৩০ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৫:১২

কে পাবে কোন কার্ড?

দেখা অদেখা

সালাহউদ্দিন বাবর
আগামী নির্বাচনে জনগণ কাদের লাল কার্ড আর কাদের সবুজ কার্ড দেখাবে, তা জানতে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। আগামী ডিসেম্বর মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর দেখা যাবে, কোন দল কী রঙের কার্ড পায়। রাজনীতির ময়দানে এখন খেলা চলছে। আর এই খেলার বিচারক কিন্তু দেশের সব শ্রেণীর মানুষ। জনগণের পছন্দই শেষ কথা, তারা যাতে অবাধে তাদের স্বাধীন মতামত দিতে পারে, সে ব্যবস্থাই করতে হবে। তবে দেশের পরিস্থিতি যা তাতে ধারণা করা যায়, জনগণের এই গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার বিষয়টি সহজ হবে না। কোনো কোনো রাজনৈতিক শক্তির ভাবভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করলে মনে হবেÑ ভোটের ফলাফলের মর্যাদা দেয়া নয়, যেনতেনভাবে তাদের বিজয়ী হওয়ার অভিপ্রায়ই মুখ্য। এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ গণতন্ত্রের ও শিষ্টাচারের পরিপন্থী। অথচ সবাই গণতন্ত্রের প্রতি মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তির প্রতি তারা চরম অসহিষ্ণুতা দেখিয়ে আসছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের আচরণ অপরপক্ষের সাংবিধানিক অধিকারকেও ক্ষুণœ করছে। এমন পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার পথে বিরাট প্রতিবন্ধক। তখন জনগণ হতাশ ও ক্ষুব্ধ হবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

