৩ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:২৩

ইসলামে শ্রমিকের প্রতি আচরণ ও অধিকার

ড. মোবারক হোসাইন : (এক)
ইসলাম কালজয়ী ও শাশ্বত এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার নাম। ইসলাম মানুষের সাথে সুন্দর আচরণ, মানবিক মর্যাদা ও অধিকার সুরক্ষার পুরো নিশ্চয়তা বিধান করেছে। ইসলাম ন্যায়সঙ্গত শ্রম প্রদান করা ও শ্রমিকের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “মানুষ তা পায় যা সে চেষ্টা করে। আর এই যে, তার কর্ম অচিরেই দেখানো হবে। অতঃপর তাকে দেয়া হবে উত্তম প্রতিদান।” (সূরা নাজম : ৩৯-৪১) ইসলাম শ্রমজীবী মানুষকে মর্যাদার আসনে সমাসীন করে। শ্রমিকদের অধিকারসমূহ নির্ধারণ করেছে। আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে আরবে তথা গোটা বিশ্বেই যখন অরাজকতার অন্ধকার বিরাজিত ছিল, তখনই সত্য, ন্যায় ও সাম্যের আলোকবর্তিকা নিয়ে বিশ্বমানবতার পরম সুহৃদ হিসেবে প্রবর্তিত হয়েছিল এই কালজয়ী ইসলাম ও মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ও বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ আদর্শ মানবসমাজ গঠনে সক্ষম হয়েছিলেন। যেখানে প্রতিটি মানুষের শুধু নয় বরং প্রতিটি সৃষ্টির অধিকার স্বীকৃত হয়ে আছে। ইসলামে শ্রম ও শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদা যথাযথভাবে স্বীকৃত। মুহাম্মদ (সা)-এর আদর্শই শ্রমিকদের একমাত্র মুক্তির পথ। ইবনে মাজাহ হাদিসে এসেছে- রাসূল (সা) ওফাতকালীন সময়ে যে উপদেশ প্রদান করেছেন তা হলো, তোমরা নামায এবং অধীনদের ব্যাপারে সাবধান থেকো। এখানে অধীন বলতে কাজের লোক বা শ্রমিক, যারা কারও অধীনে শ্রমের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আঞ্জাম দিয়ে থাকেন। রাসূল (সা) আরও বলেন, “তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার অধীনস্থদের নিকট উত্তম।”
শ্রমের পরিচয় : শ্রম শব্দের আভিধানিক অর্থ মেহনত, দৈহিক খাটুনি, শারীরিক পরিশ্রম ইত্যাদি। অর্থনীতির পরিভাষায়, “পারিশ্রমিকের বিনিময়ে উৎপাদনকার্যে নিয়োজিত মানুষের শারীরিক ও মানসিক সকল প্রকার কর্মপ্রচেষ্টাকে শ্রম বলে।” অধ্যাপক মার্শাল শ্রমের সংজ্ঞায় বলেন, Any exertion of mind or of body undergone partly or of wholly with a view to some good other then pleasure derived directly form the work. অর্থাৎ “মানসিক অথবা শারীরিক যে কোনো প্রকার আংশিক অথবা সম্পূর্ণ পরিশ্রম যা আনন্দ ছাড়া অন্য কোনো ধরনের উপকার সরাসরি পাওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়, তাকে শ্রম বলে।” ইসলামী অর্থনীতির পরিভাষায় শ্রমের পরিচয় বলা যায়, “মানবতার কল্যাণ, নৈতিক উন্নয়ন, সৃষ্টির সেবা ও উৎপাদনে নিয়োজিত সকল কায়িক ও মানসিক শক্তিকে শ্রম বলে।” বাহ্যত এ শ্রম উৎপাদন কার্যে ব্যবহৃত হোক কিংবা পারিশ্রমিক না থাকুক অথবা সে পারিশ্রমিক নগদ অর্থ হউক কিংবা অন্য কিছু এবং শ্রমের পার্থিব মূল্য না থাকলেও পারলৌকিক মূল্য থাকবে।
শ্রমের প্রকারভেদ : ইসলামে সাধারণত শ্রমকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা:
শারীরিক শ্রম: শারীরিক শ্রম হলো পুঁজিবিহীন জীবিকা অর্জনের জন্য দৈহিক পরিশ্রম। যেমন- রিকশাচালক, দিনমজুরদের দৈনন্দিন শ্রম।
শৈল্পিক শ্রম : শৈল্পিক শ্রম বলতে যে কাজে শিল্প ও কৌশলবিদ্যাকে অধিক পরিমাণে খাটানো হয়। যেমন- অঙ্কন, হস্তশিল্প, স্থাপনা ইত্যাদি।

বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রম: বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রম বলতে ঐ সকল পুঁজিহীন শ্রমকে বুঝায়, যেগুলোতে দেহের চেয়ে মস্তিষ্ককে বেশি খাটানো হয়। যেমন- শিক্ষকতা, ডাক্তারি, আইন পেশা ইত্যাদি।
শ্রমিকের পরিচয় : শ্রমিকের ইংরেজি প্রতিশব্দ Labour আর আরবিতে বলা হয় আমেল। সাধারণ অর্থে যারা পরিশ্রম করে তাদেরকেই শ্রমিক বলা হয়। প্রচলিত অর্থে সমাজে বা রাষ্ট্রে যারা অন্যের অধীনে অর্থের বিনিময়ে পরিশ্রম করে তাদেরকে শ্রমিক বলা হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রত্যেক মানুষকে তার গোলামি করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর আল্লাহর বিধান মতো কাজ করার নামই আমল। এক অর্থে প্রতিটি মুসলমান শ্রমিক হিসেবে শ্রম দিয়ে থাকেন। একজন প্রেসিডেন্টও শ্রম দিয়ে থাকেন, আবার একজন দিনমজুরও শ্রম দিয়ে থাকেন- এ অর্থে সবাই শ্রমিক। সাধারণত দৃষ্টিতে শ্রমিক বলতে কারখানায় কায়িক শ্রমে নিয়োজিত কেউ, রিকশা চালক, কুলি-মজুরসহ হাজারো পেশায় নিয়োজিত কোটি কোটি শ্রমিক যারা মূলত কায়িক শ্রমে নিয়োজিত। কিন্তু শ্রম আইনে সবাই শ্রমিক কিনা কিংবা শ্রম আইনের আওতায় সবাই পড়েন কিনা সেটি বিবেচনার দাবি রাখে। বাংলাদেশের শ্রম আইনের ২(৬৫) ধারায় বলা হয়েছে ‘শ্রমিক’ অর্থ শিক্ষাধীনসহ কোন ব্যক্তি, তাহার চাকরির শর্তাবলি প্রকাশ্য বা উহ্য যে ভাবেই থাকুক না কেন, যিনি কোন প্রতিষ্ঠানে বা শিল্পে সরাসরিভাবে বা কোন ঠিকাদার-এর (যে নামেই অভিহিত হউক না কেন) মাধ্যমে মজুরি বা অর্থের বিনিময়ে কোন দক্ষ, অদক্ষ, কায়িক, কারিগরি, ব্যবসা উন্নয়নমূলক অথবা কেরানিগিরির কাজ করার জন্য নিযুক্ত হন, কিন্তু প্রধানত প্রশাসনিক (তদারকি কর্মকর্তা) বা ব্যবস্থাপনামূলক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবেন না।

মালিকের পরিচয় : অর্থনীতির পরিভাষায়, যারা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানায় কর্মকর্তার অধীনে শ্রমিক-কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন, তারাই শ্রমিক-শ্রমজীবী মানুষ। আর যারা শ্রমিকদের কাজে নিয়োগ করেন, তাদের নিকট থেকে যথাযথভাবে কাজ আদায় করেন এবং শ্রমের বিনিময়ে মজুরি বা বেতন-ভাতা প্রদান করেন, তারাই মালিক।

