২৭ ডিসেম্বর ২০১৭, বুধবার, ৯:২৭

সহনীয় মাত্রায় ঘুষ-দুর্নীতির পরামর্শ’

পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী

অবিলম্বে নাহিদের পদত্যাগ দাবি বিভিন্ন সংগঠনসহ বিশিষ্টজনদের

সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খাওয়া এবং দুর্নীতির ইস্যুতে দেয়া শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বক্তব্যে দেশজুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। পাশাপাশি চলছে নানা ধরনের ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ। মন্ত্রীর এমন বক্তব্যে ঘুষ-দুর্নীতির আরও বিস্তার ঘটার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেকে। দায়িত্বশীল পদে আসীন ব্যক্তির এমন বক্তব্যে উদ্বেগ আর হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা। কেউ কেউ মন্ত্রীর বক্তব্যকে জাতির জন্য ভয়ংকর বার্তাবহ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ঘুষ-দুর্নীতির ব্যাপারে সহনশীল অবস্থানের কারণে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবি, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, শিক্ষক, অভিভাবকসহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন।

যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মূল ব্যক্তির (শিক্ষামন্ত্রী) কাছ থেকে আসা নমনীয় অবস্থান দুঃখজনক। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিলেন। তাকে এ পদে রাখলে আগামীতে সাধারণ মানুষের মাঝে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরি হবে। নৈতিক কারণেই শিক্ষামন্ত্রীর এ পদ থেকে চলে যাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ) দুর্নীতির মধুর হাঁড়ি হিসেবে শিক্ষকদের কাছে পরিচিত। রোববার শিক্ষামন্ত্রী সেখানে এক অনুষ্ঠানে ঘুষ ও দুর্নীতির ব্যাপারে নমনীয় বক্তব্য দেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘দায়িত্ব নেয়ার পর সব সংস্থার সঙ্গে আমি বসেছি। তখন বলেছি, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। সব জায়গায় এ কথা বললেও ইইডির (শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর) সভায় বলেছি, আপনারা ভালো কাজ করবেন। আপনারা ঘুষ খাবেন, কিন্তু সহনশীল হয়ে খাবেন। কেননা আমার সাহসই নাই বলার যে, আপনারা ঘুষ খায়েন না।’ ওই সভায় শিক্ষামন্ত্রী ঘুষ-দুর্নীতি প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, ‘খালি অফিসাররাই যে চোর তা না, মন্ত্রীরাও চোর। আমিও চোর। জগতে এমনই চলে আসছে। তবে সবাইকে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।’
তার ওই বক্তব্য অনলাইন ও টেলিভিশনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অল্পসময়ের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ওইদিনই (রোববার) ছাত্র ফেডারেশন শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। সংগঠনের সভাপতি এমএম পারভেজ লেলিন এবং সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ এতে বলেন, একজন শিক্ষামন্ত্রী কী মাত্রার বেহায়া হলে প্রকাশ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন! প্রকাশ্যে জনগণের সঙ্গে এ ক্রাইমের পর তার মন্ত্রী পদে থাকার কোনো এখতিয়ার নেই। নেতারা শিক্ষামন্ত্রীকে শিক্ষার্থী তথা জনগণের দুশমন আখ্যায়িত করে বলেন, এই শিক্ষামন্ত্রীকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। কেননা, তার ওই বক্তব্যের মাধ্যমে আবারও সামনে চলে এলো, কি পরিমাণ বেহায়া-চোর-দুর্নীতিবাজদের দ্বারা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে। বিবৃতিতে শিক্ষা খাতে বিভিন্ন অপ্রীতিকর দিক উল্লেখ করে আরও বলা হয়, শিক্ষামন্ত্রী ঘুষ, দুর্নীতি, দলীয় নিয়োগ আর নিজের দলের জমিদারিতে পরিণত করেছেন সমগ্র শিক্ষা ক্ষেত্র। এতে চোর শিক্ষামন্ত্রীসহ গণশত্রু-ভোটচোরদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

মঙ্গলবার টিআইবি ও ছাত্র ইউনিয়ন পৃথক বিবৃতিতে শিক্ষামন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছে। পাশাপাশি উভয় সংগঠন ও সংস্থা শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে। টিআইবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মন্ত্রীর নিজেকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা দেয়া সাহসিকতার পরিচায়ক হতে পারে। তবে একই সঙ্গে এ সৎসাহসের যথার্থতার স্বার্থেই নৈতিক অবস্থান থেকে তিনি পদত্যাগ করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন- এ প্রত্যাশা করছে টিআইবি। এতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর ওই বক্তব্য যেমন জাতির জন্য উদ্বেগজনক, তেমনি এতে কেবল তার নিজের বিভ্রান্তি ও হতাশার প্রতিফলন ঘটেছে। মন্ত্রীর বক্তব্যে এটাও পরিষ্কার যে, ইতিপূর্বে শিক্ষা খাতে টিআইবির একাধিক গবেষণায় ওঠে আসা ব্যাপক মাত্রার দুর্নীতির চিত্র ও বিশ্লেষণকে তিনি শুধু ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার ও উপেক্ষাই করেননি, বরং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়েছেন। ফলে তাকে এখন নিজেকে দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের হাতে জিম্মি ভাবতে হচ্ছে। তার যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সৎসাহস ও দৃঢ়তা থাকত, তাহলে এরূপ অসহায়ত্বের মাধ্যমে দুর্নীতির আরও বিস্তার ঘটানোর প্রেসক্রিপশন দেয়ার প্রয়োজন ছিল না। সেক্ষেত্রে তিনি তার দাবি অনুযায়ী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য-সহনশীলতার কার্যকর প্রয়োগ করতে পারতেন।’

