২৯ এপ্রিল ২০১৮, রবিবার, ১২:০২

টালমাটাল দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা

একের পর এক কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত দেশের ব্যাংকিং খাত। বর্তমান সরকারের সময়ে আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে। ব্যাংকিং খাতে অর্থ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে আমানতের অতিরিক্ত ঋণ (এডিআর বা আইডিআর) বিতরণ করায় এ অবস্থা দেখা দিয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকের আর্থিক সংকট মেটাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আমানত ৫০ শতাংশ রাখার সিদ্ধান্তেও অবস্থার উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। দেশের অধিকাংশ ব্যাংকের অর্থ সংকটের খবর গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা তৈরি করেছে। অন্যদিকে ফারমার্স ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানতের টাকা তুলতে দেয়া হচ্ছে না। এমতাবস্থায় দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ ও বিনিয়োগ বন্ধের খবর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করেছে। বর্তমানে আর্থিক খাতে এসব নেতিবাচক খবরে জনমনে রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করছে। উন্নয়ন ঘটাতে দরকার বিনিয়োগ। অর্থ না থাকলে বিনিয়োগ কোথা থেকে হবে। বিনিয়োগ স্থবিরতায় দেশের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডে ভাটা পড়েছে। সবমিলে দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে।

বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের আলোচনার তুঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ ও বিনিয়োগ বন্ধের খবর। কিছু বিদেশী প্রতিষ্ঠান ও দেশীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর উদ্যোগে ১৯৮৩ সালে গঠিত হয় ইসলামী ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংকটির গ্রাহক ৮৯ লাখ ৫১ হাজার ১৪৯ জন। ইসলামী ব্যাংকে এখন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন সাড়ে ১৩ হাজার। ব্যাংকটির শুরুতে বিদেশীদের অংশ ছিল ৭০ শতাংশের মতো। বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা বদলের পর এই প্রথম বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়ল ব্যাংকটি। টাকার অভাবে ইসলামী ব্যাংক ঋণ দেয়ার কার্যক্রম ছোট করে এনেছে। একসময় আমানতকারীরা ছুটতেন ইসলামী ব্যাংকের পেছনে, এখন দেশের সবচেয়ে বড় এ ব্যাংক আমানতের পেছনে ছুটছে। মালিকানা বদলের পর মাত্র ১৫ মাসেই অব্যবস্থাপনা ও পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণে ব্যাংকটির এই হাল হয়েছে। এর আগে সরকারি খাতের সবচেয়ে ভালো ব্যাংক বেসিক ব্যাংকের একই হাল হয়েছে। সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের কারণে বর্তমান সরকারের সময়েই ব্যাংকটি তীব্র আর্থিক সংকটে আছে।

মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তনের ১৬ মাসের মাথায় ব্যাংকটির এই সংকট দেশের বিশিষ্ট ব্যাংকার, আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের চিন্তায় ফেলেছে। কেননা, দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক সংকটে পড়লে এর প্রভাব পড়ে দেশের পুরো আর্থিক খাতে। এরই মধ্যে কয়েক দফায় ব্যাংক ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন হয়েছে। সর্বশেষ ১৭ এপ্রিল পদত্যাগ করেছেন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান। জানা গেছে, বড় অঙ্কের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন নিয়ে ব্যাংকটির নতুন মালিকদের সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদের দূরত্ব তৈরি হয়। ইসলামী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, পরিবর্তনের আগমুহূর্তেও ব্যাংকটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগযোগ্য তহবিল ছিল। কিন্তু পরিবর্তনের পর তারা যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করেছে, ঋণ দিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। সংকটের কারণও সেটাই। এমনকি অর্থসংকটে পড়ে সরকারের ইসলামী বিনিয়োগ বন্ডে থাকা টাকাও তুলে নিয়েছে ব্যাংকটি।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের শুরু থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকটিতে আমানত এসেছে ১ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা, তবে এ সময়ে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে যে পরিমাণ আমানত এসেছে, তার তিন গুণ ঋণ দিতে হয়েছে ব্যাংকটিকে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) সীমা ৮৯ শতাংশ অতিক্রম করেছে ব্যাংকটি।
২০১৭ সালের শুরুতে ব্যাংকটির আমানত ছিল ৬৭ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা ও ঋণ ৬১ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। ওই সময়ে ব্যাংকটির ইসলামীক বন্ডে বিনিয়োগ ছিল ৫ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের শুরুতে আমানত বেড়ে হয় ৭৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা ও ঋণ বেড়ে হয় ৭০ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত মোটামুটি চললেও চলতি বছরের শুরু থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত আমানত বেড়ে হয় ৭৬ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা ও ঋণ বেড়ে হয় ৭৪ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা।
ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ অনিয়ম : সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মালিকানাধীন ফারমার্স ব্যাংককে আর্থিক খাতের জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০১৩ সালে জুন মাসে ফারমার্স ব্যাংক আরও আটটি ব্যাংকের সঙ্গে লাইসেন্স পেয়েছিল, যা রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। ব্যাংকটি মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়ে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে। বর্তমানে এ সংকট এতটাই তীব্র যে গ্রাহকরা তাদের ছোট-বড় আমানতও তুলতে পারছেন না। নানা আশংকায় ছোট-বড় সব ধরনের গ্রাহক নিজেদের আমানত ওঠানোর আবেদন করে রেখেছেন। কিন্তু ব্যাংক প্রতিবারই তাদের আবেদন ফেরত পাঠাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সংকটে পড়া ফারমার্স ব্যাংক ২০১৭ সালে ৫৩ কোটি টাকা নিট লোকসান করেছে। বছর শেষে ব্যাংকটির আমানত কমে হয়েছে ৪ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। অথচ ব্যাংকটির ঋণ ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা।

