কোটাপ্রথার সংস্কারের দাবিতে ঢাবিতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি
২৬ মার্চ ২০১৮, সোমবার, ৮:৫৮

কোটা সংস্কারপ্রত্যাশীদের অভিনব প্রতিবাদ

কোটা সংস্কার দাবিতে চলমান আন্দোলন থেকে এক শিক্ষার্থীকে ধরে নিলো ছাত্রলীগ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়। আন্দোলন চলাকালে গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে তাকে ধরে নেয়া হয়।
ওই শিক্ষার্থীর নাম বিন ইয়ামিন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্র।
জানা যায়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছিলেন ইয়ামিনসহ অন্যরা। এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার মোহাম্মদ নিজামুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম এহতেশাম, পরিকল্পনা ও কর্মসূচিবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেনসহ বেশ কয়েক জন সেখান থেকে তাকে মধুর কেন্টিনে ধরে আনেন। পরে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন মধুর কেন্টিনের গোলঘরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইনবিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সও সেখানে আসেন। ৪৫ মিনিট ধরে তাকে গোলঘরে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়।

ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশেই তাকে ধরে নেয়া হয় বলে ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়।
কোটা সংস্কারপ্রত্যাশীদের আন্দোলনকে পণ্ড করতে তাদের অন্যতম সমন্বয়ককে এভাবে ধরে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। এর আগেও গত জানুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে করা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক মশিউর রহমান সাদিককে ধরে নিয়ে মারধর এবং সাধারণ ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করার মাধ্যমে আন্দোলন পণ্ড করে ছাত্রলীগ। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেলের বিরোধিতা করে শিক্ষার্থীদের করা আন্দোলনে এক ধরনের হস্তক্ষেপ করেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্দোলনকারীদের একজন নয়া দিগন্তকে বলেন, ইয়ামিনকে ধরে আনার উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের ভয় দেখিয়ে চলমান আন্দোলনকে পণ্ড করা। এর আগেও কোটা সংস্কার চেয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জনকে হুমকি-ধামকি দেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রের প্রথম সারির ছাত্রলীগ নেতারা। এভাবে একের পর এক যৌক্তিক দাবিতে করা আন্দোলনে হস্তক্ষেপ করলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেরুদণ্ডহীন জাতি তৈরি হবে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। আর সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন ফোন রিসিভ করেননি।
এ দিকে গলায় সার্টিফিকেট ঝুলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত রাস্তা পরিষ্কারের অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে কোটা সংস্কার প্রার্থীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।

এর আগে গত ১৮ মার্চ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলা প্রত্যাহার ও সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন তারা। তাদের দাবিগুলো হলোÑ কোটা সংস্কার করে ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা, কোটার শূন্য পদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটার কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া, চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাটমার্ক ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক ফারুক হোসেন বলেন, কোটা সংস্কার দেশের ১৫ কোটি মানুষের দাবি। দেশের উন্নয়নে মেধাবীদের নেতৃত্ব দরকার। সে ক্ষেত্রে কোটা সংস্কারের দাবি যুক্তিসঙ্গত। আর সেই যৌক্তিকপর্যায় থেকেই আমাদের এ আন্দোলন।
কবি নজরুল বিশ^বিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, সারা বাংলাদেশের অংশ হিসেবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

গতকাল বিকেলে শিক্ষার্থীরা গলায় পরীক্ষার সনদপত্র ঝুলিয়ে ও হাতে ঝাড়– নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এক র্যালি বের করেন। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ এই স্লোগানে তারা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ ত্রিশাল পৌর শহরের বিভিন্ন সড়কে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন। পরে ত্রিশাল প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ ছাত্রছাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কবি নজরুল বিশ^বিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মো: জাহিদুল হক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ হাওলাদার, আলফাজ আলী, সাঈদ আনোয়ার প্রমুখ।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা কোটা সংস্কারের কথা বলেছি, কোটাব্যবস্থা বাতিল করতে বলছি না। কোটা অবশ্যই থাকবে কিন্তু একটি সহনশীল পর্যায়ে থাকতে হবে। কোটার কারণে যেন মেধাবীরা বঞ্চিত না হন সে জন্যই আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।

এ সময় বক্তারা চট্টগ্রামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকৃত শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ জানান।
টাঙ্গাইলে ঝাড়ুদান কর্মসূচি পালন
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের সন্তোষে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে গলায় সনদপত্র ঝুলিয়ে ঝাড়ুদান কর্মসূচি পালন করেছেন। গতকাল সকালে তারা বিশ^বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে থেকে ঝাড়ু হাতে একটি মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পরে শহীদ মিনারের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন বিশ^বিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রাসেল কবির ও আব্দুল বাছেদ, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের মিজানুর রহমান, ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স বিভাগের নাজমুল হাসান ও আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নিয়ে আসতে হবে। কোটায় যোগ্যপ্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধায় নিয়োগ দেয়া, চাকরি পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি একাধিকবার ব্যবহার না করা এবং চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাটমার্কস ও বয়সসীমা নির্ধারণ করাসহ বিভিন্ন দাবি জানান তারা। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান রেখে নাতি-নাতনী কোটা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/304962