২৯ এপ্রিল ২০১৮, রবিবার, ১২:০৪

মাঝারি ধরনের ঝড় বন্যা হবে এবার

মাঝারি ধরনের ঝড় ও বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে চলতি বছর। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে থাকে প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট এল নিনু অথবা লা নিনা নামক একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়াটি শেষ পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরে সীমাবদ্ধ থাকে না। তা প্রশান্তের গণ্ডি পেরিয়ে ধীরে ধীরে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে শেষ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে এসে শক্তি সঞ্চয় করে। এরই এক পর্যায়ে বাংলাদেশে ঝড় হয় অথবা বর্ষাকালে বেশি বৃষ্টি ঝরিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বলছেন, অতীতে দেখা গেছে যখন বড় কোনো ঝড় অথবা বন্যা হয়েছে বাংলাদেশে এর আগে প্রশান্ত মহাসাগরে লা নিনা অথবা এল নিনু সক্রিয় ছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানোয়ায় অবস্থিত হাওয়াই বিশ^বিদ্যালয়ের প্যাসিফিক ইএনএসও অ্যাপ্লিকেশন কাইমেট সেন্টারের প্রধান বিজ্ঞানী ড. রাশেদ চৌধুরীর এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনু অথবা লা নিনা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এর প্রভাব বাংলাদেশ পর্যন্ত গড়ায়। এ বছর কিছু দুর্বল অথবা মাঝারি ধরনের শক্তিসম্পন্ন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অতীতে বাংলাদেশে যত শক্তিশালী ঝড় আঘাত হেনেছে এর সবই হয় এল নিনু অথবা লা নিনা সংঘটনের সময় হয়েছে অথবা এল নিনু থেকে নিরপেক্ষ পর্যায় অথবা লা নিনা সংঘটিত হয়েছে। তবে বঙ্গোপসাগর অথবা বাংলাদেশ এলাকায় সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় লা নিনা থেকে নিরপেক্ষ অথবা এল নিনু থেকে নিরপেক্ষ হওয়ার পর্যায়ে।

ড. রাশেদ চৌধুরী এ ব্যাপারে অতীতে কিছু বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের উদাহরণ দিয়ে তার বক্তব্যের স্বপক্ষে প্রমাণ হাজির করেছেন। তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের বাগেরহাট এলাকায় যে সিডর আঘাত হেনেছিল তা ছিল মধ্য ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট মাঝারি ধরনের শক্তিসম্পন্ন লা নিনা উদ্ভবের কারণে। সিডরে সরকারি হিসেবে তিন হাজার ৪৪৭ জন মারা গিয়েছিল। তিনি জানান, ২০০৯ সালে ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় ৯০ কিলোমিটার বেগে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় বিজলী আঘাত হানে। ওই সময় প্রশান্ত মহাসাগরে ধীরে ধীরে লা নিনা দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল।

ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানে ২০০৯ সালের ২৫ মে। প্রশান্ত মহাসাগরে ওই সময় লা নিনা দুর্বল হয়ে নিরপেক্ষ অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল। তখন বিষুব রেখা সংলগ্ন প্রশান্ত মহাসাগরের পানি খুবই উষ্ণ অবস্থায় ছিল।
বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস (বিসিএস ১৯৯৩-২০০২) বিগত ২০০ বছরের ঘূর্ণিঝড়ের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। বিবিএসে দেখানো হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে বড় বড় ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিবিএস বলেছে ১৭৯৫ থেকে ১৮৪৫ এবং ১৮৪৬ থেকে ১৮৯৩ সময়ের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে মাত্র তিনটি। ১৮৯৭ থেকে ১৯৪৭ সময়ে মধ্যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে মাত্র ১৩টি। অপর দিকে ১৮৪৮ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় হয়েছে ৫১টি। ১৯৮০ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় এল নিনু অথবা লা নিনা উদ্ভবের পরিমাণও বেড়েছে। ড. রাশেদ চৌধুরী বলেন, এই প্রবণতা সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়বে।

হাওয়াই বিশ^বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ড. রাশেদ চৌধুরী বাংলাদেশের ঝড় ও বন্যা নিয়ে পূর্বাভাস দিলেও বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদেরা দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দেন না। ঝড় সম্বন্ধে তারা বলেন, বাংলাদেশে এ সময়ে ঝড় হয়ে থাকে। এটা কালবৈশাখীর সময়। এর চেয়ে বেশি বলা সম্ভব নয় কারণ এটা খুবই জটিল এটা বিষয়। বেশি হলে তারা এক মাসের পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন। তারা বলেন, আবহাওয়া খুবই অনিশ্চিত একটি বিষয়। এ বিষয়ে পূর্বাভাস সব সময় সঠিক হয় না। তিন অথবা পাঁচ দিনের যে পূর্বাভাস দেয়া হয় তা কার্যকর কিন্তু এর চেয়ে বেশি দেয়া হলে তা কার্যকর হয় না। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আবহাওয়া সব সময় পরিবর্তন হয়ে থাকে।
সামনের মে মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুইটি নি¤œচাপ হতে পারে বলে তারা বলেছেন । এটা থেকে একটি ঘূর্ণিঝড়ও হতে পারে। মে মাসে তিন থেকে চারটি মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী হতে পারে। মে মাসে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/314263