গাজীপুর চৌরাস্তা দিয়ে মঙ্গলবার দিনভর ভোগান্তি নিয়েই চলাচল করে যানবাহন
১৩ জুন ২০১৮, বুধবার, ২:৩৮

ঈদযাত্রা

ভাঙাচোরা মহাসড়কে যানজট-জলজট

সরেজমিন আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা

টঙ্গী সেতুর দৈর্ঘ্য মাত্র ১৭৫ মিটার। কিন্তু সেতুর দুই পারে রাস্তার চিত্র পুরোপুরি বিপরীত- ঢাকা প্রান্তে মসৃণ রাস্তা, অপর পাশে গাজীপুর জেলার সীমানার শুরুতেই ভাঙাচোরা রাস্তার শুরু। জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার মহাসড়কের বেশিরভাগই ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলে পানি জমে একহাঁটু। দু'পাশে কাদা আর আবর্জনার ভাগাড়।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে এই চিত্র দেখা যায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী সেতু থেকে চৌরাস্তা অংশ দিয়ে চলে উত্তরবঙ্গের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গাড়ি। সিলেট বিভাগের কিছু বাসও চলে এ পথে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলা ও টাঙ্গাইলে যাওয়ার একমাত্র পথ মহাসড়কের টঙ্গী সেতু থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা অংশ।

বিগত বছরগুলোতেও মহাসড়কের এ অংশে যানজটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, এবার দুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। গত ১৯ মে মন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ মহাসড়কের এ অংশের যানজট নিরসনে নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেল, তা খুব একটা কাজে আসেনি। ৮ জুনের আগে মহাসড়কের যেসব খানাখন্দ ইট-সুরকিতে ভরাট করা হয়েছিল, সেগুলো ধুয়ে গেছে গত ক'দিনের বৃষ্টিতে। ভাঙাচোরার কারণে ১২ কিলোমিটার পথে ঈদযাত্রার ভিড় শুরুর আগেই সময় লাগছে তিন থেকে চার ঘণ্টা।

গতকাল দুপুরে ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে যানজট ও জলজট ঠেলে মোটরসাইকেলে চৌরাস্তা যেতে সময় লেগে যায় দুই ঘণ্টা। বাসচালকরা জানালেন, তাদের লেগেছে তিন থেকে চার ঘণ্টা। ঈদযাত্রায় যাত্রীর চাপ যত বাড়বে, সময়ও তত বেশি লাগবে। গতবার ঈদের আগের রাতে লেগেছিল ১০ ঘণ্টা। এবার কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় চালকরা।

টঙ্গী সেতু থেকে কয়েকশ' গজ সামনে বাটা কারখানা এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার মহাসড়ক গত ক'দিনের বৃষ্টিতে একেবারে ভেঙেচুরে গেছে। ঢালাই উঠে নিচে ইট-সুরকি বেরিয়ে এসেছে। বৃষ্টিতে উঠে যাওয়া পিচ পাথরের স্তূপ জমেছে সড়কের এখানে-সেখানে। তাতে রাস্তায় সাগরের মতো ঢেউ। গাড়ি চলে হেলেদুলে। সড়কের দু'পাশের অবস্থা আরও খারাপ। গাড়ি চলাচল দূরে থাক, হেঁটে চলাও অসম্ভব।

গতকাল সকাল থেকেই আকাশের মুখ ছিল ভার। দুপুর ২টার দিকে টঙ্গী স্টেশন রোডে পৌঁছাতেই শুরু হলো অঝোর বর্ষণ। স্টেশন রোড থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের উইচাপাড়া যেতে ১৫ মিনিট লেগে যায়। উইচাপাড়া পৌঁছে অবাক হতে হয়। মাত্র আধা ঘণ্টার বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটুপানি!

আশপাশের এলাকাগুলো মহাসড়কের চেয়ে উঁচু। সড়কের পাশে পানি নামার ড্রেন নেই। পাহাড়ি ঢলের মতো পানি নামছে মহাসড়কে! কিন্তু নিস্কাশনের পথ না থাকায় মহাসড়কেই জমছে তা। পানির উচ্চতা যত বাড়তে থাকল, যানজটও তত বাড়তে থাকে। রাস্তার পাশে বিশাল সব খানাখন্দ, গাড়ি চলাচল করে মহাসড়কের মাঝের বিভাজক ঘেঁষে। ঢাকা-গাইবান্ধা রুটের এসএন পরিবহনের চালকের সহকারী জাকির হোসেন বললেন, বৃষ্টি হলেই এ অবস্থা সৃষ্টি হয় গাজীপুরে। জলজটে তীব্র যানজট হয়। টঙ্গী সেতুর ভোগড়া বাইপাস পর্যন্ত মাত্র ১০ কিলোমিটার পথ যেতে তিন-চার ঘণ্টা সময় লেগে যায়।

ধীরে ধীরে উইচাপাড়া থেকে এগিয়ে এরশাদনগর গিয়ে দেখা গেল, মহাসড়কের দু'পাশেই থৈথৈ পানি। এরশাদনগরের পশ্চিম প্রান্তেও একই অবস্থা। গাড়ি চলাচলে বিশাল ঢেউ। এরশাদনগরের পশ্চিম প্রান্তে কথা হয় ট্রাফিক পুলিশের সদস্য ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, দিন-রাত চেষ্টা করেও সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা করা যাচ্ছে না। যানজটে আটকে থেকে অধৈর্য হয়ে পড়ে চালকরা সামান্য সুযোগ পেলেই উল্টোপথে গাড়ি ঢুকিয়ে দেন। এতে যানজট আরও বাড়ে।

ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ঈদযাত্রার সময়ে মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। এসব গাড়ি সড়কে বিকল হয়ে যানজট সৃষ্টি করে। গাড়ি রাস্তায় বিকল হলে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হবে। গাজীপুরায় দেখা গেল, ভিআইপি পরিবহনের একটি বাস বিকল হয়ে সড়কের মাঝবরাবর হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে আছে। চার ঘণ্টা পর ফেরার সময়ও দেখা গেল বাসটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। কথা বলার জন্য চালককে পাওয়া গেল না।

গাজীপুরা থেকে তারগাছ বাজার পার হতে সময় লাগল ঘণ্টাখানেক। যানজটে স্থবির সড়কে মোটরসাইকেলে অনেক কসরত করে পথ পেরোতে হলো। কিন্তু বাসসহ অন্যান্য বড় যানবাহন যানজটে নিশ্চল, নড়ারও জায়গা নেই।

চৌরাস্তার স্বস্তি, রাস্তায় ভাঙাচোরার চিহ্নমাত্র নেই। কিন্তু ভোগাচ্ছে রাস্তার দু'পাশে পার্কিং। চৌরাস্তা থেকে পরের প্রায় এক কিলোমিটার পথ আট লেনের। কিন্তু ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, বাস, লেগুনাসহ বারোয়ারি যানবাহন পার্ক করে রাখায় চলাচলের জন্য অবশিষ্ট রয়েছে দুই লেন। চৌরাস্তা থেকে শ্রীপুরের রেল ওভারপাস পর্যন্ত এ অবস্থা।

 

 

http://samakal.com/todays-print-edition/tp-last-page/article/18062713