৪ মে ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৩১

বজ্রপাত আতঙ্ক

সুনামগঞ্জের হাওরে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে পারছেন না কৃষকরা। এর মধ্যে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে বজ্রপাত। বজ্রপাতের কারণে প্রাণের ভয়ে অনেকেই ধান কাটতে আসছে না। গত সপ্তাহে ধান কাটার সময় জেলায় ছয় জন বজ্রপাতে মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন।

অনেক স্থানে শ্রমিকরা মৃত্যু ঝুঁিক নিয়ে হাওরে ধান কাটছে। মূলত বজ্রপাত আতঙ্ক বিরাজ করছে ধান কাটা শ্রমিকদের মধ্যে। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলার হাওরগুলোতে বোরো ধান পেকে গেছে। মাঠের পর মাঠ পড়ে আছে পাকা ধান। পাকা ধান কাটতে প্রস্তুতি নিলেও শ্রমিক সংকটের জন্য ধান কাটতে পারছে না কৃষক। জানা গেছে, শ্রমিক সংকট, ভারি বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাতের কারণে ধান কাটায় দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। বেশ কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বেশি টাকা দিয়ে শ্রমিক পেলেও বৃষ্টির মধ্যে ধান কাটতে চাচ্ছেন না তারা। কাটা ধান শুকানো যাচ্ছে না। কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে হচ্ছে বজ্রপাত। মঙ্গলবার দুপুরে সুনামগঞ্জ সদর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও দিরাই উপজেলায় বজ্রপাতে চার জন ও ধানের বস্তা চাপায় একজন মারা যান। এ সময় বজ্রপাতে আরো পাঁচ জন আহত হয়। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার গাজিনগর গ্রামের কৃষক বদরুল আহমদ বলেন, বৃষ্টির সঙ্গে মাঝে মাঝে শিলা বৃষ্টি হয়। এতে সব পাকা ধান ঝরে মাটিতে পড়ে যাবে। সেই ধান আর সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। কৃষি অফিস সূত্র মতে, এখন পর্যন্ত হাওরের ৭০ ভাগ ধান কাটা শেষ। তবে, কৃষক দাবি করছেন, এখনো ৫০ শতাংশ ধানও কাটা হয়নি হাওরের। জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনার হাওরের কৃষক কামাল মিয়া বলেন, আমার হাওরের ১৪ কেদার জমি রয়েছে। এখন পর্যন্ত অর্ধেক জমির ধানও কাটতে পারিনি। ধর্মপাশা উপজেলার মাসুদ আহমদ জানান, বজ্রপাতের কারণের ধান কাটতে কৃষকরা হাওরে যাচ্ছে না। ফলে জমিতে পাকা ধান কাটতে পারছি না। কৃষি বিভাগের মতে, এ বছর আবহাওয়া উপযোগী থাকায় সম্পূর্ণ ফসল গোলায় তোলা গেলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। হাওর থেকে এবার চালের হিসেবে প্রায় আট লাখ টন চাল আসবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ। সূত্র মতে, সুনামগঞ্জের প্রায় সাড়ে তিন লাখ চাষি পরিবার বোরো চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। সুনামগঞ্জে এ বছর দুই লাখ ১৯ হাজার ২৯৪ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। সুনামগঞ্জ কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার সাহা বলেন, জেলার ৭০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটায় ধীর গতি থাকলেও কৃষকরা সব ধান ঘরে তুলতে পারবেন। কিছু কিছু জায়গায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটা হচ্ছে। তাতে দ্রুত ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=115794