নির্বাচনের আগে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দল ক্ষমতায় গিয়ে কী করবে, প্রথা অনুসারে এর একটি দলিল তারা প্রকাশ করে থাকে। এই দলিলটি নানাভাবে আকর্ষণীয়, করা হয়। হাজারো তথ্যবহুল প্রতিশ্রুতি থাকে এতে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ভোটের পর তার আর কোনো গুরুত্ব থাকে না। ক্ষমতায় যারা যান তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন না। শুধু নির্বাচন পর্যন্তই এর গুরুত্ব। তারপর সব অঙ্গীকার বুদবুদের মতো মিলিয়ে যায়। এসব কর্মসূচি যদি গুরুত্ব না পায় তবে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। আগামী নির্বাচনের আগে আবার রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করবে অবশ্যই। তাতে বহু প্রতিশ্রুতি থাকবে, কিন্তু কয়েকটি বিষয়ে সব দলের সত্যিকার কমিটমেন্ট বা প্রতিশ্রুতি থাকা উচিত। যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, জাতির কাছে এই আন্তরিক প্রতিশ্রুতি তাদের দিতে হবে যে, এ ওয়াদা তারা অবশ্যই অবশ্যই পালন করবেন। কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, জবাবদিহিমূলক প্রশাসন, সুশাসন ও আইনের শাসন কায়েম, দুর্নীতি দূরীকরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও জনজীবনকে নিরাপদ করা, মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন, বেকারত্ব নিরসন, শিক্ষাব্যবস্থায় নৈরাজ্য, ইত্যাদি দূর করা। সমস্যা দূর হলে দেশ এগিয়ে যাবে, জনজীবনের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির হাল ভালো নয়। গণতন্ত্রের প্রাণ হচ্ছেÑ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান। পৃথিবীর সর্বত্র এ কথাই ছড়িয়ে পড়েছে যে, বাংলাদেশে নির্বাচনব্যবস্থা কলুষিত। এখানে জনগণের ভোটাধিকার ছিনতাই হয়ে যায়। সত্যিকার জনমত প্রতিফলিত হয় না। ভোটারেরা ভোটকেন্দ্রের কাছেও ঘেঁষতে পারেন না। তারা দূরে দাঁড়িয়ে দেখেন, পেশিশক্তিওয়ালারা তাদের ভোটের অধিকার হরণ করছে। পাশাপাশি, ক্ষমতাসীন মহল প্রশাসনকে প্রভাবিত করে নিজেদের কথিত বিজয় নিশ্চিত করে নিচ্ছে। ভোটের অনিয়ম এমনও আছে যে, নির্বাচনী আসনে একক প্রার্থী বিনাভোটেই ‘বিজয়ী’ হয়ে যান। এভাবে আমাদের গণতন্ত্র পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে দল বা ব্যক্তি বিজয়ী হয় বটে, গণতন্ত্র হেরে যায়। নির্বাচনে এসব অনিয়ম, কারচুপি ও জালিয়াতি নির্বাচন কমিশনের সামনেই হয়ে থাকে। কিন্তু শক্তি-সামর্থ্য ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কমিশন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশে সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে আগে জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুশাসন না থাকায় জনগণ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অবজ্ঞা, অবহেলা পেয়ে থাকে। সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। প্রশাসন দেশের সাধারণ মানুষের সাথে প্রজার মতো আচরণ করে থাকে। একটি বৈধ ও প্রয়োজনীয় কাজের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তার কোনো সুরাহা পাওয়া সম্ভব হয় না নাগরিকের পক্ষে। দেশের সর্বোচ্চ আইন, সংবিধান আইন বিভাগকে দায়িত্ব দিয়েছে প্রশাসনের জবাবদিহি করার। কিন্তু আইন বিভাগ এখন এই দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর প্রধান কারণÑ প্রশাসনিক বিভাগ তথা নির্বাহীরা আর আইন বিভাগের সদস্যরা একই দলের লোক। তাই কে কার কাছে জবাবদিহি করবেন? বস্তুত এমনটি হয়েছে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির কারণে। বিগত ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন একদলীয় হওয়ায় সেখানে আইন বিভাগে কোনো বিরোধীদলীয় সদস্যের যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই চার বছর ধরে দেশে প্রশাসন কোনো জবাবদিহি ছাড়াই চলছে। এ অবস্থায় এখন সুশাসনের অনুপস্থিতি নিয়ে কেউ কথা বলছেন না। ভবিষ্যতে দেশে যাতে এমন শূন্যতা সৃষ্টি না হয়, তথা সুশাসনের অনুপস্থিতি না ঘটে; সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সব দলকে জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রভাবশালী মহলসহ সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। লক্ষ করা যায়, অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে অনেকই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে থাকে। আইন অমান্যকারী যত ক্ষমতাধরই হোক কেন, তাকে অনুকম্পা দেখানো উচিত নয়। অতীতে দেখা গেছে, শক্তিধরেরা দেশের সর্বোচ্চ আইনকে পর্যন্ত অমান্য করেছে। কিন্তু নানা স্বার্থের বিবেচনায় সেসব ঘোরতর অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। অথচ সংবিধানের ব্যত্যয় করা মারাত্মক অন্যায়। আইনের শাসন রক্ষায় আইন রচয়িতা এবং আইনের প্রয়োগকারীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে এখন আইন অমান্য করার নানা রূপ লক্ষ করা যাচ্ছে। অপরাধীরা নিত্যনতুন প্রক্রিয়ায় অপরাধ করে চলেছে। এ পেক্ষাপটে আইনও হালনাগাদ করা দরকার। যারা আইন প্রয়োগ করবেন, তাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তা প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু আইন প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে যে, তারা আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে থাকেন। অন্যায়কারী যখন বিচারকের সম্মুখে যাবে, তখন অবশ্যই তার ন্যায়বিচার পাওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। অনুরাগ ও বিরাগের ঊর্ধ্বে উঠে সুবিচার করার জন্য, বিচারালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যাতে ন্যায়বিচার করতে পারেন সে জন্য তাদের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে। বিচারকদের সম্মুখে থাকবে শুধু আইন, কোনো অপচ্ছায়া তাদের মাথার ওপর থাকলে চলবে না। এ ব্যাপারে একটি সুস্পষ্ট অঙ্গীকার আসা জরুরি।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশে এবং বাইরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছাড়াও তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে যেসব ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তার বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৭ সালের ওপর প্রণীত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুতর যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেÑ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, খেয়াল খুশিমতো ও বেআইনিভাবে আটকে রাখা, নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে গুম হওয়া, নাগরিকস্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা, সংবাদমাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় আপস করা। এ ছাড়া, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের নারীদের ওপর চালানো হচ্ছে নানা নির্যাতন। ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে অহরহ। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন কোনো আলোচনা হয় না। অথচ একটি গণতান্ত্রিক দেশে নারীর অধিকার ও মানবাধিকার পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