ড. জামান আরও বলেন, ‘ঢালাওভাবে সব সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রীকে যেভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে আখ্যায়িত করার অপচেষ্টা শিক্ষামন্ত্রী করেছেন, তা অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী কর্তৃক মন্ত্রিপরিষদের সব সহকর্মীসহ নিজেকে চোর সম্বোধন জনমনে সরকার সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ধারণার অবতারণা করেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোসহ সব উন্নয়নমূলক ভবিষ্যৎ রূপরেখায় সব ধরনের ঘুষ লেনদেন ও দুর্নীতি নির্মূলের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এরই মধ্যে লক্ষ্যপূরণে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এমন সময়ে জাতির ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে নিবেদিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো সংবেদনশীল একটি মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ধরনের বক্তব্য কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়।’
এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর ঘুষ-দুর্নীতি সম্পর্কে উল্লিখিত বক্তব্য দেয়ার পর খোদ শিক্ষা খাত সংশ্লিষ্টরা নানা তথ্য জানাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর দফতরগুলোয় যেসব অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী আসীন, তারা শিক্ষামন্ত্রীর পরোক্ষ প্রশ্রয়ে বহাল আছেন। কেননা প্রায় ৫ বছর আগে বিগত শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ডিআইএ’র কিছু কর্মকর্তার তালিকা তৈরি করে। ওইসব কর্মকর্তাকে ডিআইএ থেকে সরিয়ে দিতে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু চিহ্নিতদের অধিকাংশই বহাল আছেন। কয়েকজনকে সরিয়ে দিলেও তাদের প্রাইজ পোস্টিং দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) একটি উপপরিচালক পদে বসানো হয়েছে। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সর্বশেষ প্রদর্শক পদোন্নতিতে লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে তিন বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিতে সুপারিশ করেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশ বহাল আছেন। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে কর্মরত আছেন শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক এক এপিএস। বিতর্কিত ওই কর্মকর্তার নেতৃত্বে শিক্ষা খাতে একটি সিন্ডিকেট আছে বলে অভিযোগ আছে। ওই কর্মকর্তা এতটাই শক্তিশালী যে, তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠনের পরও প্রতিবেদন তৈরি করা যায়নি। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব কোন অদৃশ্য কারণে তদন্ত কাজ শেষ করেননি। বহুল সমালোচনার পরও তাকে এপিএস পদে বহাল রাখা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের পরামর্শে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এরপর তাকে ঢাকা বোর্ডে পদায়ন করা হয়। জানা গেছে, ওই এপিএসের সিন্ডিকেটই শিক্ষা খাত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দুর্নীতির দায়ে চিহ্নিতদের বেশিরভাগই ওই কর্মকর্তার অনুগত বলে জানা গেছে।

শিক্ষামন্ত্রীর ওই বক্তব্য এবং শিক্ষা খাতের দুর্নীতি প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে তিনটি দিক প্রমাণিত হয়েছে। তা হচ্ছে- শিক্ষা ক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতি তিনি স্বীকার করে নিলেন। এক্ষেত্রে তার অবস্থান কী, তা স্পষ্ট হয়েছে। এ বক্তব্যের পর দুর্নীতিবাজরা আরও উৎসাহিত হবে। ড. ইসলাম বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি মানুষ পছন্দ করে না। বরং শিক্ষায় ঘুষ-দুর্নীতি চললে পুরো দেশ পঙ্গু হয়ে যাবে। তাই জাতীয় স্বার্থেই ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। শূন্য সহনশীল অবস্থান নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে গণমাধ্যম সঙ্গে নিয়ে জেহাদ ঘোষণা করতে হবে। নইলে তার কারণেই সরকার বিপাকে পড়বে। কেননা সামনে নির্বাচন। যত দিন যাবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে তত বেশি প্রতিবেদন প্রকাশ হবে। আর এ কারণে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ শিক্ষাবিদ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ শিক্ষা খাতে কিছু ভালো মানুষ আছেন। কিন্তু পুরো শিক্ষা খাতে কিছু অসৎ ব্যক্তি আছেন। তাদের কারণে শিক্ষা খাত দুর্নীতিপ্রবণ হয়ে পড়েছে। টিআইবির একাধিক গবেষণায় বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া দিনের পর দিন গণমাধ্যম এ নিয়ে লিখেছে। কিন্তু আমি শুনেছি বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্নীতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর নানা অজুহাতে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি বিষোদগার করা হয়েছে। অথচ তার মতো মন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল, গণমাধ্যমের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে তিনি দুর্নীতিবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশে উৎসাহ দেবেন। গণমাধ্যমকে প্রতিবেদন প্রকাশে স্বাধীনতা দেবেন। তা না করে প্রতিবেদন এড়িয়ে যাওয়া এবং দুর্নীতি, প্রশ্নফাঁস ইত্যাদি এড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে প্রকারান্তরে দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে।

