হক বাবু, কোতোয়ালি থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ, কৃষক দলের সহ-সভাপতি আলহাজ এম এ তাহের, কামরাঙ্গীরচর থানা মহিলা দল নেত্রী ফেরদৌসীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান নাদিমের বাসায় প্রায় প্রতিদিনই পুলিশি তল্লাশির নামে তান্ডব চলছে।

এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের গাড়িচালক নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গুলশান থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দ্বীন ইসলাম, বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদপুর থানা বিএনপি নেতা শেখ জহির আহমেদ টিটু, মো. আজম, মো. জাহাঙ্গীর এবং মো. জহিরুল ইসলাম, উত্তরখান থানা বিএনপি নেতা মো. মোমেন বেপারী, মজিবুর রহমান, মো. মতি মাস্টার, বাড্ডা থানা বিএনপি নেতা ভিপি শাহীন, আদাবর থানা বিএনপি নেতা মাসুম বাবুল, তুরাগ থানা বিএনপি নেতা মো. মনির হোসেন, রফিক মোল্লা, আলম চাঁন, শামসুজ্জামান দুখু ও ওমর আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

নওগাঁ জেলাধীন সাপাহার থানা যুবদল সভাপতি ও জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম, যশোর জেলাধীন চৌগাছা, অভয়নগর -ঝিকরগাছা উপজেলা থেকে ২৭ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বান্দরবান জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মো. আবিদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজার বাসভবনে তল্লাশির নামে ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে পুলিশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা যুবদল সভাপতি ওবায়েদ পাঠানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো. হিরাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজবাড়ী জেলা বিএনপির ২৭ জন নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তাদের জামিন বাতিল করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মিঠুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জয়পুরহাট জেলা জাসাসের যুগ্ম আহবায়ক ও ছাত্রদলের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীর আলম নয়নের বাসায় গত ২৮ অক্টোবর রাতে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। এ বিষয়ে থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইউসুফ হারুন পাটোয়ারীকে মিথ্যা মামলায় ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর এবং কেন্দ্রীয় নেতা মাসুদ রেজা, স্বেচ্ছাসেবক দল সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান ভুট্টু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চনু মং, স্বেচ্ছাসেবক দল তুরাগ থানা শাখার সভাপতি আলী আহমেদ, বিমানবন্দর থানা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি মুনসুর আহমেদ মাসুম, স্বেচ্ছাসেবক দল মাগুরা জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কুতুব উদ্দিন গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাতক্ষীরায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ৮১ জনকে গ্রেফতার করে আইশৃঙ্খলা বাহিনী। বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত জেলার আটটি থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আবদুল হাকিমকে নাশকতার মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। নাটোরের সিংড়ার ১০ নম্বর চৌগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলজার হোসেনসহ চারজনকে গ্রেফতার করে সিংড়া থানাপুলিশ। চট্টগ্রামে বিএনপি ও যুবদলের দুই নেতাকমীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিএনপির নগর কার্যালয় নাসিমন ভবন চত্বরে আয়োজিত অনশন কর্মসূচি থেকে ফেরার সময় রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নওয়াব মিয়া এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সদস্য মো. ওসমানকে গ্রেফতার করা হয়। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ৭টি ককটেলসহ বিএনপি-জামায়াতের তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে বলে পুলিশে দাবি। দুর্গানগর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহির উদ্দিন, একই ইউনিয়নের জামায়াত সভাপতি আশরাফুল আলম ও কয়ড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মজনু ফকিরকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গায়েবি মামলা যেনো পিছু ছাড়ছে না যশোরের বাঘাপাড়া থানা বিএনপি নেতাকর্মীদের। একের পর এক সিরিজ মামলার পর এবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাঘারপাড়া থানা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল হাই মনা, থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুর রহমানসহ ১৬২ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা করল বাঘারপাড়া থানা পুলিশ। মামলা রুজুর আগে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে হানা দিয়ে ১০ জন নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। বিএনপি পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, থানায় রুজু হওয়া মামলার ন্যূনতম কোনো সত্যতা নেই। বাঘারপাড়া থানা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক শামসুর রহমান জানান, গত এক মাসের ব্যবধানে বাঘারপাড়া থানা পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে অন্তত সাতটি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কেউ-ই বাদ পড়ছেন না। এক একটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ফিরে আসার পর পুলিশ আবার মিথ্যা মামলা সাজিয়ে বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে।

গত ১লা নবেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার আমীর মাওলানা আবদুল হাকিমকে, টাংগাইল জেলার গোপালপুর উপজেলা শাখা জামায়াতের নায়েবে আমীর রফিকুল ইসলামকে, রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জামায়াতের নেতা আব্দুর রহীমকে এবং নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন শাখার সভাপতি খায়রুল ইসলাম বাশার জুয়েল, দূড়দুড়িয়া ইউনিয়ন শাখা জামায়াতের আমীর নজরুল ইসলামসহ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৬ জন নেতা-কর্মীকে পুলিশের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর এবং সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, সরকার হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যই সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করছে। তিনি বলেন, সরকার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করার যে ষড়যন্ত্র করছে তারই অংশ হিসেবে সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীদের অব্যাহতভাবে গ্রেফতার করছে। এ থেকেই জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, সরকার সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদৌ চায় না। বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ভোটার বিহীন একতরফা ব্যালট ডাকাতির নির্বাচনের প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করার জন্যই সরকার সারা দেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠাচ্ছে। সরকার গোটা দেশকেই একটি জেলখানা বানিয়ে ফেলেছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ তীব্র গণ-আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। এ সত্যটি সবাইকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আয়ামী লীগ অতীতের মতো তামাশা ও ভাঁওতাবাজির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার জন্য নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোকে দলীয় ক্যাডার ও পুলিশ দিয়ে ভন্ডুল করা হচ্ছে। নির্বাচনী ময়দানকে একতরফা করার জন্যই বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা দিয়ে গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছেন না মৃত, প্রবাসী, হজ্জযাত্রী, চলৎশক্তিহীন ও গুরতর অসুস্থ্য ব্যক্তিরাও। এমতাবস্থায় চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সংলাপের মাধ্যমে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল তা সরকারের সদিচ্ছার অভাবে যথাযথ কাজে লাগানোর পরিবর্তে উল্টো সময়ক্ষেপণ ও জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী কোন সংলাপের মাধ্যমে অতীতে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই সংকট উত্তরণে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের কোন বিকল্প নেই।
রাজনীতি বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নির্বাচনী বছরে একটি বড় দলকে এমনভাবে কোণঠাসা করে রাখা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে বড় বাধা। তাদের মতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটি বিতর্কিত নির্বাচনের প্রেক্ষিত থাকার পরেও একাদশ নির্বাচন নিয়ে সরকারি দলের মধ্যে কট্টর অবস্থার পরিবর্তন না হওয়া অশনি সঙ্কেত। খুব শীঘ্রই একাদশ সংসদ নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন। অথচ নির্বাচন প্রস্তুতির এই সময়ে রাজনীতির মাঠ দারুণভাবে অসমান্তরাল। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা তুমুল শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা দুই বছর আগে থেকেই নির্বাচনী সমাবেশ করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে। ঠিক বিপরীত চিত্র বিএনপিতে।

http://www.dailysangram.com/post/351995