৩ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:২৫

চট্টগ্রাম বন্দরের ১৮০ কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছে না ফারমার্স ব্যাংক

১০ মের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না সমস্যাকবলিত ফারমার্স ব্যাংক। সরকারি, কি বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের আমানতের অর্থই এখন ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। বাধ্য হয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা করছে। এবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ১৮০ কোটি টাকা ফেরত দিতে পারছে না ফারমার্স ব্যাংক। বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও ফারমার্স ব্যাংকের নামে নালিশ করেছে ব্যাংকের কাছে। এক পত্রের মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষ ফারমার্স ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফারমার্স ব্যাংককে আগামী ১০ মে’র মধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থ ফেরত দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ফারমার্স ব্যাংক চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ১০টি এফডিআরের বিপরীতে ১৮০ কোটি টাকা স্থায়ী আমানত রাখা হয়। এ আমানতের মধ্যে গত ৮ ডিসেম্বর মেয়াদোত্তীর্ণ পাঁচ কোটি টাকা যথাসময়ে নগদায়নের জন্য গত ৭ ডিসেম্বর এক পত্রের মাধ্যমে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু ফারমার্স ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা টাকা নগদায়ন না করে প্রথমে ১০ দিনের এবং পরে এক মাসের সময় চেয়ে আবেদন করে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ না করে পুনরায় আমানতের অর্থ নগদায়নের জন্য শাখা ব্যবস্থাপককে অনুরোধ করে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফারমার্স ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ পাঁচ কোটি টাকা এবং সুদ বাবদ ৪২ লাখ ৭৮ হাজার টাকাসহ মোট ৫ কোটি ৪২ লাখ ৭৬ হাজার টাকার তিনটি পেঅর্ডার বন্দর কর্তৃপক্ষের বরাবর দাখিল করে। পেঅর্ডার তিনটি ৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তহবিলে জমা করার জন্য দেয়া হয়। কিন্তু ৪ জানুয়ারি তা প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে আসে।
এ দিকে বন্দর কর্তৃপক্ষের মেয়াদোত্তীর্ণ আরো ৩০ কোটি ও পাঁচ কোটি টাকাসহ মোট ৩৫ কোটি টাকা সুদাসলে নগদায়নের জন্য ফারমার্স ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা ব্যবস্থাপককে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকটি আজ পর্যন্ত এ অর্থ বন্দর কর্তৃপক্ষের তহবিলে জমা দেয়নি, যা বন্দর কর্তৃপক্ষের বিনিয়োগনীতিমালার পরিপন্থী ও অব্যাংকিং সুলভ আচরণের শামিল। এতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ফারমার্স ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় রক্ষিত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ১৮০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত জরুরি ভিত্তিতে নগদায়ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুরোধ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ২২ এপ্রিলে এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি চিঠি দেয়।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিঠি পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক স্বপন কুমার চৌধুরী স্বাক্ষরিত একটি পত্রে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়কে অবহিত করা হয়েছে। একই সাথে ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে আগামী ১০ মে’র মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ১৮০ কোটি টাকা আমানত ফেরত প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ সম্পর্কিত সর্বশেষ অগ্রগতি বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অফিসকে অবহিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এর আগে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু তহবিলের ৫০৮ কোটি টাকা, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মচারী অবসরভাতা তহবিলের ১৭ কোটি টাকা এবং বিআইডব্লিউটিএ বেনাভোলেন্ট ফান্ডের চার কোটি ১৫ লাখ টাকার দু’টি স্থায়ী আমানতের অর্থও ফেরত দিতে পারেনি ফারমার্স ব্যাংক। এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করে। এ রকম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি আসছে। কিন্তু ব্যাংকটির তহবিল এখন বলা চলে শূণ্যের কোটায় নেমে এসেছে। ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করায় ব্যাংকটি নগদ টাকার তীব্র সঙ্কটে পড়েছে। তারা প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংকে আমানতকারীদের সুরক্ষার জন্য নগদ জমার হারও (সিআরআর) সংরক্ষণ করতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা শুধু কাগজে-কলমে ছাড়া বাস্তবে সম্ভব হবে না। তবে সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ২০০ কোটি টাকার তহবিল ফারমার্স ব্যাংকে জোগান দেয়ার কথা রয়েছে। এটা হলে হয়তো তখন কিছু একটা করা যাবে বলে ওই সূত্র জানায়।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/315057