দেশের উন্নয়ন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মাথাপিছু আয়সহ কয়েকটি সূচকে উন্নতির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু মাথাপিছু আয়ের সাথে ব্যয়ের যে খতিয়ান, তা এত বিস্তর ব্যবধান যে, তাতে ব্যক্তির সত্যিকার জীবনমান বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রমাণিত হয় না। আয় ব্যয়ের বড় ব্যবধান হলে বাস্তব উন্নয়নটা কিভাবে নির্ণয় করা হবে? খাদ্যদ্রব্যের মূলস্ফীতি ঘটছে, চিকিৎসাসেবা নিতে খরচ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে, শিক্ষা খাতে ব্যয় বেড়েই চলেছে, জীবনধারণের জন্য আরো যত উপাদানের প্রয়োজন তা সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে ব্যয় অনেক বেড়েছে। আজো অসংখ্য মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। এসবের সুরাহা ব্যতিরেকে জাতীয় উন্নয়ন আসলে সম্ভব হবে কিভাবে? সরকারের উন্নয়নের কথা যেন ছেলে ভুলানোর কাহিনী না হয়। আগামী নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় যেতে চান তাদের এর বাস্তব চিত্র সম্পর্কে অবহিত থাকা উচিত।

উন্নয়নের একটি সূচক হচ্ছে, বেকারত্ব কতটা কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশে বেকারত্বের বর্তমান যে পরিসংখ্যান তা উদ্বেগজনক। প্রকৃতপক্ষে দেশে হু হু করে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। তার চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। কিন্তু সম্পদের সীমাবদ্ধতা, অবকাঠামো সমস্যা, জ্বালানি সঙ্কট আর শিল্প উদ্যোক্তাদের আস্থাহীনতা বাড়ছে; ফলে বিনিয়োগ হচ্ছে না নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে না নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বলছে, বিশ্বে বেকারত্ব বাড়ছেÑ এমন ২০টি দেশের তালিকায় ১২তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ দিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশে প্রতি বছর ২৭ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে ঢুকছে। অথচ সরকারি বেসরকারিভাবে কাজ পাচ্ছে মাত্র এক লাখ ৮৯ হাজার মানুষ। ফলে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক নাগরিক বেকার থাকছে। এতে মাথাপিছু আয় এবং উৎপাদন কমছে। এ অবস্থায় আগামীতে দেশে বেকারের সংখ্যা ছয় কোটিতে দাঁড়াবে। দলগুলোকে বলতে হবে তারা ক্ষমতায় গেলে দেশে কী পরিমাণ কর্মসংস্থান করবেন এবং তা কত বছরের মধ্যে। কেননা এ দেশে অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব। এর সাথে জড়িত রয়েছে অনেক সামাজিক ইস্যু। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সাথে বেকারত্বের একটি সংযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন কোনো-না-কোনো স্থানে হত্যা, হামলা, নির্যাতন, গুম, ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এমন মারাত্মক অপরাধ নিয়মিত ঘটায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটছে। দেশের সর্বত্র এ নিয়ে ব্যাপক আশঙ্কা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। মাদকের ব্যবহার, এর অপবাণিজ্য দেশে অপরাধপ্রবণতাকে ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলছে। এ ছাড়া মোবাইল ফোনের অপব্যবহারের মাধ্যমে ও ইন্টারনেটভিত্তিক নানা অপরাধ তরুণসমাজে ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ এ সবের প্রতিরোধে তেমন কার্যকর উদ্যোগ নেই। ক্ষমতাও বহু ক্ষেত্রে অপরাধপ্রবণতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তদুপরি, রাষ্ট্রক্ষমতার কাছাকাছি যারা রয়েছেন তাদের স্বার্থ ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের ফলে রক্তাক্ত সঙ্ঘাত সংঘর্ষের সৃষ্টি হচ্ছে। সমাজে ইদানীং যৌন অপরাধ বেড়েছে। নারী ও মেয়ে শিশুরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে যত্রতত্র। অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন বা প্রভাবশালীরা এসব জঘন্য অপরাধে জড়িত থাকে।
সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের দুর্নীতির চিত্র উদ্বেগজনক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুর্নীতি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল টিআইবি সম্প্রতি যে চিত্র প্রকাশ করেছে, সেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৩তম। টিআইবির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি যেভাবে বিস্তৃত হচ্ছে তা উদ্বেগজনক পর্যায়ে। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে অনিয়ম এবং জালিয়াতির ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। এর পেছনে সরকারি কাজে আর্থিক অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনের জন্য যথেষ্ট আইন এবং প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু সেগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। দুর্নীতি কমানোর জন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর জোরালো অঙ্গীকার থাকতে হবে। দেশের নৈতিক শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই, ফলে দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কোনো বাধা অনুভব করছে না। এখন খোদ শিক্ষাব্যবস্থায় দুর্নীতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। অথচ এর কোনো প্রতিবিধান নেই। এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান করা না হলে বাংলাদেশের জন্য ঘোরতর দুর্দিন অপেক্ষা করছে।হ

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/314553