হলমার্ক কেলেঙ্কারী: হলমার্ক দুর্নীতি ছিল ব্যাংকিং জগতের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। এ ঘটনা অর্থনীতিবিদদের মতো গোটা দেশের মানুষকে বিস্ময়ে হতবাক করে দিয়েছিল। সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে ২০১০-১২ সময়ের মধ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয় তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে হলমার্ক গ্রুপই হাতিয়ে নেয় আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। এত বড় অর্থ কেলেঙ্কারীর জন্য সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা অফিস মূল অভিযুক্ত হলেও ব্যাংকটির পরিচালনা কর্তৃপক্ষও এর দায় এড়াতে পারে না। এই বিবেচনা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠনের সুপারিশ করে। ২০১২ সালে ভেঙে দেয়া হয়েছিল তখনকার সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ।

বিসমিল্লাহ কেলেঙ্কারী: হলমার্কের রেশ কাটতে না কাটতেই ব্যাংকিং খাতে আরেকটি আঘাত এসে ধাক্কা দেয়। তৈরি হয় গভীর ক্ষত। সেই ক্ষতের নাম বিসমিল্লাহ কেলেঙ্কারী। টেরি টাওয়েলস রপ্তানির ভুয়া তথ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বিসমিল্লাহ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা সোলায়মান আনোয়ার চৌধুরী। ব্যাংকের পরিচালক ও কর্মকর্তাদের সহায়তায় জনতা, প্রাইম, প্রিমিয়ার, শাহজালাল, সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেন তিনি। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে উদ্ঘাটিত হওয়ার পর থেকে খাজা সোলায়মান আনোয়ার চৌধুরী, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান নওরীন হাসিবসহ অন্য পরিচালকরা ২০১৩ সালে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারী: ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি যেন পিছু ছাড়ছে না। একটি আঘাত কাটিয়ে না উঠতেই আরেকটি এসে হাজির। এটা ছিল অনেকটা সুনামির মতো যেন সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি অর্থনীতিবিদদের চোখ কপালে উঠার উপক্রম। সরকারি খাতের সবচেয়ে ভালো ব্যাংক ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। সিএজির প্রতিবেদনে ঋণ বিতরণে অনিয়মের জন্য তৎকালীন চেয়ারম্যানসহ পর্ষদকে দায়ী করা হয়েছে। বেসিক ব্যাংকের ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বা সিএজি কার্যালয়। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক এ সংস্থাটি বলেছে, ব্যাংকটি যে প্রক্রিয়ায় ঋণ অনুমোদন দিয়েছে তা বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে নজিরবিহীন। কোনো রকম বাছ-বিচার ছাড়াই স্বেচ্ছাচারীভাবে যাকে খুশি তাকে ঋণ দেয়া হয়েছে। যে কারণে এক সময়ের সবচেয়ে লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটি লোকসানে পড়েছে। যার বিরূপ প্রভাবে বেসিক ব্যাংক বর্তমানে গভীর সংকটে। সিএজির এই প্রতিবেদনে মোট ৫ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকার গুরুতর অনিয়ম উঠে এসেছে। এতে অবৈধ ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের ক্ষেত্রে ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এদিকে ক্রাউন প্রোপার্টিজ নামে এক কোম্পানির স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের হিসাবে ৮ কোটি টাকা জমা হয় ডেল্টা সিস্টেমসের হিসাব থেকে। এই ক্রাউন প্রোপার্টিজের মালিক আবদুল হাই বাচ্চুর আপন ছোট ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না।