ইসলামে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক ও আচরণ : পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় শ্রমিককে একজন অর্থনৈতিক জীব হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তার কাছ থেকে বাড়তি উৎপাদনের মাধ্যমে কীভাবে মুনাফার অঙ্ক স্ফীত করা যায় সেদিকেই দৃষ্টি থাকে মালিকের। আমাদের শ্রম আইনে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক হচ্ছে প্রভু-ভৃত্তের সমতুল্য। ফলে শ্রমিক-মালিকের পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি সৎ গুণাবলির সমাবেশ না হয়ে সৃষ্টি হয় পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা। অথচ ইসলাম ভাইয়ের সম্পর্ক উল্লেখ করে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য উভয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইসলামে মালিক-শ্রমিকের সম্পর্কের ভিত্তি ভ্রাতৃত্বের ওপর রাখা হয়েছে। শ্রমিকদের সাথে সদ্ব্যবহার, তাদের বেতন-ভাতা ও মৌলিক চাহিদা পূরণ ইত্যাদি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর বাণীসমূহ দ্বারা বৈপ্লবিক ও মানবিক শ্রমনীতির সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়। মালিকদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সে শ্রমিকের শ্রম টাকার বিনিময়ে গ্রহণ করেছে। কিন্তু সে শ্রমিককে কিনে নেয়নি যে, সে ইচ্ছামত শ্রমিক থেকে শ্রম নেবে। এ জন্য সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ইসলাম মালিক ও শ্রমিক পরস্পরের প্রতি কিছু দায়িত্ব অর্পণ করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, “সর্বোত্তম শ্রমিক সেই যে শক্তিশালী ও আমানতদার।” (সূরা কাসাস : ২৬) অপর আয়াতে আল্লাহ্তায়ালা বলেন, “আর মনে রাখবে কোনো জিনিস সম্পর্কে কখনো এ কথা বলবে না যে, আমি কাল এ কাজ করব।” (সূরা কাহাফ : ২৩) মালিক ও শ্রমিকের প্রতি আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ্তাআলা বলেন, ‘ওয়াদা পূর্ণ কর! ওয়াদা সম্পর্কে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।” (সূরা বণী ইসরাঈল : ৩৪) নবী (সা.) বলেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারি নেই তার ঈমান নেই।’ মালিকের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করা, অপচয় না করা, আত্মসাৎ না করা, সঠিক হিসাব পেশ করা একজন শ্রমিকের দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেন, ‘কাউকে কোন ব্যাপারে দায়িত্ব প্রদান করা হলে সে তার নিজের কাজ যত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব তদ্রƒপ না করলে কিয়ামতের দিন তাকে উল্টা করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কারো ওপর কোন দায়িত্ব অর্পিত হলে সে যদি এক টুকরো সুতা বা তার চেয়েও কোন ক্ষুদ্র জিনিস খেয়ানত করে তবে কিয়ামতের দিন খেয়ানতের বোঝা মাথায় করে সে উত্থিত হবে।’ আল্লাহপাক বলেন, “এদেরকে বেদনাদায়ক শাস্তি প্রদান করা হবে যারা তাৎফিক অর্থাৎ মাপে কম-বেশ করে। নিজের হক নেয়ার সময় পুরোপুরি আদায় করে নেয় কিন্তু অন্যকে মেপে দিতে গেলেই কম দেয়।” (সূরা মুতাফ্ফিফিন : ১-৩) তাৎফিক অর্থ ঐ সমস্ত মালিক, মজদুরকে যারা নির্ধারিত পারিশ্রমিক পুরোপুরি উসুল করেনা ও কাজে গাফিলতি করে। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর আদর্শে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তারা সকলেই আল্লাহ্তায়ালার বান্দা ও পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন, “তোমাদের অধীন ব্যক্তিরা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ্ যে ভাইকে যে ভাইয়ের অধীন করে দিয়েছেন, তাকে তাই খাওয়াতে হবে, যা সে নিজে খায় এবং তাকে তাই পরতে দিতে হবে যা সে নিজে পরিধান করে।” (সহিহুল বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, “শক্তি সামর্থ্যরে অতিরিক্ত কাজ শ্রমিকদের ওপর চাপাবে না। যদি তার সামর্থ্যরে অতিরিক্ত কোনো কাজ তাকে দাও তাহলে সে কাজে তাকে সাহায্য কর।” (সহিহুল বুখারি ও মুসলিম) মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্মচারীদের কর্তব্য হলো শ্রমিকদের সাথে মিলেমিশে থাকা, কথাবার্তা, ওঠা-বসার ক্ষেত্রে ইসলামী ভ্রাতৃত্বসুলভ ব্যবহার ও আচার-আচরণ অবলম্বন করা, মৃত্যু, রোগ-শোক ও অন্যান্য ঘটনা-দুর্ঘটনাকালে নিজেরা উপস্থিত থেকে সহানুভূতি ও সহৃদয় আচরণ গ্রহণ করা।
বর্তমানে মালিকের প্রতি শ্রমিক পোষণ করে ঘৃণা ও বিদ্বেষ এবং শ্রমিকের প্রতি মালিক পোষণ করে সন্দেহ ও অবিশ্বাস। ইসলামের ওপর উভয়ে প্রতিষ্ঠিত না থাকায় আজকের এই পরিণতি। অথচ ইসলাম উভয়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কের কথা বলেছিল। একজন শ্রমিক তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে শুধু ন্যায্য পারিশ্রমিকই নয় বরং সাথে সাথে লাভ করতে পারতো আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের সুসংবাদ। রাসূল (সা) বলেন, ‘তিন শ্রেণির লোকদের দ্বিগুণ সওয়াব দেয়া হবে। তাদের একজন, যে নিজের মালিকের হক আদায় করে এবং সঙ্গে আল্লাহর হকও।’ তিনি আরো বলেন, ‘যে অধীনস্থ খাদেম আল্লাহ ও তার মালিকের অনুগত থেকে দায়িত্ব পালন করে তাকে মালিকের সত্তর বছর পূর্বে বেহেশতে প্রবেশ করানো হবে।’

