মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভে এক পঙ্গু ফিলিস্তিনী
৩০ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৫:১৯

ফিলিস্তিনীদের আর মৃত্যুভয় নেই’

অস্তিত্ব রক্ষায় মৃত্যুকে তুচ্ছজ্ঞান করছেন ফিলিস্তিনীরা। মৃত্যুতে তাদের আর ভয় নেই। নিজভূমি যেখানে খোয়ানোর পথে সেখানে জীবনের দাবিই রেখে লাভ কোথায়। মৃত্যুকে উপেক্ষা করে ভূমি রক্ষায় সংগ্রামে নেমেছেন গাজা উপত্যকার তরুণরা। ইসরাইলী সমরাস্ত্রের মুখোমুখি দাঁড়াতে পিছপা হচ্ছেন না তারা। গত সপ্তাহে নারীদের নেতৃত্বে উত্তাল বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিল গাজা। এরই ধারাবাহিকতায় ভূমি দিবসের পঞ্চম সপ্তাহের কর্মসূচিতেও ছিল তরুণদের প্রাধান্য। এ দিনের বিক্ষোভে নিহত হয়েছেন ৪ ফিলিস্তিনী। আহত হয়েছেন আরও ৯৫৫ জন। গাজা উপত্যকাকে ‘খোলা আকাশের নিচে বৃহত্তম কারাগার’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে। আলজাজিরার প্রতিবেদক জানিয়েছেন, তরুণরা আর ইসরাইলী সমরাস্ত্রকে ভয় পাচ্ছেন না। কর্মসূচি সফল করতে তাজা গুলি উপেক্ষা করে তারা এগিয়ে যাচ্ছে সীমান্ত বেষ্টনীর দিকে।যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইসরাইলী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে।হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। তবুও থামছে না ইসরাইলী মারণাস্ত্রের আঘাত। ভূমি দিবসের কর্মসূচি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭ জনে। ১৯৪৮ সালে শরণার্থী হওয়া লাখ লাখ মানুষকে ইসরাইলের দখলে থাকা এলাকায় ফিরতে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে সীমান্ত বরাবর ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ নামের এ বিক্ষোভের ডাক দেয় হামাসসহ বিভিন্ন সংগঠন।

গত মাসে পশ্চিম তীরে প্রধানমন্ত্রী রামি হামাদাল্লাহর গাড়ি বহরে হামলায় এক ফিলিস্তিনী গোয়েন্দা কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ করেছে হামাস। গাজা উপত্যকার হামাস সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়াদ আল বোসম শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাকে ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের পুরো গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানকে এজন্য দায়ী করছি না তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তা ব্রেগেডিয়ার জেনারেল বাহা বালুসা এই হামলার পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন। এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ।হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ ফিলিস্তিনী প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরগত ১৩ মার্চ উত্তরাঞ্চলীয় গাজা উপত্যকার ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রিত ইরেজ চেকপোস্ট অতিক্রম করবার পরেই হামলার মুখে পড়ে ফিলিস্তিনী প্রধানমন্ত্রী রামি হামাদাল্লাহর গাড়ি বহর। ওই গাড়িবহরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন গোয়েন্দা প্রধান মাজেদ ফারাজ। হামলার পর তারা অক্ষত অবস্থায় বিকেলে রামাল্লায় ফিরে গেলেও আহত হন সাত নিরাপত্তা কর্মী।
ওই ঘটনার তদন্ত শেষ হওয়ার কথা জানিয়ে শনিবার গাজায় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী দল হামাস। হামাস সরকারের মুখপাত্র ইয়াদ আল বোসম বলেন, আমাদের তদন্ত ছিল স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ। আমরা ফিলিস্তিনী গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করছি না। তবে আমাদের তদন্তে আমরা নিশ্চিত হয়েছি গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বাহা বালুসা এই হামলার পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন।বাহা বালুসা ফিলিস্তিনী গোয়েন্দা প্রধান মাজেদ ফারাজের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন বলে জানান হামাসের এই মুখপাত্র। তিনি বলেন, ওই হামলার নেপথ্যের মূল অপরাধীকে আটকের পর ব্যাপক ও বিস্তারিত তদন্ত চালানোর কথাও জানান তিনি।ইয়াদ আল বোসম বলেন, আটককৃত ব্যক্তি স্বীকারোক্তি দেয় উচ্চ পদস্থ ফিলিস্তিনী গোয়েন্দা কর্মকর্তা তাকে রাস্তার পাশে বোমা পুঁতে রেখে হামাদাল্লাহকে হত্যার জন্য নিয়োগ করে।তবে ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের অন্যতম দল ফাতাহ-এর মুখপাত্র ওসামা আল কাসেমি এক বিবৃতিতে হামাসের আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। উল্টো তিনি তিনি অভিযোগ করেছেন, বোসম ‘বিভ্রান্তকর নাটকে’ জড়িত হয়েছেন।অবশ্য আগেই এই হামলার জন্য হামাসকেই দায়ী করেছিলেন ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরে হামলার পর ফিলিস্তিনী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, আমরা চাই না তারা তদন্ত করুক, আমরা তাদের কাছে কোনও তথ্য চাই না, আমরা তাদরে কাছে কিছুই চাই না কারণ আমরা জানি যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের মধ্যে হামাসও রয়েছে।শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে হামাস স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আটককৃত ব্যক্তির স্বীকারোক্তির ভিডিও সাংবাদিকদের দেখায়। মুখপাত্র বোসম জানান, আটককৃত ব্যক্তি আরও জানিয়েছেন গাজা ছাড়াও মিশরেরর সিনাই উপত্যকায় হামলা ও গুপ্তহত্যার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।বোসম জানান, এই গ্রুপটি গত অক্টোবরে গাজার পুলিশ প্রধান তওফিক আবু নাইমের ওপর হামলার সঙ্গেও জড়িত। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ওই গ্রুপটির সন্দেহভাজন লক্ষ্যের মধ্যে আরও রয়েছে, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার কর্মকর্তা, হামাস নেতৃবৃন্দ, ফিলিস্তিনী শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে প্রায়শই গাজা উপত্যকা অতিক্রম করা মিশরীয় প্রতিনিধিরা।

http://www.dailysangram.com/post/328690