৩ নভেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১০:২০

দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যোগ্য শিক্ষক কম

দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অপেক্ষাকৃত নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপক পদে প্রয়োজনীয় শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। এছাড়া এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিগুলো আরো উন্নয়নের প্রয়োজন বলেও মনে করে উচ্চশিক্ষা তদারকি সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসি বলছে, যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকারা বড় বড় শহরের বাইরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। ফলে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এ চিত্র শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ চিত্র আরো ভয়াবহ।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে প্রতিবেদনটি পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদেও উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক নতুন সরকারি এবং অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে। এ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানত প্রভাষক ও জুনিয়র শিক্ষক দ্বারা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। দেশের বড় শহরের বাইরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা পড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন না, ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, যেকোনো পর্যায়ের শিক্ষার জন্য বড় নিয়ামক শক্তি মানসম্মত, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি সবধরনের প্রতিষ্ঠানেই বর্তমানে এমন শিক্ষকের ঘাটতি আছে। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত নবীন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সঙ্কট প্রকট। এ থেকে উত্তরণ জরুরি, যদিও তা রাতারাতি সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।

দেশে বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে ৯টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং ৪টি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য ধারার যেমন প্রকৌশল, কৃষি, চিকিৎসা বিজ্ঞান, সিভিল এভিয়েশন, মেরিন প্রকৌশল খাতে বিশেষায়িত আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেয়া তথ্যানুসারে দেখা যায়, নবপ্রতিষ্ঠিত রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে (২০১৭ সালে) অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রিধারী কোনো শিক্ষক নেই। রয়েছেন মাত্র একজন সহকারী অধ্যাপক, ৭ জন প্রভাষক। এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হচ্ছে ২৮৪ জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৭ হাজার ৯৫৪ জন। শিক্ষক হচ্ছে ১৪০ জন। এর মধ্যে অধ্যাপক হচ্ছেন মাত্র ৫ জন, প্রভাষক হচ্ছেন ১৩৫ জন, পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রিধারী কোনো শিক্ষক নেই। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অধ্যাপক নেই। এখানে শিক্ষার্থী হচ্ছে ৩ হাজার ৫৫৫ জন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৩ হাজার ৩৪৪ জন। অধ্যাপক মাত্র ৪ জন আর সহযোগী অধ্যাপক ১২ জন, সহকারী অধ্যাপক ২৩ জন। মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৫ হাজার ৮৪৯ জন। এখানে অধ্যাপক রয়েছেন মাত্র ৭ জন, আর সহযোগী অধ্যাপক ৩৫ জন। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক রয়েছেন মাত্র ৮ জন, আর সহযোগী অধ্যাপক ২০ জন।
অপর দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলোই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

শিক্ষাবিদরা ও সচেতন অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ সমস্যা প্রকট।
এ পরিস্থিতি উত্তরণে ইউজিসি তার প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছে, অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা যেন অপেক্ষাকৃত নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানে আগ্রহী হন। সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপককে আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষাকৃত কম প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেষণে পাঠানো যেতে পারে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ যেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করতে পারেন সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের ঘাটতি পূরণে, অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের সম্মতি সাপেক্ষে প্রয়োজনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/361952