৪ মে ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৩৭

সাইরেন বাজিয়ে দুদকে এলেন, গেলেনও সাইরেন বাজিয়ে

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন ডিআইজি মিজানুর রহমান। ঢাকা, ৩ মে। ছবি: সাজিদ হোসেনকালো রঙের একটি পাজেরো গাড়িতে সাইরেন বাজিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এলেন তিনি। আবার ফিরেও গেলেন। দুদক তাঁকে তলব করেছিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। বলা হয়েছিল সাড়ে নয়টায় দুদকে হাজির হতে। তিনি এলেন নয়টারও আগে। জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে তাঁকে নেওয়া হলো সাড়ে নয়টায়। সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দুদক ছাড়লেন বিকেল পাঁচটায়।

তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত ডিআইজি মিজান।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে তলব করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত সাত ঘণ্টা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ডিআইজি মিজান। এ সময় তাঁর বিরুদ্ধে আনা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, আয়কর ফাইলে দেওয়া তথ্যের বাইরে তাঁর কোনো সম্পদ নেই।
দুদক সচিব শামসুল আরেফিন সাংবাদিকদের বলেন, মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়ার পরই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর কমিশন পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। তিনি আরও বলেন, রোববারও কিছু কাগজপত্র জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মিজানুর রহমান।

নামে-বেনামে ডিআইজি মিজানের শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে দুদকের কাছে। সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ডিআইজি মিজানের স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় সম্পদের তথ্য চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিভিন্ন ব্যাংক, ভূমি অফিস, সাবরেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চিঠি পাঠান। তথ্য পাওয়ার পরই মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, মিজানুর রহমান নিজের নামে তেমন কোনো সম্পদ না করে নিকটতম আত্মীয়স্বজনের নামে কিনেছেন। এ প্রসঙ্গে দুদক সচিব বলেন, ওই সব আত্মীয়স্বজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাঁরা যদি ওই সব সম্পদের উৎস জানাতে না পারেন, তাঁরাও আইনের আওতায় আসবেন।

দ্বিতীয় বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ ওঠে মিজানুরের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনেরও অভিযোগ ওঠে। জানা গেছে, ব্যাংক কর্মকর্তা মরিয়ম আক্তারকে গত বছরের জুলাই মাসে বিয়ে করেন মিজানুর রহমান। ২০১৯ সাল পর্যন্ত সেই কথা গোপন রাখার শর্ত দিয়েছিলেন মরিয়মকে। কিন্তু মরিয়ম রাজি হননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি গত ১২ ডিসেম্বর পুলিশ পাঠিয়ে মরিয়মকে গ্রেপ্তার করান।

সবশেষ মিজানুরের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকা প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ তোলেন। ওই সংবাদ পাঠিকা প্রথমে ঢাকার বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে তিনি পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ জানিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন। বৃহস্পতিবার এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে মিজানুর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আই অ্যাম সরি’।

ডিআইজি মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত জানুয়ারির শুরুর দিকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এর আগে মিজানুর রহমান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন, সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

 

http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1481911