প্রচণ্ড বৃষ্টিতে সয়লাব রাজধানীর আরামবাগ এলাকা
১ মে ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:০০

যানজট-জলজটে চরম ভোগান্তি

যানজট-জলজটে চরম ভোগান্তির শিকার রাজধানীবাসী। গতকালও ঢাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে মূল সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। কোনো কোনো সড়কে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে যায়। দুই-তিন ঘণ্টা পর কিছু সড়কের পানি সরে গেলেও অনেক সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে বেশির ভাগ সড়কেই সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজট।

গতকাল বেলা ১১টার পর থেকেই রাজধানীর আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। মধ্য দুপুরে চার দিক ছেয়ে যায় নিকষ কালো অন্ধকারে। এরপর শুরু হয় কানফাটা শব্দে বজ্রপাত সাথে ভারী বর্ষণ। প্রায় দেড় ঘণ্টা চলে এ অবস্থা। এতে মূল সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই পানি জমে যায়। অনেক সড়কে সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি চলার কারণে সৃষ্টি হয় কাদাপানি। এ ছাড়া সড়কগুলো সরু হয়ে যাওয়ার কারণে জনসাধারণের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

কমলাপুর থেকে শাহজাহানপুরগামী সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। বিকেল ৫টার সময়ও এ সড়কের কয়েকটি স্থানে হাঁটুপানি জমে থাকতে দেখা যায়। ওই সড়কে এক দিকে রাস্তা কেটে রাখা হয়েছে। অন্য প্রান্তে সিমেন্টের বিশাল পাইপের সারি। এতে ওই সড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। পানির মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে কয়েকটি সিএনজি ও প্রাইভেট কার অচল হয়ে যেতে দেখা যায়।
আরামবাগের সিএনজি পাম্প স্টেশন এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়। এ পানির মধ্য দিয়ে কোনো গাড়ি গেলেই পানিতে নদীর ঢেউ জেগে ওঠে। বাসাবো আহমদবাগ এলাকার অলিগলিতে পানি জমে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই সড়কগুলোতে হাঁটুপানি জমে ছিল বলে এলাকার বাসিন্দারা জানান।
হাতিরঝিল সংলগ্ন নূর নগর জামে মসজিদের সামনের সড়কটি বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে যাচ্ছে। এতে বিয়াম অডিটোরিয়াম থেকে হাতিরঝিল পর্যন্ত সড়ক দিয়ে চলাচলের কোনো উপায় থাকে না। মসজিদ কমিটির সদস্য মো: রওশন আলী নয়া দিগন্তকে জানান, এ সড়কে কয়েকটি বাসা, বিয়াম স্কুল-কলেজ ও অডিটোরিয়াম, মসজিদ ও একটি মাদরাসা রয়েছে। বিয়াম অডিটোরিয়ামে মন্ত্রী-এমপিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ লোকজন চলাফেরা করেন। হাতিরঝিলের পাশেই সড়কটি। কিন্তু এ সড়কে তেমন নজর দেয়া হচ্ছে না। হাতিরঝিল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটু সুনজর দিলেই এলাকাবাসীকে আর দুর্ভোগ পোহাতে হয় না।

গতকালের বৃষ্টিতে বরাবরের মতোই মিরপুরবাসীকে অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল পথ নির্মাণকাজ চলার কারণে সংশ্লিষ্ট সব সড়কেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এর পাশাপাশি সড়ক সরু হয়ে যাওয়ার কারণে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। গণপরিবহনে চলাচলকারীদের মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও আসতেই তিন-চার ঘণ্টা লেগে যায়। বৃষ্টি হলেই কালশী সড়কে যেন পদ্মার ঢেউ উঠতে থাকে। গতকাল কালশী সড়কের আশপাশ ফুটপাথও পানিতে তলিয়ে যায়। পথচারীদের চলাচলও কষ্টকর হয়ে ওঠে। এ ছাড়া সম্প্রতি রাস্তা কিছুটা উঁচু করার পর এখন আশপাশের দোকানেও পানি ঢুকে যাচ্ছে। কালশী খাল দখল হয়ে যাওয়ার কারণে এখন পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
শাকিল আহমেদ নামে এক বাসযাত্রী বলেন, দুপুর ১২টায় মিরপুর-১০ থেকে ফার্মগেট আসার জন্য বাসে উঠি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র পর্যন্ত আসতেই সাড়ে তিন ঘণ্টা লেগে গেছে। শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া সড়কে পানি আর পানি। রাস্তা থেকে পানি যাওয়ার কোনো পথ নেই। গাড়ি চলাচল করলেই পানিতে প্রচণ্ড ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে।

এ ছাড়া ধানমন্ডির মিরপুর রোডের ধানমন্ডি ২৭ নম্বরসহ আশাপাশ অনেক স্থানে সড়কে পানি জমে যায়। খিলগাঁও, মালিবাগ রেলগেট, রাজারবাগ, গ্রিনরোড, খিলক্ষেতসহ বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়।
কালবৈশাখীর ঝড়ে রাজধানীর বিজয়নগরে মাঝ সড়কে বিশাল আকৃতির একটি গাছ উপড়ে পড়ে। এতে বিজয়নগর থেকে পুরানা পল্টনমুখী সড়কের এক পাশে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পল্টনমুখী যানবাহনগুলো আটকে পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান বলেন, সকালে প্রচণ্ড ঝড় বয়ে যায়। আমরা দোকানের শাটার বন্ধ করে দিই। পরে ঝড় থেমে গেলে বাইরে এসে দেখি রাস্তার পাশে থাকা বিশাল আকৃতির এই গাছটি রাস্তার ওপর পড়ে আছে। পরে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে।
প্রতি বছর বর্ষা মওসুম এলেই ঢাকার পথঘাঠ পানিতে তলিয়ে যায়। সৃষ্টি হয় জলজটের। প্রতি বছরই মন্ত্রী-মেয়ররা নানা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না রাজধানীবাসীর।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/314851