৪ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার, ২:২৯

শতফুল ফুটতে দাও

প্রতিভাবান নেতৃত্বের প্রতীক্ষায়

ড. মাহবুব উল্লাহ্

যে কোনো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্লেষণে শ্রেণীর প্রসঙ্গটি উঠে আসে। গ্রেট ব্রিটেন রাষ্ট্রটি ক্লাসিক্যাল ক্যাপিটালিজমের একটি দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এদেশেই শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল। শিল্প বিপ্লবকে ভর করে ব্রিটিশ সমাজ বিন্যাসে বড় ধরনের পরিবর্তনও এসেছে।

২০১১ সালে বিবিসির উদ্যোগে ব্রিটিশ সমাজে সামাজিক শ্রেণীর ওপর একটি অনুসন্ধান চালানো হয়। এ অনুসন্ধানটির নামকরণ করা হয়েছিল The Great British Class Survey. যখন এ সার্ভেটি করা হয় তখন বিবিসি বলেছিল, উনবিংশ শতাব্দীতে প্রথমবারের মতো শ্রমিক শ্রেণী, মধ্যশ্রেণী এবং উচ্চশ্রেণী অভিধাগুলো ঊনবিংশ শতাব্দীর তীব্র সামাজিক পার্থক্যকে চিহ্নিত করার জন্য ব্যবহার করা হতো।

এ সামাজিক পার্থক্যের উদ্ভব ঘটেছিল শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। প্রশ্ন দাঁড়ায় ভিক্টোরিয়ান প্রথায় বর্তমানের শিল্প শ্রমিক, ম্যানেজার এবং মালিকদের পারস্পরিক সম্পর্ক এখনও কি প্রাসঙ্গিক? এটা পরিষ্কার যে, সামাজিক বিভাজন দূর হয়নি এবং ঐতিহ্যগত ভাষায় যেভাবে শ্রেণীর ব্যবহার করা হয়েছে, তা আজও পর্যন্ত জনজীবনে বিদ্যমান, এ ধারণাটি রাজনৈতিক চিন্তা এবং আমাদের ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারেও প্রভাব বিস্তার করছে। তাহলে একবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে কীভাবে শ্রেণী প্রশ্নটিকে দেখা যায়।

শ্রেণীগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করা এখন ব্রিটেনের অনেকেই হয়তো পছন্দ করে না। তাদের দৃষ্টিতে শ্রেণী বিশ্লেষণ সমাজে বিভাজন তৈরি করে এবং তা অতি সরলীকরণের পর্যায়ে পড়ে। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ম্যানচেস্টার নগরীর দু’শ বাসিন্দার গভীর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ জানিয়েছে, তারা কোনো শ্রেণীর মধ্যে পড়ে কিনা সে ব্যাপারে উদাসীন বা ভাবতে চায় না।

বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে ব্রিটিশ সমাজে শ্রেণী অনুভূতি যখন খুব প্রবল ছিল, তখনও দেখা গেছে জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশ নিজেদের কোনো শ্রেণীভুক্ত হিসেবে দেখতে চায়নি।

উচ্চ, মধ্য এবং শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে পার্থক্যের বিষয়টি সরলরেখার মতো নয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামুক্তও নয়। গত ২০০ বছর ধরে ব্রিটেনসহ পৃথিবীর অনেক দেশে মধ্যশ্রেণী ও শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে সীমারেখা নির্ণয়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

উচ্চশ্রেণী এ প্রশ্নকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার বাইরে অবস্থান করছে। তা খুবই দৃশ্যমান। তাদের আভিজাত্য তাদেরকে সমাজের অন্যান্য শ্রেণী থেকে স্পষ্টতই পৃথক অবস্থানে রেখে দিয়েছে। তারা জন্মগতভাবে অনেক সুযোগ-সুবিধার অধিকারী। তাদের রয়েছে নিজস্ব সামাজিক প্রথা-পদ্ধতি, নিয়ম-কানুন এবং চালচলন। এসব কারণে ব্রিটেনের উচ্চশ্রেণী একটি বিশেষ ধরনের গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে।

মধ্য ও শ্রমিক শ্রেণী তাদের কোন দৃষ্টিতে দেখে সেটি অত্যন্ত তরল এবং বিতর্কিত। সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে শ্রমিক শ্রেণীকে সংগঠিত করতে চায় এবং রক্ষণশীল রাজনীতিবিদরা কীভাবে মধ্য ও উচ্চশ্রেণীকে কাছে টানতে চায়, এসবের মধ্যে শ্রেণী প্রশ্নটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।

