২৯ এপ্রিল ২০১৮, রবিবার, ১২:০৪

নানা রকম ব্যয় সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারে

টাঙ্গাইলে প্রতি কিমি. ৯০.৬৮ লাখ টাকা ; বরগুনায় প্রতি কিমি. ৬১.৯৭ লাখ টাকা ; ময়মনসিংহে প্রতি কিমি. ৪৫.৪৫ লাখ টাকা

সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারে দেশের একেক জেলায় একেক ধরনের ব্যয় হচ্ছে। আর এই ব্যয় ব্যবধানের অঙ্ক নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সড়ক উন্নয়নে মাটির কাজ, প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ এবং সার্ফেসিং প্রতিটি কাজের ব্যয় এলাকাভেদে অনেক বেশি। সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ ব্যয় প্রতি কিলোমিটারে টাঙ্গাইলের সাথে বরগুনা ও ময়মনসিংহের ব্যবধান দাঁড়াচ্ছে ৩০ লাখ টাকা থেকে ৪৫ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়নে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবনা পর্যালোচনা ও কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব জেলায় সড়ক উন্নয়ন ব্যয় প্রতি কিলোমিটারে একই হওয়ার কথা; কিন্তু এই ধরনের গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয়ের বিভাজন থেকে দেখা যায়, এলাকাভেদে একই কাজের ব্যয় প্রতি কিলোমিটার ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা বেশি। টাঙ্গাইল জেলায় কয়েকটি সড়ক উন্নয়নে প্রতি কিমি. ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। কিন্তু একই সময়ে চলমান প্রকল্পে বরগুনা জেলায় প্রতি কিমি. ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এবং ময়মনসিংহ জোনে প্রতি কিম. ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার জেলা মহাসড়ক, করটিয়া-বাসাইল জেলা মহাসড়ক এবং পাকুল্লা-এলাসিন অংশকে যথাযথ মানে ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের বিশ্লেষণে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৯.৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সড়ক প্রকল্পটির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৩ কোটি ১৩ লাখ ১২ হাজার টাকা। এই সড়কটি সখিপুর, মির্জাপুর, কালিহাতি, সাগরদিঘি, ফুলবাড়ি ও ভালুকা অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে টাঙ্গাইলসহ উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ করে। সড়কটির ১০ কিলোমিটার সরু থাকায় প্রায়ই দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। ওভারটেকিং করার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। পাহাড় কাঞ্চনপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে সড়কটি প্রশস্ত করার জন্য জোর তাগিদ দিচ্ছে।

ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, সড়ক সংস্কারে মাটির কাজ প্রতি ঘন মিটারে তিন কোটি ৯ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। যেখানে বাকেরগঞ্জ-বরগুনা সড়ক প্রকল্পে এবং ময়মনসিংহের জেলা সড়ক উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে আড়াই কোটি টাকা করে। এখানে ব্যয় ব্যবধান দাঁড়াচ্ছে ৫৯ লাখ টাকা। প্রতি কিলোমিটার সার্ফেসিং কাজে টাঙ্গাইলে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। একই কাজ বাকেরগঞ্জ-বরগুনা সড়ক প্রকল্পে ধরা হয়েছে ৪৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা এবং ময়মনসিংহের জেলা সড়ক উন্নয়নে ৪১ লাখ টাকা। এখানে ব্যয়ের তফাত ৩২ কোটি টাকার বেশি। কালভার্ট নির্মাণেও ব্যয়ের তিন ধরনের অঙ্ক। টাঙ্গাইলে প্রতি মিটার সাড়ে ১২ লাখ টাকা, বরগুনায় আট লাখ টাকা এবং ময়মনসিংহে ১০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

উল্লেখ্য, অন্যান্য চলমান প্রকল্পের ব্যয় থেকে দেখা যায়, সিলেটে উপজেলাপর্যায়ে প্রতি কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে ব্যয় হবে ৮০ লাখ টাকা, কুমিল্লায় ব্যয় হবে ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
বাস্তবায়নকারী সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সড়কগুলো নির্মাণের জন্য অর্থ ব্যয় হলেও মেরামত ও পুনর্বাসনের জন্য কোনো প্রকল্প নেই। সংস্কার ও মেরামতের জন্য চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন প্রকল্পের মধ্য থেকেই এসব কাজ করা হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদের সাথে আলাপকালে তার অভিমত হলো, অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমেই দুর্নীতি ও অনিয়ম বেশি হয়। এটি হলো কয়েকটি বিভাগের বড় ব্যবসা। কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই এবং উপজেলা পরিষদের সাথে ও জনসম্পৃক্তহীন এসব প্রকল্প। প্রকল্প শুরু হচ্ছে কিন্তু কখনো শেষ হচ্ছে না। মাঠপর্যায়ে দেখা যাবে অনেক সড়ক ও সেতুর কাজ শুরু করা হয়েছিল, কিন্তু তা আর সমাপ্ত হয়নি।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/314247