গণসাক্ষরতা অভিযানের (ক্যাম্পে) নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষামন্ত্রী অতীত বা বর্তমানের যে রেফারেন্স দিয়েই বক্তৃতা দেন না কেন, সেটা ঘুষ ও দুর্নীতির বাস্তবচিত্র স্বীকার করে নিয়েছেন। এমন সত্যি কথা বলার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু আমরা ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত রাজনৈতিক অবস্থান প্রত্যাশা করি। ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পর্যায় থেকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণও ঘোষণা করা হবে। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে সেই শক্ত অবস্থান প্রকাশ পায়নি। এতে বরং দুর্নীতিবাজরা উৎসাহিত হতে পারে। কেননা, দুর্নীতিবাজরা তক্কে তক্কে থাকে। দুর্বল অবস্থান প্রকাশ পেলে তারা সুযোগ নিতে পারে। তার এমন বক্তব্য কাক্সিক্ষত ছিল না এক কারণে যে, আমরা তারই নেতৃত্বে শিক্ষা আন্দোলন করেছি। সেখানে বৈষম্য, দুর্নীতি ও নানা নৈরাজ্যের বিষয় ছিল। এসবের বিরুদ্ধে তার সোচ্চার কণ্ঠ ছিল। তাই এমন ব্যক্তির মুখ থেকে দুর্বলতা প্রকাশ পেলে সেটা আমাদের জন্য হতাশার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আমার প্রশ্ন, যে পর্যায় থেকে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, সেখান থেকে দুর্বলতা বা অসহায়ত্ব প্রকাশ পেলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? বরং তিনি কঠোর অবস্থান প্রকাশ করলে সাধারণ মানুষের বাহবা পেতে পারেন।

প্রসঙ্গত, শিক্ষা খাতের ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে টিআইবি এখন পর্যন্ত চারটি গবেষণা করেছে। ওইসব গবেষণা প্রতিবেদনে পদে পদে অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, সংঘবদ্ধ চক্রের দখলদারিত্বের চিত্র ফুটে উঠেছে। এর মধ্যে একটি প্রতিবেদন ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর টিআইবি রীতিমতো তোপের মুখে পড়েছিল। সর্বশেষ গত ১৩ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শিক্ষা খাতের দুর্নীতি রোধে ৩৯ দফা সুপারিশ করেছে। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত ওইসব সুপারিশ বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, কোচিংবাজ শিক্ষক সংক্রান্ত দুদকের সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা নেবে মাউশি। এ ব্যাপারে আমরা তাদের নির্দেশনা পাঠিয়েছি। দুদকের বাকি সুপারিশগুলো নিয়েও কাজ করা হবে।
তবে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, কোচিংবাজ হিসেবে চিহ্নিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের কোনো চিঠি আমরা এখনও পাইনি। হয়তো চিঠি অন দ্য ওয়েতে আছে। চিঠি পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুদকের চিঠির সুপারিশের আলোকে অনেক ব্যবস্থাই নেয়া যাবে। কিন্তু আমরা শিক্ষা আইনের অপেক্ষা করছি। আইনের অভাবে অনেক পদক্ষেপই দুর্বল হয়ে থাকে।

এদিকে ঘুষ-দুর্নীতির পক্ষে বক্তব্য দেয়ায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। শিক্ষক কর্মচারী সংগ্রাম কমিটির সমন্বয়কারী ও কলেজশিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হক বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী সহনীয় মাত্রায় যারা ঘুষ নেবে, তারা তো শিক্ষক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই নেবে। আমরা এ ধরনের বক্তব্য ও অবস্থান সমর্থন করি না। আমরা ঘুষ দেব না। দুর্নীতি প্রশ্রয় দিতে পারি না। বরং যে কোনো মূল্যে এটা প্রতিরোধ করব। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী এমন কথা বলতে পারেন। তার কাজই হল, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করা। তিনি কাজটি করবেন, নইলে পদ ছেড়ে চলে যাবেন। এমন বক্তব্য দেয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের চেয়ারম্যান জিয়াউল কবীর দুলু বলেন, তার (শিক্ষামন্ত্রী) এই বক্তব্য নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত। শিক্ষার সর্বোচ্চ পদে থেকে এ বক্তব্য দিলে আমরা সাধারণ মানুষ কার কাছে যাব? তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বক্তব্য দিলেন যে তিনি চোর। স্বঘোষিত চোরের এ পদে থাকা উচিত নয়। তিনি শিক্ষামন্ত্রীর পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।

 

https://www.jugantor.com/first-page/2017/12/27/182583