৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, রবিবার, ১০:৪৯

সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণে প্রস্তাবিত ব্যয় প্রশ্নবিদ্ধ

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকি ও ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য নেয়া সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২২টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণে ২১টির গড় ব্যয় হলো তিন কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আর এখন নতুন একটি ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১৫ কোটি ৬৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ফলে তিনগুণ ব্যয় বাড়িয়ে দেয়া এ প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এ দিকে আশ্রয়কেন্দ্র বা সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণে বিভিন্ন এলাকায় বেশি ব্যয় দেখিয়ে নি¤œমানেরসামগ্রী দিয়ে এসব নির্মাণ করা হচ্ছে বলে সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেøখ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কাছে পাঠানো স্থানীয় সরকার বিভাগের একই প্রকল্পে নতুন একটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ ব্যয়ের প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে উপকূলীয় শহর পরিবেশগত অবকাঠামো প্রকল্পটি চলমান আছে। আরবান ক্লাইমেট চেইঞ্জ রিসাইলেন্স ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে অনুমোদিত আটটি শহরের অতিরিক্ত আরো দুইটি শহরে বিশেষ করে বাগেরহাট ও পটুয়াখালী নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে ১০টি শহরের অবকাঠামো উন্নয়নে এ প্রকল্পটি নেয়া হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ কয়েকটি সংস্থা ও তহবিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে। প্রকল্পের ৮৭৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ের মধ্যে বিদেশী সহায়তা ৭০৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকারের। ২০২০ সালের মে মাসে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা। এখন নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে এক হাজার ৫৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনায় বেরিয়ে আসে, মূল প্রকল্প প্রস্তাবনায় ২১টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ৭২ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার টাকা। যেখানে একটি শেল্টার নির্মাণে গড় ব্যয় দাঁড়ায় তিন কোটি ৪৬ লাখ টাকা। বর্তমানে ২২টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮ কোটি ২৮ লাখ ১২ হাজার টাকা। এ হিসাবে প্রতিটির গড় নির্মাণ খরচ চার কোটি এক লাখ টাকা। কিন্তু এখানে নতুন একটির নির্মাণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১৫ কোটি ৬৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এ বর্ধিত ব্যয় দিয়ে কমপক্ষে বাড়তি তিনটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা সম্ভব।
এ দিকে এখানে অতিরিক্ত এক কোটি ৪০ লাখ ডলার অনুদানের আশ্বাস পাওয়া গেছে, যা এডিবির নির্দেশনা মোতাবেক ১১ জেলার ৩৬ পৌরসভার অগ্রাধিকার তালিকা থেকে বাগেরহাট ও পটুয়াখালী পৌরসভাকে নতুনভাবে যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
ইআরডি জানায়, ১.৪ কোটি ডলারের মধ্যে ৬০ লাখ ডলার পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। তবে বাকি ৮০ লাখ ডলার প্রথম দেয়া ৬০ লাখ ডলারের কাজের সাফল্য ও মূল্যায়ন প্রাপ্তির পর দেয়া হবে।
এলজিইডির মতে, অনুমোদিত ডিপিপিতে ব্যাচ-১ পৌরসভার ১২টি শেল্টার নির্মাণে নির্ধারণ ছিল। ব্যাচ-২ পৌরসভার জন্য ৯টি সাইক্লোন শেল্টারের পরিবর্তে আটটি নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে। তবে অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী ২১টি সাইক্লোন শেল্টারের মধ্যে ২০টির নির্মাণ বাস্তবায়নাধীন। নতুন যুক্ত দুইটি পৌরসভায় একটি করে দুইটি শেল্টার নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ফলে প্রকৃতপক্ষে একটি বাড়ানো হলেও ব্যয় বাড়ছে ১৫ কোটি ৬৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
টিআইবি সম্প্রতি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে এক জরিপে বলেছে, বিভিন্ন সরকারের আমলে নির্মিত বেশির ভাগ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি। ফলে এসব আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের ৩০ শতাংশ অর্থ বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ-বাটোয়ারা হয়।
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/193276