২৭ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৫১

৩ মাসে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ৩৬ হাজার কোটি টাকা

দেশের শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনে প্রায় প্রতিদিনই কমছে সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। একইসঙ্গে কমছে বাজার মূলধনও। গত তিন মাসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই ধারা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে গেল সপ্তাহে দেশের দুই বাজারের সূচক ছিল নিম্নমুখী ধারায়। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট।
ফলে এর প্রভাব পুঁজিবাজারেও লেগেছে। ব্যাংকগুলোয় প্রায় ৭০-৭৫ হাজার কোটি টাকার কুঋণ রয়েছে। এসব কুঋণের পেছনে আরো প্রায় ৬০-৬৫ হাজার কোটি টাকা চ্যানেলের বাইরে রয়েছে। এ ছাড়া এডিআর রেশিও কমানোর ফলে ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত আমানত সংগ্রহে মনোযোগ দিতে হচ্ছে। ফলে সুদের হার বাড়ছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহে অ্যাগ্রেসিভ ভূমিকা নিয়েছে। ফলে মুদ্রাবাজারে ব্যাপক চাপ রয়েছে। অন্যদিকে মুদ্রানীতিতে অর্থের প্রবাহ কমানো হয়েছে। ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

বাজার পর্যালোচনায় জানা গেছে, চলতি বছরের ৩রা জানুয়ারি ডিএসই’র বাজার মূলধন সর্বোচ্চ ৪ লাখ ২৮ হাজার ৫০৯ কোটি ৫৪ লাখ ৫১ হাজার টাকায় পৌঁছায়। শেয়ারবাজারে অব্যাহত পতনে চলতি মাসের ২৫শে মার্চ বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯১ হাজার ৮১০ কোটি ৮ লাখ ৯ হাজার টাকায়। অর্থাৎ এ সময়ে ডিএসইর বাজার মূলধন হারিয়েছে ৩৬ হাজার ৬৯৯ কোটি ৪৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা বা সাড়ে ৮ শতাংশ। অপর শেয়ারবাজার সিএসইতে চলতি বছরের ৩রা জানুয়ারি বাজার মূলধন সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৫৯ হাজার ১৪৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৪০ টাকায় পৌঁছায়। পতনের কারণে চলতি মাসের ২৫শে মার্চ বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২২ হাজার ৯৮৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ সময়ে সিএসই’র বাজার মূলধন ৩৬ হাজার ১৫৮ কোটি ৯৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৪০ টাকা বা ১০ শতাংশ কমেছে।

ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০১৭ সালের ২৬শে নভেম্বর সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্টে পৌঁছায়। কিন্তু সর্বশেষ কার্যদিবস অর্থাৎ চলতি বছরের ২৫শে মার্চ ডিএসইএক্স দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৭০ পয়েন্টে। ডিএসই’র ডিএসইএক্স ৯ মাস পিছনে অবস্থান করছে। এর আগে ২০১৭ সালের ২১শে জুন সূচকটি ৫ হাজার ৫৬৭ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। অপর দিকে সিএসই’র সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭ হাজার ১৭৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সিএসই’র এ সূচকও ৯ মাস আগের অবস্থায় অবস্থান করছে। এর আগে সিএএসপিআই ২০১৭ সালের ২০ জুন ১৭ হাজার ৮৯ পয়েন্টে অবস্থান করছিল।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে সার্বিক সূচক কমেছে ১৪০ পয়েন্ট। তবে গড় লেনদেন কমেছে ৭৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সার্বিক সূচক কমেছে ৪১৭ পয়েন্ট। আর আগের সপ্তাহের তুলনায় গড় লেনদেন ৫ কোটি টাকা কমে হয়েছে ১৮ কোটি টাকা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে সূচকের ওঠানামায় শেষ হয় ডিএসই’র কার্যক্রম। শুরুটা হয় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায়। প্রথম কার্যদিবসে সূচক ১ পয়েন্ট বাড়লেও পরের দুই কার্যদিবসেই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স যথাক্রমে কমে ৫৮ ও ১৫ পয়েন্ট। তবে পরের দুই দিনই বৃদ্ধি পায় সূচক। শেষ দিন ৯ পয়েন্ট বাড়লেও সার্বিক সূচক আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৪০ পয়েন্ট কমে সপ্তাহ শেষ হয় ৫ হাজার ৫৮১ পয়েন্টে। তবে ডিএসইতে সূচক কমলেও বেড়েছে গড় লেনদেন। প্রথম কার্যদিবসে ৬৪ কোটি টাকা কমে লেনদেন হয় ২৭৫ কোটি টাকার। তবে দ্বিতীয় কার্যদিবসে লেনদেন ২৩৭ কোটি টাকা বেড়ে সপ্তাহের সর্বোচ্চ লেনদেন হয় ৫১২ কোটি টাকা। তবে তৃতীয় কার্যদিবসে লেনদেন আবারো কমে ২৭০ কোটি টাকা। এরপর চতুর্থ ও শেষ কার্যদিবসে লেনদেন ১১০ ও ৩৬ কোটি টাকা বেড়ে সপ্তাহ শেষ হয় ৩৮৮ কোটি টাকার লেনদেনে।
লেনদেন হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বাড়ে ৫২টির; কমে ২৬৯টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ১৯টির দর। গড় লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭৮ কোটি টাকা বেড়ে হয় ৩৫৪ কোটি টাকা।

ডিএসই’র মতো একই ধারায় লেনদেন হয় সিএসইতেও। প্রথম কার্যদিবসে প্রধান সূচক সিএএসপিআই সূচক বাড়ে ১০ পয়েন্ট। এরপর তিন
কার্যদিবসেই সূচক কমে যথাক্রমে ১৮৯, ২৩ ও ২১২ পয়েন্ট। তবে শেষ কার্যদিবসে বাড়ে ২৩৯ পয়েন্ট। তবে সার্বিকভাবে সূচক আগের সপ্তাহের তুলনায় ৪১৭ পয়েন্ট কমে সপ্তাহ শেষ হয় ১৭ হাজার ২৩৯ পয়েন্টে। সূচকের সঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতেও কমেছে গড় লেনদেন। প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২১ কোটি টাকার। এরপর দ্বিতীয় কার্যদিবসে লেনদেন ৮ কোটি টাকা কমে হয় ১২ কোটি টাকা। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ কার্যদিবসে যথাক্রমে ১৭ কোটি ও ২৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়। তবে শেষ কার্যদিবসে লেনদেন ১৪ কোটি টাকা কমে হয় ১৪ কোটি টাকা। সিএসইতে লেনদেন হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বাড়ে ৫২টির, কমে ২১০টির। অপরিবর্তিত ছিল ১৬টির দর। সপ্তাহের ব্যবধানে গড় লেনদেন ৫ কোটি টাকা কমে হয় ১৮ কোটি টাকা।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=110653