ইসলামে সকল পেশাই মর্যাদাপূর্ণ : মহানবী (সা)-এর আগমনের পর মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষের পরিবর্তে এক সৌভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বৈষম্যের সকল দেয়াল ভেঙে দিয়ে তিনি ঘোষণা করেন ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ, মালিক-শ্রমিক, আরবীয়-অনারবীয় সকলেই সমান ও পরস্পরের ভাই। সর্বপ্রকার জুলুমের তিনি অবসান ঘটান। তিনি আরো বলেন, ‘যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্যরা নিরাপদ নয় সে মুমিন নয়’। ইসলাম কোন কাজকেই ঘৃণা করেনি। শ্রমের বিনিময়ে উপার্জনকে মহানবী শ্রেষ্ঠতম উপার্জন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘শ্রমজীবীর উপার্জনই শ্রেষ্ঠতর যদি সে সৎ উপার্জনশীল হয়।’ তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘কোন ধরনের উপার্জন শ্রেষ্ঠতর?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘নিজের শ্রমলব্ধ উপার্জন।’ ইসলাম সকল বৈধ পেশাকে উৎসাহিত করে এবং সকল পেশার মানুষকে সমান সম্মান করে। সম্পদ, বংশ ও পেশার কারণে মানুষের মর্যাদা নিরূপিত হয় না। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নিরূপিত হয় নৈতিকতা, নিষ্ঠা ও তাকওয়ার ভিত্তিতে। (সূরা হুজুরাত : ১৩) কাজেই যে কোন পেশার লোক সম্মানের পাত্র। রাসূলূল্লাহ (সা) বলেন, ‘তোমাদের কারোর নিজ পিঠে কাঠের বোঝা বয়ে এনে বিক্রি করা কারো কাছে হাত পাতার চেয়ে উত্তম। তাকে (প্রার্থীকে) সে কিছু দিক বা না দিক।’ (বুখারি : ২/৭৩০) ভিক্ষার প্রতি নিরুৎসাহিত করে ভিক্ষার হাতগুলোকে শ্রমিকের হাতে রূপান্তর করেছেন হজরত মুহাম্মদ (সা)। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে ওয়াদাবদ্ধ হবে যে সে কখনো ভিক্ষা করবে না, তার জান্নাতের ব্যাপারে আমি দায়িত্বগ্রহণ করব।’ (আবু দাউদ : ২/৪২৭) উপার্জনের জন্য শ্রমে লিপ্ত থাকাকে তিনি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ বলে উল্লেখ করেছেন। এক লোক রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছ দিয়ে গমন করলে সাহাবায়ে কেরাম লোকটির শক্তি, স্বাস্থ্য ও উদ্দীপনা দেখে বলতে লাগলেন, এই লোকটি যদি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে থাকত! রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ‘লোকটি যদি তার ছোট ছোট সন্তান অথবা তার বৃদ্ধ মাতা-পিতার জন্য উপার্জন কিংবা নিজেকে পরনির্ভরতা থেকে মুক্ত রাখতে উপার্জনের চেষ্টায় বেরিয়ে থাকে, তাহলে সে আল্লাহর পথেই রয়েছে।’ (হাইসামি : ৪/৩২৫)
শ্রমিকের জন্য ক্ষমাপ্রাপ্তির ঘোষণাও করেছেন তিনি। একটি হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি শ্রমজনিত কারণে ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যা যাপন করে, সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েই তার সন্ধ্যা অতিবাহিত করে।’

 

http://www.dailysangram.com/post/329019