৪ মে ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৩৪

ফের লোকসানে বিপিসি, বাড়াচ্ছে ঋণসীমা

তিন বছরের বেশি সময় ধরে লাভজনক থাকা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) গত ৫ মাস ধরে ফের লোকসান গুনছে। দীর্ঘদিন মুনাফায় থাকার পর এবার তেল আমদানিতে আন্তর্জাতিক ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করায় ঋণসীমা বাড়ানোর এ উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জানায়, গত নভেম্বর থেকে ফের লোকসান গুনছে বিপিসি। এর আগে তিন বছরের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কেনা দামের চেয়ে দেশের বাজারে বেশি দামে তেল বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় না করে বিক্রিত তেল থেকে ২০১৪-১৫ সালে বিপিসি চার হাজার ২০৮ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সাত হাজার ৭৫৩ কোটি এবং ২০১৬-১৭ সালে চার হাজার ৫৫১ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করে।

বিপিসি সূত্র জানায়, জ্বালানি তেল আমদানিতে জেদ্দাভিত্তিক আইটিএফসি থেকে ঋণ নেয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। ছয় মাসে পরিশোধের শর্তে এ ঋণ দেয়া হয়। বর্তমানে এ ঋণের সীমা ৭০ কোটি ডলার। ঋণ সীমার মধ্যে আইটিএফসি ৪০ কোটি ডলার ছাড় করতে সম্মত জানিয়েছে। তবে এখনই এ পরিমাণ ঋণ না নিয়ে ২০ কোটি ডলার নেয়া হবে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিপিসি। ঋণসীমার বাকি অংশ পরে নেয়া হবে। ভবিষ্যতে ঋণসীমার বেশি অর্থ দরকার হবে। তাই ঋণসীমা বাড়াতেও প্রস্তাব করতে যাচ্ছে সংস্থাটি।

জানা যায়, আইটিএফসির ঋণ অনমনীয়। এটির সুদহার তিন দশমিক আট শতাংশ। বিপিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জ্বালানি তেল আমদানির অর্থায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ঋণ নিতে সম্মত হয়েছে বিপিসি। এখনে যেসব বিবেচনা কাজ করেছে তা হলো— জ্বালানি তেলের সরবরাহ সচল রাখা, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতির ওপর চাপ কমানো এবং আইটিএফসিকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনায় রাখা।

এ প্রসঙ্গে বিপিসির পরিচালক (অর্থ) আলতাফ হোসাইন চৌধুরী বলেন, আমাদের সঙ্গে আইটিএফসির চুক্তির আলোকে এ ঋণ ছয় মাসের জন্য নেয়া হবে। এটি আগেও ছিল। এক সময় আমরা তেল আমদানির জন্য বছরে ২৫০ কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ নিতাম। প্রয়োজন অনুযায়ী এবং দুই পক্ষের সম্মতিক্রমে এটি বাড়ে কমে। দেশের তেলের চাহিদা বাড়ছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ছে। এ অবস্থায় ঋণসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হতে পারে।

২০১৪ সালের মাঝামাঝি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকে। এতে ভর্তুকি কমতে থাকে সরকারের। আর আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় না করায় পরে মুনাফা গুণে বিপিসি। ফলে তেল কেনার জন্য আইটিএফসি থেকে উচ্চ সুদের যে অনমনীয় ঋণ নেয়, সেটির গ্রহণও কমতে থাকে। বাড়তে থাকে বিপিসির মুনাফা। ২০১৪ সাল থেকে প্রায় দুই বছর সময় ধরে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৩০ থেকে ৫০ ডলারের মধ্যে। আগে যা ছিল ১০০ ডলারের ওপরে।

এদিকে বর্তমানে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ৭০ ডলার। দাম ঊর্ধ্বমুখীই রয়েছে। ফলে ফের লোকসান গুণতে শুরু করেছে বিপিসি। বর্তমানে বিপিসি প্রতি লিটার ডিজেলে চার টাকারও বেশি এবং প্রতি লিটার ফার্নেস তেলে ১০ টাকা করে লোকসান দিচ্ছে বলে জানা যায়।

 

http://www.ittefaq.com.bd/trade/2018/05/04/155860.html