শ্রমিক শ্রেণীভুক্ত হওয়া অথবা মধ্য শ্রেণীভুক্ত হওয়ার মধ্যে যে অস্পষ্টতা রয়েছে সেটাই প্রতীকী অর্থে অথবা সাংস্কৃতিক বিচারে নির্ধারণ করে শ্রেণী পরিচয় কতটা গুরুত্ববহ। এ পার্থক্যগুলো কি আয়, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, জীবনযাত্রার মান, আবাসন এবং রাজনীতি দিয়ে বোঝা সম্ভব? কারও পক্ষে কি শ্রমিক শ্রেণী থেকে মধ্যশ্রেণীতে উত্তরণ হওয়া সম্ভব? মধ্য শ্রেণী বলতে কী বোঝায়?

এর অর্থ কি হোয়াইট কলার জব্স পাওয়া? এর অর্থ কি আপনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি? অথবা আপনি কি বেশ শিক্ষিত? মধ্য শ্রেণী এবং শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে পার্থক্য বিচারে এসব প্রশ্নগুলো বারবার উঁকিঝুঁকি দেয়। গত ২০০ বছরে ব্রিটিশ সমাজকে শ্রেণী নির্ধারণ করতে গিয়ে শুধু এসব প্রশ্নের মধ্যে জড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আসলে বিষয়টি অনেক বেশি জটিল।

ইতিহাসবিদরা দেখিয়েছেন ব্রিটিশ সমাজে শ্রেণী সচেতনতার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটলেও শ্রমিক শ্রেণীর আত্মপরিচয় ব্রিটেনে খুব টেকসইভাবে টিকে আছে। বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য।

ফ্রান্স অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খামারি, কৃষক অথবা ব্যবসায়ীদের মর্যাদার আসনে রাখা হয়। কারণ এসব দেশে এদের জাতীয় মেরুদণ্ড হিসেবে বিচার করা হয়। কিন্তু ব্রিটিশের দৃষ্টান্ত একেবারেই ভিন্ন। অনেক আগেই ব্রিটেন থেকে স্বাধীন খামারি অথবা কৃষক শ্রেণীর বিলুপ্তি ঘটেছে। ষষ্টদশ শতাব্দীতে ভূ-স্বামীদের জমি ঘেরাও করে নিজস্ব ব্যবহারে নেয়ার ফলে ব্রিটেনে মজুরিনির্ভর খামার শ্রমিকের উদ্ভব ঘটেছে। এদের মধ্যে একটা অংশ বেঁচে থাকার জন্য কুটির শিল্পের ওপর নির্ভর করত। কাজেই শিল্প-বিপ্লবের আগেই কৃষিতে মজুরি শ্রমিকের আবির্ভাব ঘটেছে।

এর পাশাপাশি উদ্ভব ঘটেছিল দক্ষ এবং অদক্ষ কর্মকাণ্ড। এ শ্রমিকদের ছিল খুবই শক্তিশালী স্বাধীনচেতা মনোভাব। ব্রিটিশ শ্রমজীবী শ্রেণীর ইতিহাস লেখক ইপি টমসন এদের চিহ্নিত করেছিলেন 'Free Born Englishman' সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। এ গর্ববোধ যার সঙ্গে যুক্ত ছিল, কারুকলার দক্ষতা তা শিল্প-বিপ্লবের কাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এমনকি এ পরিস্থিতি বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

কারুকলার এ ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিল একটি শক্তিশালী আত্মবিশ্বাসসম্পন্ন মেহনতি শ্রেণীর আত্মপরিচয়। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন এবং শ্রমিক আন্দোলনের মিথস্ক্রিয়া আমরা দেখতে পাই ঊনবিংশ শতাব্দীতে নিুবর্গের আত্মপরিচয়ের পাশাপাশি অবস্থান করছিল একটি অভিজাত ও ভদ্রলোকোচিত উচ্চশ্রেণী। ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো এ শ্রেণীর ক্ষমতা বিপ্লবী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়নি।

