২ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ১০:১৭

কিশোর-কিশোরী ক্লাবে ১৬০ কোটি টাকা নাশতাতেই

সরকারি অর্থে হচ্ছে ৪৮৮৩টি ক্লাব; কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী করা দরকার : বিশ্ব ব্যাংক

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বেশ কিছু নির্বাচনমুখী উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। নির্বাচনের আগে সরকার কিশোর-কিশোরীদের জন্য সারা দেশে চার হাজার ৮৮৩টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সারা দেশে বাড়িভাড়া নিয়ে ইউনিয়ন ও পৌরসভায় এই ক্লাবগুলো স্থাপন করা হবে। এসব ক্লাবে নাশতাতেই মোট ব্যয় হবে তিন বছরে ১৫৯ কোটি ৯৬ কোটি ৭০ হাজার টাকা। বিভিন্ন স্তরের প্রান্তিক কিশোর-কিশোরীদের বাল্যবিয়ে ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে সক্ষম করা এবং বয়ঃসন্ধিকালে দ্রুত শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যই এই ক্লাব করা। আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পেশ করা হবে বলে একনেক সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিশুমৃত্যুর হার ও বাল্যবিবাহ রোধে এখনো উন্নতির সুযোগ রয়েছে। বর্তমানের যুবসমাজই পরে সমাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে। বয়ঃসন্ধিকালে একজন কিশোর-কিশোরীর দ্রুত শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সাধিত হয়। এই সময়ে তাদের আত্মসচেতনতা খুবই জরুরি। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাল্যবিয়ে রোধ, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ, নারী অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা; সর্বোপরি কিশোর-কিশোরীবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই এই প্রকল্পের পরিকল্পনা। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫১ কোটি ৫৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ৬৪টি জেলার চার হাজার ৫৫৩টি ইউনিয়ন এবং ৩৩০টি পৌরসভায় এসব ক্লাব নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে প্রকল্প মেয়াদে চার লাখ ৩৯ হাজার ৪৭০ জনকে এসব ক্লাবে যুক্ত করা হবে। এখানে সারা দেশে বাড়িভাড়া করে সরকার এসব ক্লাব স্থাপন করবে। আর এর জন্য ব্যয় হবে ৯১ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বই ও স্টেশনারি সামগ্রীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪ কোটি টাকা। ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯২ হাজার টাকার খেলার উপকরণ কেনা হবে। চার লাখ ৩৯ হাজার ৪৭০ জনকে কারাতে প্রশিক্ষণ দিতে ব্যয় হবে ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২ হাজার ৯৪৬ জন নারী উদ্যোক্তার পেছনে ২ কোটি ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। মহিলা কাউন্সিলর, মেম্বার ও অন্যদের সম্মানীতে ব্যয় ৩৫ কোটি ১৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ব্যয় হবে ১০ কোটি ৯০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। ১২৮টি মোটরসাইকেল ও এক হাজার ৯৫টি বাইসাইকেল কেনার জন্য ব্যয় হবে সাড়ে ৫ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের তিনজন মহিলা সদস্য অন্তর্ভুক্ত করাতে তাদেরকে জনপ্রতি বছরে দুই হাজার টাকা করে সম্মানী দেয়া হবে। প্রতি বছর একটি করে বিদেশসফরের জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। প্রতি বছর ২২ জনকে পুরস্কার দেয়া হবে। আর এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

এই প্রকল্পের ব্যাপারে বিশ^ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. জাহিদ হোসেনের মতে, আমাদের দেশের কিশোর-কিশোরীদের উন্নয়নের জন্য যেসব প্রকল্প নেয়া হবে তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী হওয়া উচিত। তাদেরকে স্কুলের প্রতি মনোযোগী করা মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি, বইপত্র পাওয়া নিশ্চিত করা এবং প্রতিষ্ঠানে তাদের বিনোদনের মাধ্যমে তাদের সুষ্ঠু সাংস্কৃতিচর্চার ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, ক্রিকেট ও ফুটবলের মতো জনপ্রিয় খেলার প্রতি তাদেরকে এখন থেকেই প্রশিক্ষণ দেয়া। ক্লাবের মাধ্যমে করার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হলে তারা শিক্ষামুখী হবে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/306868