অগ্রণী ব্যাংকের দুর্নীতি: দুর্নীতির আরেকটি খড়গ নামে অগ্রণী ব্যাংকে। অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ম্যানেজ করে ব্যাংক কর্মকর্তা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের যোগসাজশে সারাদেশের ১৯টি শাখা থেকে ২৬টি প্রতিষ্ঠান ঋণের নামে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার অনিয়ম করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অগ্রণী ব্যাংকের সিলেট বোয়ালজুর বাজার শাখায় প্রায় ৪৬ লাখ টাকা চুরির ঘটনায় বাবুল রঞ্জন পুরাকায়স্তকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আর বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ শাখার প্রায় ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মিসেস সাফিয়া বেগম এবং ঋণ বিতরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (লোন অফিসার) সৈয়দ শিওন সাইফকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এভাবে শত শত কোটি টাকার ঋণ অনিয়মে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত বহু অপরাধী সহজে পার পেয়ে যাচ্ছেন।
এনআরবি ব্যাংকে অনিয়ম: দুর্নীতির ধারাবাহিকতা চলমান রয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক সম্পর্কে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনআরবিসির বোর্ড সভায় অনুপস্থিত পরিচালকদের স্বাক্ষর জাল করে উপস্থিতি দেখিয়ে পর্ষদ সভার কার্যবিররণী করা হয়েছে। নিয়ম ভেঙে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যানের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে। ব্যাংকটি গঠনের সময় মূলধন আনায় অনিয়ম, অনিবাসীদের পরিবর্তে বেনামে বাংলাদেশে বসবাসকারী ব্যক্তি কর্তৃক ব্যাংকের শেয়ার কেনা, বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ প্রদান এবং ব্যাংক হতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টির সাথে পর্ষদ সদস্য ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সম্পৃক্ততার কথা আসে প্রতিবেদনে।

এ ব্যাপারে সংসদীয় কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংকগুলো যেসব অনিয়ম করেছে, পড়লেই গা শিউরে ওঠে। এসব অনিয়মের দায় বোর্ডকে নিতে হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে একবার কেউ ব্যাংকের লাইসেন্স পেলে তা বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু ফারমার্স ব্যাংকে যা হয়েছে, তাতে এই ব্যাংকের অবশ্যই মরে যাওয়া উচিত। তিনি বলেন, নানা অনিয়মে জর্জরিত বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া উচিত। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনিয়ম কমিয়ে আনতে একটি ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হলে তা একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।
ব্যাংকের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির ব্যাপারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতার সংকট চলছে। সংকটের পুরোটাই খেলাপি ঋণকে ঘিরে। অধিকাংশ ঋণগ্রহীতা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণের অর্থ পরিশোধ না করার কৌশল জেনে গেছেন। ফলে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। এটি আর্থিক খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ জন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় রাজনীতিকরণ ও নিয়ন্ত্রকের ব্যর্থতাই দায়ী।
এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো রকম অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং খাতে যে অরাজকতা তৈরী হয়েছে তাতে ব্যাংকের পরিচালকরা দায় এড়াতে পারেন না। হয়তোবা তারা জেনে করেছেন নতুবা না জেনে করেছেন এ দুই অবস্থার জন্যে তারাই দায়ী। তিনি বলেন, ব্যাংক পরিচালকদের যোগসাজশের মাধ্যমে ঋণ নেয়া অনৈতিক। এখানে অশুভ ইঙ্গিত রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে এ ধরনের ‘কানেক্টিং লেনদেন’ বন্ধ করা উচিত।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত বলেন, অর্থনীতির নৈতিকতা নিয়ে কথা বলা চ্যালেঞ্জিং কাজ। দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের ঝুঁকির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক ব্যাংকের আর্থিক হিসাবে সমস্যা রয়েছে। ঠিকমতো হিসাবপত্র করলে দেশের অর্ধেক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ব্যাংকিং খাতে ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক প্রভাব ও যোগসাজসের মাধ্যমে লাগামহীন জালিয়াতি, দুর্নীতি ও ঋণ খেলাপীর দৌরাত্ম্য চলছে। নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অসহায়ত্বের ফলে এ খাতে অরাজকতা ও ঝুঁকি বিরাজ করছে।

 

http://www.dailysangram.com/post/328565