এরা ছিল অসাধারণভাবে উদ্ভাবনী ক্ষমতার অধিকারী এবং এদের দৃষ্টি ছিল সম্মুখবর্তী। তারা বুঝতে পেরেছিল বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে তাদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব। ব্রিটিশ উচ্চ শ্রেণী ছিল যুগোপযোগী পরিবর্তনকে ধারণ করতে সক্ষম এবং আত্মবিশ্বাসী। যারা অর্থনীতির ইতিহাস রচনা করেছিলেন তাদের দৃষ্টিতে এটা ছিল 'Gentlemanly Capitalism'। এ শ্রেণীর ভিত্তি ছিল সাম্রাজ্যবাদী ক্ষমতা এবং এরা লন্ডনকে ভিত্তি করে শক্তিশালী ব্যবসা-বাণিজ্যের অবকাঠামো গড়ে তুলেছিল।

নারীবাদী ঐতিহাসিকরা দেখতে পেয়েছেন, শ্রেণীগুলোর ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে নারীর শ্রমের অবস্থা কী দাঁড়িয়েছিল। নারীদের জন্য প্রধান কর্মসংস্থানের উৎস ছিল গৃহস্থালির চাকরানী হিসেবে কাজ করা। এর ফলে তারা মধ্য ও উচ্চশ্রেণীর সঙ্গে গভীর সম্পর্কে আসতে সক্ষম হয়। এ অবস্থায় যৌন হয়রানি অথবা নৈতিকতার মানদণ্ড রক্ষা করতে পারবেন কিনা সে ব্যাপারে তারা ছিল উদ্বিগ্ন।

পুরুষদের দৃষ্টিতে এ অবস্থা ছিল শ্রেণী কাঠামো বজায় রাখার হাতিয়ার। কিন্তু একইসঙ্গে পুরুষদের মধ্যে উদ্বেগ ছিল কোনো রকমের চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে কিনা। তাই পুরুষদের চোখে এরা ছিল দুর্ভাবনার উৎস। একইসঙ্গে কীভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেটাই ছিল বিশেষ চিন্তার বিষয়।

এসব ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় ব্রিটেনে মধ্যশ্রেণীর পরিচয় সুস্পষ্ট ছিল না। দিনে দিনে ব্যবসায়ী, ম্যানেজার ও হোয়াইট কলার শ্রমিকদের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। এরা দেখতে পেল অভিজাত শ্রেণী তাদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। একইসঙ্গে এ অভিজাতরা ছিল আত্মপ্রত্যয়ী।

সুতরাং এ শ্রেণীতে অন্য কোনো শ্রেণীর উত্তরণ ঘটা সম্ভব ছিল না। ব্রিটেনের নারী শ্রমিকরা গর্বিত পুরুষ কায়িক শ্রমিকদের বাধারও সম্মুখীন হয়েছিল। এর ফলে মধ্যশ্রেণীর অবস্থানটা হয়ে পড়েছিল অনেকটা মধ্যস্থতাকারী শক্তির মতো। যেন একটা ফুটবল।

এ ফুটবল অবস্থান পরিবর্তন করত ক্ষুদ্র অভিজাত উচ্চশ্রেণী এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে। ব্রিটেনের শ্রেণীগত রূপান্তরের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার কোনো রকম তুলনা চলে কি? বাংলাদেশে অভিজাত উচ্চ শ্রেণী নেই এবং ঐতিহাসিক কারণেই এদের আমরা দেখতে পাই না। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে যে জমিদার শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছে তাদের বেশিরভাগই ছিল হিন্দু জমিদার। মুসলিম জমিদার ছিল হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র।

জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের মধ্য দিয়ে সনাতন অভিজাত শ্রেণী বিলুপ্ত হয়ে যায়। বাংলাদেশ বর্তমানে যে ভূ-খণ্ড নিয়ে গঠিত, সেই ভূ-খণ্ডে কৃষকদের মধ্যে পার্থক্যবোধভিত্তিক আত্মপরিচয়ের উদ্ভব ঘটেছিল, তাতেই নিহিত আছে স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের ভিত্তি। জমিদার শ্রেণী উচ্ছেদ-পরবর্তীকালে একটি জোতদার শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। তারাও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা দুর্যোগে দুর্বল হয়ে পড়ে। কৃষকদের মধ্যে ভূমিহীন হওয়ার প্রবণতা ত্বরান্বিত হয়।

ফলে এদেশে স্বাধীন গর্ব পরিচয়সম্পন্ন কৃষক শ্রেণীও টেকসই হয়নি। ভূমির ভিত্তি সংকুচিত হওয়ার ফলে বেঁচে থাকার জন্য কৃষকদের খুঁজতে হয় ভূমিবহির্ভূত কর্মসংস্থান। এর একটা বড় সুযোগ তৈরি হয় বিদেশে কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে।

যারা বিদেশে কর্মসংস্থানে সফল হয় তাদের অর্থের জোর বৃদ্ধি পায় বৈকি। কিন্তু তারা স্বাধীন ব্রিটিশ কৃষকদের স্বাধীন মনোবৃত্তির অধিকারী হতে পারেনি। অন্যদিকে আমরা এখন যাদের সমাজের উচ্চশ্রেণী হিসেবে গণ্য করি, তারা ব্রিটিশ অভিজাত উচ্চশ্রেণীর কোনো বৈশিষ্ট্যই ধারণ করে না।

আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া এ শ্রেণীটি সাংস্কৃতিক দিক থেকে একেবারেই পরগাছা। এদের অর্থবিত্তের উৎস উদ্ভাবনী ক্ষমতা অথবা আত্মপ্রত্যয় নয়। এরা অর্থবিত্ত লাভ করেছে প্রধানত দুর্বৃত্তায়নের পথে। এ শ্রেণীটি তাদের নবঅর্জিত বিত্তবৈভব রক্ষার জন্য উত্তরোত্তর রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের পথেই ঝুঁকে পড়েছে। এর ফলে জাতীয় সংসদের ৭০-৮০ ভাগ সদস্য এ ধনিক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

অন্যদিকে মধ্যবিত্ত শ্রেণী হিসেবে যারা পরিচিত যেমন- ডাক্তার, উকিল, অধ্যাপক, শিক্ষক এবং সরকারি চাকরিজীবী তারাও এখন কোনো ধরনের স্বাধীন স্পৃহা প্রদর্শনে অক্ষম। এরা প্রত্যেকেই কম-বেশি হয়ে পড়েছে মানি মেকিং মেশিনের নাটবল্টু। তাদের পক্ষে সমাজের দিশারীর ভূমিকা পালন করা সম্ভব নয়। এরা চিন্তার দৈন্যে ভোগে। এরাও মনে করে ক্ষমতাবানদের ওপরেই ভর করে আয়-উন্নতি অর্জন করতে হবে।

ব্রিটিশ শ্রেণী কাঠামোর ইতিহাসে নারীদের যে অসহায় অবস্থায় দেখা গেছে বাংলাদেশের নারীরা তাদের তুলনায় বেশ ভিন্ন। এখানকার কর্মজীবী নারীদের একটি বড় অংশ পোশাক শিল্পে কর্মরত। কর্ম অবস্থানের কারণে তাদের চিত্ত স্বাধীন হওয়ার কথা। কিন্তু তাদের মধ্যে শ্রেণী সচেতনতা খুবই দুর্বল। তাই তারা নানা রকম হয়রানি ও শোষণের শিকার হয়। তাদের মধ্যে শ্রেণী সচেতনতা সৃষ্টি হলে একদিন তারা Class-in-itself থেকে Class-for-itself-এ রূপান্তরিত হবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির দুর্বলতার মূলে রয়েছে এর শ্রেণী কাঠামো।

আমরা শাসিত হচ্ছি এমন একটি শ্রেণীর দ্বারা, যারা ঊর্ধ্বতনের প্রতি বিরক্ত, অধস্তনের ভয়ে ভীত, চক্ষুহীন-কর্ণহীন এবং বিশ্ব ঝঞ্ঝার গতিপ্রবাহ বুঝতে অক্ষম এবং কুম্ভিলকবৃত্তিতে পারঙ্গম। যতদিন পর্যন্ত এদেশে একটি সৃজনশীল, কর্মমুখী, আত্মপ্রত্যয়ী, উদ্যমী এবং উদ্ভাবনে সক্ষম শ্রেণীর উদ্ভব না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের নিষ্ফলা সময়ই অতিক্রম করে চলতে হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এরূপ চলার মধ্যে সত্যিকার অর্থে কোনো অতিক্রমণীয়তা নেই। সেজন্যই অপেক্ষা করে আছি প্রতিভাবান নেতৃত্বের জন্য।

ড. মাহবুব উল্লাহ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ

https://www.jugantor.com/todays-paper/sub-editorial/107872